পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ দ্বিতীয় খণ্ড 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৭০ পরম ধৰ্ম্মপরায়ণ ব্যক্তি বলিযা খ্যাতি ছিল, তৎপুত্র শ্রীযুক্ত লক্ষ্মীচরণ মোক্তার মহাশয় বৰ্ত্তমান। তিনিই এই বিবরণ প্রদাতা। বলবান ভরত পূৰ্ব্বোক্ত খরাইনাথের অনুজ ভ্রাতা হরাই বা হরিনাথের জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম ভরত। ইহর কথা বর্ণনাযোগ্য। ইহার ন্যায় প্রকাণ্ডকার ও অসীম বলশালী ব্যক্তির কথা বড় শুনা যায় না। গায়ে জোর থাকিলে কিছুই গ্রাহ্য করা যায় না, প্রায় ৪০ বৎসর বয়ঃক্রম পর্যন্ত কোন বিষয়েই ভরতনাথকে অপ্রস্তুত হইতে হয় নাই; প্রতি কাৰ্য্যেই সফলতা যেন তাহার করধত ছিল। একবার দুই শত লোক তাহাকে আক্রমণ কবিযাছিল, সেই দুইশত ব্যক্তিকে ভরতের বাহুবলে পরাভূত হইয়া পলায়ন করিতে হয়। একটা বৃহৎ বৃক্ষ প্রায় পচিশ জন লোকে টানিয়া নিতে অসমর্থ হইয়া, ইহাকে সহায়তা করিতে বলে, ভরত সেই সকল ব্যক্তিকে সরাইয়া দিয়া এক স্বচ্ছন্দে সেই গাছটি যথাস্থানে স্থাপন করিলে, তাহারা সকলেই বিস্মিত হয়। ভরতের বলের কথা লোকমুখে শুনিতে পাইয়া কয়েকজন ভদ্রলোক তাহার বলের পরিচায়ক কোন ঘটনা প্রত্যক্ষ করিতে কহিলে, প্রায় ৮০% মণ ওজনের দ্রব্য বহন করিতে পারে, সন্নিকটবৰ্ত্তী তাদৃশ একখানা নৌকা টানিয়া অক্লেশে নদীতে ফেলিয়া দিলে, সেই ভদ্রলোকগণ ভরতের বলের পরিচয় পাইয়া চমৎকৃত হইলেন। শেষ বয়সে ভবতনাথ একজন সাধকরূপে গণ্য হইয়াছিলেন ও উপবিষ্ট অবস্থায় ভগবানের নাম গ্রহণ করিতে মৃত্যুমুখে পতিত হন। পুরুষানুক্রমে সকলেই বলশালী হয়, এইরূপ বংশ অতি অল্পই পরিলক্ষিত হয়। ভবতনাথের বংশধববগও বৰ্ত্তমান। দ্বিতীয় বংশ বটবশী বাসী বৎসেন্দুনাথ বংশীয বর্গ চৌধুৰী খ্যাতি বিশিষ্ট। এই বংশের পূৰ্ব্বপুরুষ বৎসেন্দু ব্রাহ্মণ জাতীয় ছিলেন। ঘটনা বৈচিত্রে গ্রহবৈগুণ্যে তিনি জাতিচু্যত হন। কিন্তু তাহা, হইলেও দেশে তাহার প্রতিপত্তির হ্রাস হয় নাই। দিন দোষে তাহার পদজ্বলন হইলেও বুদ্ধির গুণে তিনি স্বীয় সম্মান রক্ষা করিয়া চলিয়া যাইতে সমর্থ হন। র্তাহার পুত্রের নাম পুষ্পকেতু, তৎপুত্র দয়ানন্দ, ইহার আনন্দমোহন ও রামমোহন নামে দুই পুত্র হয়। আনন্দমোহন বিদ্যানুরাগী, ধাৰ্ম্মিক ও কৰ্ম্মদক্ষ ব্যক্তি ছিলেন। ব্যবসায় বাণিজ্যে তাহার বিশেষ অনুরাগ ছিল, সুনামগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও করিমগঞ্জ এই তিন স্থানে ইহার বৃহৎ কারবার ছিল। “বাণিজ্যে লক্ষ্মীর বাস”—আনন্দমোহনের আর্থিক অবস্থা উজ্জ্বল ছিল, তদ্‌ষ্টে তদীয় জনৈক কপটমিত্রের ঈর্ষা উদ্দীপ্ত হয় এবং সে একদল দসু সহায়ে তাহার প্রায় দুইলক্ষ টাকার সম্পত্তি অপহরণ করিতে সমর্থ হয়। আনন্দমোহন সুকৌশলে সেই দস্যদলকে ধরাইয়া দিতে পারিলেও, কপটাচারী উক্ত বস্তুর নামোল্লেখ করেন নাই। “করুণ তিনি মন্দ কিন্তু আমি তা তাহাকে মিত্র বলিয়া ডাকি, ‘মিতা’ ডাকের অগৌরব করিব না” তাহার এতদুত্তরে যাহারা সেই কপটচারীকে ধরাইতে প্রয়াসী ছিল, তাহারা নিরস্ত হয়। এই দস্যতার পরে তাহার মনে হয় যে দেবার্থে ব্যয় না করিলে ধনের সার্থকতা নাই; তখন পরিতৃপ্ত করেন। আনন্দমোহনের ভ্রাতা বামমোহন স্বীয় সমাজের উন্নতি বিধানে বিশেষ যত্ন করেন;