পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হইতে মুছে নাই, বাটীর সম্মুখে অনোব কোলে থাকিযা ফুল্ল কুসুমের ন্যায় সে আমার পানে চাহিয়া রহিল। তখন অল্পদিন সে “বাবা” বলিতে শিখিয়াছে। কিছুদূরে গেলে শুনিতে পাইলাম যে সে ডাকিতেছে—তাহার অমৃত-মধুর আধ স্বরে বলিতেছে—“বাবা আইও। সাতদিন যাইতে না যাইতে তাহার জুর হইল, আর সেই ডাক-—শুনিয়াছি সেই ডাক-— “বাবা আইও” (এস) থামিল না; কেহই থামাইতে পারিল না। সে বুঝি মনে করিত যে তাহার সুধা-স্রাবি মধুর আহ্বান তদীয় পিতাকে আকর্ষণ করিয়া আনিবে। যাহা হউক কিছুদিন পরেই ছেলের অসুখ হইয়াছে বলিয়া চিঠি পাইলাম। বিচলিত হইলাম কিন্তু কঠোর কৰ্ত্তব্যের সম্মুখে তখনও স্নেহ দাড়াইতে সাহসী হইল না। কি করিব—কালীঘাটে গিয়া জগন্মতার শ্রীচরণে মাতৃহীন রোগক্লিষ্ট শিশুকে সমর্পণ করিয়া তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করিতে লাগিলাম, কাজ একরূপ শেষ করিয়া বাড়ী আসিলাম, কিন্তু তখন তাহার পীড়া কঠিন হইয়া পড়িয়াছে। ইতিবৃত্ত (পূৰ্ব্বাংশ) রূপ মানস-পুত্র পাইলাম, কিন্তু আমাব সোনাব কুসুমঙ্গকে চিবতরে হারাইলাম। আর এই উত্তরাংশের সহিত হারাইয়াছি—আমার হৃদয়পটের নিৰ্ম্মল আলেখ্য নীলিমাকে । ভ্রান্ত মানব আমরা তাই জগৎপিতার অজস্র স্নেহ তৈল ধাবার ন্যায সৰ্ব্বত্রই যে বহিতেছে, অনেক সময় তাহা অনুভব করিতে অক্ষম হই; বুঝিতে পাবি না—বিয়োগেব প্রতপ্ত শ্বাসে অসময়ে সুখেব উৎস শুখাইযা যায় কেন? সুখে শোক-স্মৃতি মিশ্রিত হয় কেন? ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ প্রকাশের পূৰ্ব্বে পুত্রকে হারায়াছি, আর উত্তবংশ প্রচারেব প্রাক্কালে প্রাণের দুহিতাকে খোযাইয়াছি, কন্যার বিযোগ পুত্রের শোক নতুন করিযা তুলিয়াছে! নিয়তি এড়াইবে সাধ্য কার ; কিন্তু কাৰ্য্য কারণ বিচারেই আমরা সাংসাবিক লাভালাভ ও সুখ দুঃখ সংঘটনের সূত্রানুসন্ধান করিয়া থাকি, এবং সে জন্যই আজি এ আনন্দ সম্যক সম্ভোগ করিতে পারিতেছি না। হাৰ্য মাযা মোহ । জীবন জলবিম্বেব প্রায়, অথচ কাজ সুদীর্ঘ ও বৃহৎ এজন্য মনে হইত যে অন্ততঃ যদি ইতিবৃত্তের সম্পূর্ণ কপিটা লিখিযা যাইতে পারি, তবুও ধন্য হইল। ভগবদিচ্ছায় তাহা সফল হইয়াছে—সম্পূর্ণ গ্রন্থ প্রকাশিত হইয়াছে, তজ্জন্য তাহার শ্রীচরণে সভক্তি প্রণত হইতেছি। ইতি— ‘মৈনা” শ্ৰীঅচ্যুতচরণ চৌধুরী ৩০শে চৈত্র ১৩২৩ বাংলা ।