পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-দ্বিতীয় খণ্ড 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৬৪ সিঙ্গিছড়া নামক একটি ক্ষীণকায় পাৰ্ব্বত্য স্রোতস্বতীর গতিপথ পরিবত্তন করিয়া দিয়া তিনি সাধারণের চাষী ভূমির উন্নতি বিধান করেন। শঙ্কররাম ধৰ্ম্মপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন। যখন কানুরাম, ঠাকুর শান্তরাম নামক বৈষ্ণবের ভক্তি ও ধৰ্ম্মনুরাগে মোহিত হইয়া তাহাকে গৃহে লইয়া আসেন, যখন শান্তরাম তথায় মধুর হরি সংকীৰ্ত্তন আরম্ভ করেন, ইনিই তখন আকৃষ্ট হইয়া তাহার কাছে সৰ্ব্বপ্রথমে বৈষ্ণব মন্ত্রে দীক্ষিত হইয়াছিলেন। এবং তাহার পরেই স্বগৃহে বিশ্বম্ভর চন্দ্র স্থাপন করেন। বিস্বম্ভরই এ বংশের কুলদেবতা। মায়ারামের পুত্র কৃষ্ণপ্রসাদ ও বিষ্ণুপ্রসাদ। চৌধুরী বংশে ইহারা অতি বিখ্যাত ও ক্ষমতাবান ছিলেন। কৃষ্ণপ্রসাদ কালেক্টরীর মহাফেজ ছিলেন। শহরে থাকার উপলক্ষে তিনি ঐ পদ গ্রহণ করেন। তিনি নানাগুণে এরূপ প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন যে, উক্ত পদটি তাহার দ্বারা অলংকৃত ও গৌরবান্বিত হইয়াছিল। তাহার দান-শৌণ্ডতা, ধৰ্ম্মনিষ্ঠা ও বিনয়াদি গুণ-মুগ্ধ দুই একজন শহরবাসী প্রাচীনের মুখে বাল্যকালে আমরা তাহার কীৰ্ত্তিকথা গল্পের ন্যায় শুনিয়া মুগ্ধ হইয়াছি। একদা তিনি গঙঘধামে গমন করিয়াছিলেন, তথায় বিহারাধিপতির সহিত র্তাহার মিত্রতা স্থাপিত হয়। তিনি বিহারাধিপতিকে শ্রীহট্টের নিৰ্ম্মিত সুবর্ণ পুষ্প খচিত হস্তিদন্তের একটি বহুমূল্য পাটি উপহার প্রদান করেন। মহারাজও তাহাকে স্বর্ণনিৰ্ম্মিত একটি কর্কট ও একটি পদ্মমুকুল এবং ঝালরযুক্ত এক বৃহৎ ছত্র’ উপহার স্বরূপ পাঠাইয়াছিলেন। গয়াতে তিনি একটা হস্তীদান করিয়াছিলেন, গয়ার পুরোহিতেরা অদ্যাপি একথা স্মরণ রাখিয়াছেন। ঢাকাদক্ষিণের ঠাকুরবাড়ীতে এবং মিশ্রবংশীয় কোন কোন ব্যক্তিকে নিয়মিতরূপে তিনি অর্থ দান করিতেন। এক ব্রাহ্মণ তনয় তাহার ব্যয়ে ন্যায় অধ্যয়ন পূৰ্ব্বক “ন্যায়ভূষণ’ উপাধি প্রাপ্ত হন। যখন এ অঞ্চলে বিদ্যাশিক্ষার চর্চা কিছুমাত্র ছিল না, তখন তিনি নিজ গৃহে এক উচ্চ শ্রেণীর বঙ্গ বিদ্যালয় স্থাপন করেন। বৈষ্ণব লেখক “পদ্যপ্রসূণ” প্রণেতা স্বগীয় রাজীবলোচন দাস এবং “বিজয় মাধব নাটক" প্রণেতা, গীতচিন্তা মণির ব্যাখ্যাতা, করিমগঞ্জের ভূতপূৰ্ব্ব স্বপ্রতিষ্ঠ মোক্তার শ্রীল কৃষ্ণচরণ দাস (কৃষ্ণপদ দাস) প্রভৃতি এই বিদ্যালয়ের ছাত্র। বিদ্যালয়টি সুদীর্ঘকাল স্থায়ী হইয়াছিল, আমরাও শিশুকালে খেলা ছলে বিদ্যালয়ে গিয়া বসিতাম মনে আছে। কৃষ্ণপ্রসাদ চৌধুরী অপরিমিত ব্যয়ী ব্যক্তি ছিলেন, তাহাতে র্তাহার মৃত্যুর পর সম্পত্তির তদীয় অংশ নষ্ট হইয়া যায়। গবর্ণমেন্ট স্বত্বত্যাগে রসদ ববা.দর বৃদ্ধি পূৰ্ব্বে রসদ ববানের উল্লেখ করা গিয়াছে, রসদ ববান গবর্ণমেন্টেরই সংসৃষ্ট ভূমি। কৃষ্ণপ্রসাদ চৌধুরীর ভ্রাতার অভিপ্রায় ও র্তাহার উদ্যোগে প্রতাপগড়ের ববান তালুকে তাহদের যে অংশ ছিল, তাহা গবর্ণমেন্টকে প্রদত্ত হয়, ইহাতে প্রতাপগড়ে পূৰ্ব্বোক্ত রসদ ববানের প্রসার বৃদ্ধি পায় ও ইহা সাধারণের একটা আলোচ্য বিষয় হইয়া উঠে। ১৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পুৰ্ব্বাংশে ২য ভাগ ২য খণ্ড ১১শ অধ্যায়ে এই বিষয় বলা হইয়াছে। ১৯. কৃষ্ণপ্রসাদের ভ্রাতুষ্পপুত্র স্বগীয় ব্রজকিশোর চৌধুরী তাহাল মৃত্যুর পব এই ছত্রসহ ৮০ টাকা মুলোর একটা আতরদান জলড়বের ব্রাহ্মণ জমিদার তদীয়বন্ধু স্বগীয় চন্দ্রনাথ ঠাকুরকে প্রদান কবিয়াছিলেন।