পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২৩ ষষ্ঠ অধ্যায় : প্রাচীন দত্ত-বংশ বিবরণ 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত মহীপতি দত্তের দুইজন পৌত্র ছিলেন, একজন চেয়ালিশ পরগণায় গমন করেন, ইহার নাম জানা যায নাই। অপরের নাম কল্যাণ দত্ত, ইহার আঠারটি পুত্র সন্তান জাত হয়, তন্মধ্যে তের জনেরই বংশে বৰ্ত্তমানে কেহ নাই। কল্যাণ ও তৎপুত্রের কথা কল্যাণ দত্তের সময়ে ত্রিপুররাজ দক্ষিণশূর অধিকার করেন, তাহাতে গৌড়-গোবিন্দ প্রদত্ত অধিকার বিলুপ্ত হইয়া যায়, কল্যাণ দত্ত উপায়ান্তর বিহীন হইয়া ত্রিপুররাজের বশ্যতা স্বীকার পূৰ্ব্বক রাজস্ব প্রদানে প্রতিশ্রত হইয়া নিজ অধিকার পুনঃপ্রাপ্ত হন। কল্যাণ দত্তের জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম দিবাকর, তিনি একদা ত্রিপুরায় গমন করেন, তিনি চক্রপূজা উপলক্ষে মদ্যপান করিয়াছিলেন বলিয়া পিতাকত্ত্বক পিণ্ড দানাধিকারে বঞ্চিত হন। অন্য একদিন পক্ষিশিকার কালে দৈবাৎ খুল্লতাত পত্নীকে বাণাহত করায় পিতা কর্তৃক বজ্জিত হন। পিতৃ পরিবজ্জিত দিবাকর রোষ ও ক্ষোভে মোসলমান-ধৰ্ম্ম গ্রহণ করেন ও হাসান খাঁ নামে খ্যাত হন। তিনি পিতৃগৃহ ছাড়িয়া হুগলী নামক গ্রামে গিয়া বাস করেন। এই বংশে পরবর্তী কালে চান্দ খা প্রভৃতি বহু ভাগ্যবান ব্যক্তির জন্ম হয়। শ্ৰীবৎস দত্তের ব্যবহার কল্যাণ দত্তের পুত্ৰগণের মধ্যে অনেকেই খ্যাতনামা ছিলেন, অনেকেরই নামে দীর্ঘিকাদি এযাবৎ বৰ্ত্তমান আছে; ইহাদের মধ্যে অনেকেই খাঁ উপাধি ছিল। বংশ তালিকায় কল্যাণ দত্তের ২য় ও ৬ষ্ঠ । পুত্রের খাঁ উপাধি লিখিত হইয়াছে। কল্যাণ দত্তের তৃতীয় পুত্র বঙ্গদত্তের বংশ বহু বিস্তুত হইয়া পড়িয়াছিল, তাহার ৪র্থ পুত্রের নাম ভরত দত্ত; আমাদিগকে জনৈক বিবরণ প্রদাতা জানাইয়াছেন যে ইহার দত্ত খা উপাধি ছিল। কল্যাণ দত্তের পঞ্চম পুত্র শ্রীবৎস দত্ত, ইনি দত্তকুলের এক শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি এবং প্রধান বংশ-প্ৰবৰ্ত্তক। তাহার জীবদ্দশায় “গৌড়ের বাদশাহ” দক্ষিণশূর হইতে ত্রিপুরা আক্রমণ করেন। শ্ৰীবৎস তখন ত্রিপুরার করপ্রদ সামন্ত ছিলেন, কিন্তু তিনি ভবিষ্যৎ ভাবিয়া এই ৪ লাখাহ দত্ত বংশীয়গণ ইহাবাই বংশসস্তুত বলিযাখ্যাত।র্তাহারা “বড়দত্ত খানের"সস্তান বলিয়া ভবানী দত্তেরলিপিতে লিখিত আছে। শ্রীযুক্ত প্রমোদচন্দ্র দত্ত মহাশয় হইতে আমরা যে বংশ তালিকা পাইয়াছি, এই প্রাচীন তালিকাতে কল্যাণ দত্তের ১৮ পুত্রের মধ্যে ১২জনের নাম লিখিত হইয়াছে বাহুল্য বজ্জনের জন্য ৬জনের নাম লিখিত হয় নাই, কিন্তু স্বীকৃত হইয়াছে। তন্মধ্যে দত্ত খাঁ কি বড়দও খাঁ বলিয়া কোন নাম পাওয়া যায় নাই গন্ধবর্ব খাও মহেন্দ্র বলিযা দুইটি নাম আছেমাত্র। জ্ঞাত হওয়া যায় যে উক্ত তালিকাতে লিখিত ভর দত্ত বা ভরত দত্তের উপাধি দত্ত খাঁ। দত্ত খাঁ অতি ক্ষমতাশালী পুরুষ ছিলেন। ইহাব কনিষ্ঠ শ্ৰীবৎস দত্তও অতিশয় ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ছিলেন। এবংর্তাহার উপাধিও দত্ত খাঁ ছিল বলিয়া জানা যায়। এই দুই দত্ত খাঁর মধ্যে জ্যেষ্ঠই বড়দত্ত খাঁ নামে খ্যাত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সাতগার বংশ তালিকাতে তাহার উল্লেখ নাই। তাহাতে উল্লেখ না থাকাতে কেহ কেহ অনুমান করেন যে লাখাই, আতুয়াজান প্রভৃতি স্থানের দত্ত বংশীয়গণ মুকুন্দের সস্তান এবং ইছামতী হইতে আগত। কিন্তু লাখাইর দত্তবংশীয়গণ কল্যাণ দত্তেরই সন্তান বলিয়া খ্যাত, তাহারা মুকুন্দের নহেন।লাখাইর দত্তবংশেব সংক্ষিপ্তকথা ৩য় ভাগ ৪র্থ খণ্ডে উক্ত হইবে।