পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬৯ চতুর্থ অধ্যায় : বড়লিখার পুরকায়স্থ কথা এবং প্রতাপগড়ের বিবরণ 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত যাহারা পূজা দিতে আসিয়াছিল, তাহারা নিজেদের জাতির কথা জানাইয়া ব্রাহ্মণকে স্বপৃষ্টে প্রসাদ দিতে চাহিল না। একে প্রাণান্তকর জঠরানল, তাহাতে শৃঙ্খল মুক্তি হেতু প্রবল বিশ্বাস বল, রঘুনাথ কোন আপত্তিই শুনিলেন না, প্রসাদ ভক্ষণ করিলেন। জঠরানল কিয়ৎ পরিমাণে নিবৃত্ত হইলে তাহার মনে বৈরাগ্যোদয় হইল, এবং তিনি কিছু দিনান্তে নিজগৃহে গোপনে গিয়া একদা আপন স্ত্রীকে লইয়া অপরিচিত ভাবে রাউৎভাগ নামক স্থানে আগমন পূৰ্ব্বক যোগী জাতি পরিচয়ে বাস করিতে লাগিলেন। কিন্তু আচার ব্যবহাবে অচিরেই প্রকৃত পরিচয় অনেকটা বিদিত হইয়া পড়িয়াছিল। যাহা হউক, কালে র্তাহার মনের বৈরাগ্য বিদূরীত হইল এবং তথায় তাহার একটি পুত্র জন্মিল, আত্মগোপনের প্রকৃষ্ট উপায় স্বরূপ তিনি এই নবজাত পুত্রের নাম কাজলনাথ রাখিলেন। র্তাহার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইয়াছিল, রাজপুরুষগণ জেল পলাতক রঘুনাথ শৰ্ম্মার কোন অনুসন্ধানই প্রাপ্ত হইতে পারেন নাই। কাজলনাথের পুত্র প্রাণনাথ, তৎপুত্র পদ্মনাথ, ইহার খরাই, হরাই, গোরাই ও উত্তম নামে চারি পুত্র হয়। কাজলনাথ, তাহার পুত্র পৌত্র এবং প্রপৌত্রগণ সকলেই বিশাল দেবী, বলশালী ও সংযমী পুরুষ বলিয়া সকলের ভয়-ভক্তির পাত্র হইয়াছিল। বৃদ্ধকালে পদ্মনাথ স্বীয় অধিকৃত ভূমির রাজস্ব আদায় কবিতে অশক্ত হইযা বিপন্ন ও পীড়িতাবস্থায় মৃত্যুকালে পুত্রগণকে সে স্থান পরিত্যাগ করিতে বলিলে এবং ভবিষ্যতে কখনও ভূমির বন্দোবস্ত গ্রহণ করিতে নিষেধ করিলে, তাহারা রাউৎভাগ ত্যাগ করিযা, নরসিংহপুরের জঙ্গল আবাদ ক্রমে সে স্থানবাসী হয়। 動 ইহাদের সময়ে দশসনা বন্দোবস্ত হয়। ইহাদিগকে আবাদীয় ভূমি, পিতৃবাক্য পালনার্থ নিজ নিজ নামে বন্দোবস্ত না করিয়া প্রতিবেশী মোসলমানদের দ্বারা বন্দোবস্ত লইতে হইয়াছিল। কিন্তু বিশ্বাসঘাতক সেই বন্দোবস্তকারিগণ কিছুদিন মধ্যে প্রতিশ্রুতি বিস্মৃত হইয়া খাজানা প্রার্থী হয। মোসলমানদের এই অন্যায়াচরণ অমিত বলশালী খরাইব অসহ্য হইয়া উঠিল, খরাই বিশ্বাসঘাতকদিগকে আক্রমণ করিতে উদ্যত হইলে, তাহারা ভয়ে কোন উচ্চ বাক্য না করিযা নিরস্ত রহিল; ফলে খাজানা দেওযা হইল না। ভ্রাতৃবর্গও বিরক্ত হইয়া ইহদের সংস্রব ত্যাগে ভরণ ও কুশিয়ারকুল পরগণা সংক্রান্ত কতক ভূমি ক্রয় কবিয়া লইলে, তাহাই তাহাদের অধিকৃত হয়। পূৰ্ব্বকার লোকের শক্তির পরিমাণ এক্ষণে ধারণাতীত হইয়া পড়িয়াছে তন্মধ্যে যাহারা বিশেষ বলশালী ছিল, তাহদের তো কথাই নাই। খবাইর বিশাল দেহ ও আহারের কথা গল্পবৎ বোধ হয়। একদা শ্রীহট্টের পথে খরাই সশস্ত্র দসু্যদল কত্ত্বক বেষ্টিত হইলে, সঙ্গের একশত টাকা গিলিয়া ফেলিয়া, দসু্যদিগকে বলপবীক্ষায় আহান কবিলে, তাহার কার্য ও আকৃতি দর্শনে ভীত হইয়া তাহারা পলায়ন করিয়াছিল। তদ্ব্যতীত লাঠি খেলায় তাহার দক্ষতা ও পটুতা দেশে তাহাকে প্রসদ্ধি করিয়া তুলিয়াছিল। একদা একটা বটগাছের সমীপস্থ একখণ্ড ভূমি লইয়া মাহিডিহির মোসলমান চৌধুরীদের সহ বিবাদ উপস্থিত হইলে সভ্রাতৃক উত্তম লাঠিখেলার কৌশলে চৌধুরীদের পাঁচশত লাঠিয়ালকে পরাস্ত করায় উক্ত ভূমি তাহাদের দখলে আসিয়াছিল। এক ব্যক্তির শিক্ষা কৌশলে পাঁচশত ব্যক্তির সম্মিলিত শক্তি ব্যাহত হওয়া বিশ্বাসযোগ্য হইবে না, কিন্তু ইহার বহু সাক্ষ্যই পাওয়া যায়। তখনকার লোকের শক্তি ঈদশই ছিল। ইহার পুত্রের নাম মহেশ, তৎপুত্র সিদ্ধির পরপোকারী ও