পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৯৯ তৃতীয় অধ্যায় : ইটার কাত্যায়ন, পরাশর ও ভরদ্বাজ কাশ্যপ গোত্রীয় 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত তাহাকে অপমানিত করিতে ইটার অন্যান্য পণ্ডিতগণ সমবেত হন। একথা রাষ্ট্র হইলে ব্যবস্থা দাতা ইহার শরণাপন্ন হন; কালীচরণ তাহাকে আশ্বাস প্রদান পূৰ্ব্বক অল্পকাল মধ্যে প্রায় শতাধিক পত্র সমন্বিত “ধ্বজারোপণ বিবেক” নামক এক পুস্তক প্রণয়ন করেন। এই পুস্তক সাহায্যে তিনি পূৰ্ব্বব্যবস্থা প্রবল রাখিয়া স্ববংশের গৌরব রক্ষা করিয়াছিলেন। “বিবেক” অস্ত্র সহায়ে আশু সমরে বিজয়-গৌরব অৰ্জ্জন করিলেও ইহা তাহার মনঃপূত ছিল না, পাছে এই গ্রন্থের ব্যবস্থা প্রচলিত হয়, এই ভয়ে মরণের পূৰ্ব্বে তিনি উহা অগ্নিসাৎ করেন। গ্রন্থকার জয়কৃষ্ণ রঘুপতির দ্বিতীয় পুত্র রুদ্রপতিব অন্যতম পৌত্রের নাম জয়কৃষ্ণ তর্কবাগীশ। ইনি জ্যেষ্ঠতাত রঘুদেবের ন্যায় গঙ্গাতীরে গিয়া অষ্টোত্তর শত সংখ্যক পুরশ্চরণ করিয়া সিদ্ধিলাভ করেন। অনেক লক্ষণার “টীকা” ও “কাত্যায়ন কুলদীপিকা’ গ্রন্থ রচনা করিয়া যশস্বী হইয়া গিয়াছেন। গ্রন্থকার হরিকান্ত ইহার অন্যতম পৌত্রের নাম হরিকান্ত ন্যায়বাগীশ । ইনিও একজন বিখ্যাত পণ্ডিত ও গ্রন্থকার ছিলেন; তিনি ন্যায় শাস্ত্রীয় “হেত্বাভাসের টীকা” “দুর্গোৎসব পদ্ধতি”, ও (সেৰ্ব্বদেবদেবী সমন্বিত স্বগীয় বিষহরী দেবীব) “নৌকাপূজা পদ্ধতি” প্রণয়ন করেন। এ সকল গ্রন্থ মুদ্রিত হয় নাই এবং তদীয় পৌত্রেব নিকট এখনও আছে। হরিকান্ত হেড়ম্বাধিপতি ও তৎপরে বেহারাধিপতির সভাপণ্ডিত পদে নিযুক্ত হইয়াছিলেন। যোগী ভ্রাতৃযুগল ইহাদের সহোদর ভ্রাতা রতিকান্ত যোগী পুরুষ ছিলেন। শেষ জীবন তিনি বারাণসী ধামে অতিবাহিত করেন। রাজঘাটের পূৰ্ব্বদিকে তাহার ইষ্টকময় সাধনাশ্রমটি পুঠিয়ার জনৈক বাণী প্রস্তুত করিযা দিয়াছিলেন। ইহার কনিষ্ঠ সহোদর উমাকান্ত অতিশয় বলশালী ও অসীম সাহসী পুরুষ ছিলেন, তিনি একদা একটি বন্য মহিষ ধৃত করিয়া আনিয়া একহস্তে শৃঙ্গধারণ পূৰ্ব্বক কালীর পদে বলি দিয়াছিলেন। সতী ভবানী উমাকান্তের স্ত্রীর নাম ভবানী দেবী। ভবানী পতি-ব্রতা-রতা তপস্বিনী ছিলেন। তাহার করতলে কয়েকটি সুলক্ষণ যুক্ত চিহ্ন ছিল। তিনি গৃহকৰ্ম্মে দক্ষ ও “বার-ব্ৰত” পালনে অনুরক্ত ছিলেন। তাহার স্বামী যখন মৃত্যুশয্যায শায়িত, তিনি মনে মনে স্বামীর রোগের পরিণাম বুঝিতে পারিয়া নিরুদ্বেগে পূৰ্ব্ব হইতেই প্রস্তুত হইতে ছিলেন। উমাকান্ত একজন গুপ্ত সাধক ছিলেন। এক একাদশী তিথি উদযাপনের পর তিনি ব্রতাঙ্গ ব্রাহ্মণ ভোজন ও কুটুম্ব ভোজনাদি করাইয়া চির বিদায় জন্য প্রস্তুত হইলেন। “গঙ্গা-গীতা-গায়ত্ৰী” বলিতে বলিতে র্তাহার বাকশক্তি রোধ হইয়া আসিল। পত্নী পদ-প্রান্তে উপবিষ্ট, একবার তৎপ্রতি দৃষ্টি প্রক্ষেপ পূৰ্ব্বক যেন কি উপদেশ দিলেন, সতীর চক্ষে অশ্রুবার ঝরিতে লাগিল, আরও একবার যেমন "গুরুগঙ্গা-কাশী" বলিলেন, অমনি ব্রহ্মরন্ধ ভেদ করিয়া উমাকান্তের প্রাণবায়ু উৎক্রান্ত হইল।