পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-দ্বিতীয় খণ্ড 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৬৮ খানার “সরকার” বা প্রধান লেখক নিযুক্ত করিলেন। কাছাড়ের মন্ত্রীপুত্রকে আশ্রয় দান নবাব রাধারামের গূঢ় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক ছিল সন্দেহ নাই। কুশলরাম এই স্থানেই বিবাহ করিয়া বাস করিতে লাগিলেন। কুশলরামের জননী পুত্রের বিরহে অতি কাতর হইয়া নানাস্থানে সন্ধান করিতে জানিলেন যে, সে প্রতাপগড়ের “নবাবের” আশ্রয়ে আছে তখন স্নেহ-কাতরা জননী পুত্রের কাছে আগমন করেন। সত্যরামও একমাত্র পুত্রের উপর চিরদিন ক্রোধ রক্ষা করিতে পারেন নাই, বৃদ্ধ বয়সে তাহার ক্রোধের উপশম হইয়াছিল। কুশলরামের সাহেবরাম ও হরেকৃষ্ণ নামে দুই পুত্র হয়, তন্মধ্যে সাহেবরাম পিতৃপদ প্রাপ্ত হন, দশসনা বন্দোবস্তের সময়ে ইহার নামে প্রতাপগড়ের একটি তালুকের নামকরণ হয়। হরেকৃষ্ণ জ্যোতিষ শাস্ত্রালোচনায় যশস্বী হন। ইহাদের উভয়েরই বংশধরবর্গ বৰ্ত্তমান আছেন। সাহেবরামের পুত্র কৃষ্ণচরণ, তৎপুত্র শ্রীযুক্ত মহেন্দ্রচরণ জীবিত আছেন। দুইটি বংশ কথা এরূপ দৃষ্টান্তের অভাব নাই যে, কোন কোন পরিবারে বলশালী লোকের সংখ্যা অধিক, কোন কোন পরিবার বা দীর্ঘজীবী পুরুষ-বহুল। এস্থলে যে দুটি বংশ কথা লিখিত হইতেছে, প্রায় একই সময়ে একই স্থানে সে বংশদ্বয়ের প্রতিষ্ঠা হইলেও একটি বংশের পুরুষানুক্রমে প্রায় সকলেই অমিত বলশালী ছিল,আদ্যাপি তাহাদের বলের কথা গল্পের ন্যায় শ্রত হওয়া যায়। উভয় বংশেরই মূল দুইজন বিদেশগত বিপদাপন্ন ব্রাহ্মণ ছিলেন, পরে গ্রহবৈগুণে র্তাহারা জাতিচু্যত হইয়া পড়েন। উভয় ংশেই বৰ্ত্তমান ৭/৮ পুরুষ চলিতেছে। এই দুই বংশের একটির আদিপুরুষের নাম রঘুনাথ, ইনি অতিশয় বলবান ও উদ্ধত ব্যক্তি ছিলেন এবং হাঙ্গামার অপরাধে কারারুদ্ধ হন। অসহ্য কারা-যন্ত্রণায অধৈৰ্য্য হইয়া, শৃঙ্খলাবদ্ধাবস্থাতেই কারাগারের বেড়া ভগ্ন করতঃ পলায়ন করেন। সারারাত্রি হাটিয়া প্রভাতে এক নদী-তীরে তিনি উপনীত হন; তিনি তখনও শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিলেন বলিয়া সন্তরণে নদী উত্তরণের উপায় ছিল না। সে জঙ্গলময় স্থানে নৌকাদিও ছিল না, তাই তিনি চিন্তাকুলিত চিত্তে কিছুকাল অবস্থিতি করেন; এমন সময় পরপারে লোকের কথাবাৰ্ত্ত শুনিতে পাইয়া তাহদের সাহায্য প্রার্থী হন। পরপারস্থিত যোগী” জাতীয় সেই ব্যক্তিবর্গ বনান্তরাল হইতে উত্তর করিল যে তাহারা শিবাচ্চনায় আসিয়াছে, তথায় নৌকাদি নাই যে র্তাহাকে পার করিয়া লইবে । রঘুনাথ ঠাকুরের জঠরানলও তখন ধকধক জুলিতেছিল, শিবপূজার কথা শুনিয়া, ক্ষুধায় উন্মত্ত প্রায় রঘুনাথ, প্রসাদ প্রাপ্তির লিঙ্গায় “জয় শিব শস্তু’ বলিয়া জলে ঝাপ দিলেন। তিনি জলে পতিত হইবা মাত্র কি জানি কি রকমে লৌহশৃঙ্খল ছিন্ন হইয়া গেল, তিনি তখন সহজেই সত্তরণ সহকারে পরপারে উত্তীর্ণ হইলেন। শিবের অনুকম্পাতেই শৃঙ্খল ছিন্ন হইয়াছে বলিয়া তাহার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মিল, তিনি পূজাস্থলে উপনীত হইয়া ভক্তিভরে প্রণত হইলেন ও পূজান্তে প্রসাদ পাইতে অভিপ্রায় করিলেন। ৩১ আগম সংহিতাদি আলোচনা কবিলে এই জাতিল যোগী নামোৎপত্তিব প্রকৃত তথ্য অবগত হওয়া যায়। অতএব “যুগী” এই প্রচলিত শব্দেশ পরিবৰ্ত্তে “যোগী” শব্দ ব্যবহৃত হইবে।