পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৪০ তিনি চতুৰ্দ্দিকেই শাক্ত মতের বিজয়-পতাকা উড়িতে দেখিতেন, তদঞ্চলে তৎকালে বৈষ্ণব মতের কিছুই আদর ছিল না; শিশুদিগকে পৈতৃক গুরু শক্তি মন্ত্রে দীক্ষিত করিয়া যাইতেন। তদবস্থায় এই ভ্রাতৃদ্বয়ের মনে শিশুকালাবধি বিষ্ণু ভক্তির উদয় হওয়াই এক আশ্চৰ্য্য ব্যাপার। কৃষ্ণ ঘোষ কাহাকেও কোন কথা বলিতেন না, কিন্তু আপন মনে ভগবানের কাছে এই প্রার্থনা করিতেন যেন দেশে বৈষ্ণব ধৰ্ম্মের শাস্ত প্রবাহ বহিতে আরম্ভ হয়, মদ্য মাংসের প্রসার কমিয়া যায়, লোক যেন উগ্রতা ত্যাগে যথার্থ সাত্বিক ভাবাপন্ন হয়। মনু নদীর মাহায্যের কথা তিনি অবগত ছিলেন। সত্যযুগে এই মনু তীরেই ভগবান মনু শিবাচ্চনা করিয়াছিলেন বলিয়া কথিত হয়; এই মনু মাহাত্ম্যে মোহিত মহারাজ অমরমাণিক্য মনুতে তনুত্যাগ করেন। কৃষ্ণ ঘোষ এই মনুতীরে কখন কখন একাকী পরিভ্রমণ করিতেন, নানা ভাবে অভিভাবিত হইতেন। কৃষ্ণ ঘোষের জাগ্রত স্বপ্ন একদা এইরূপ পরিভ্রমণ করিতেছেন, সেদিন মধু কৃষ্ণা ত্রয়োদশী। মনু নদীর মাহাত্ম্য স্মরণে ইহাকে তিনি পূত সলিলা সুর তরঙ্গিনী বলিয়াই বোধ করিতেছেন; তাহার মনে তখন নদীয়ার সুরধনী তীরের কথা-গৌর অবতারের বিচিত্র পুণ্যগাথা জাগিয়া উঠিয়াছে, তিনি তন্ময় হইয়া-যেন বাহ্য জ্ঞান বিরহিত হইয়া বিচরণ করিতেছেন। একি ? হঠাৎ সম্মুখে শত শশধর উদিত হইল, সিদ্ধ জ্যোতি উদ্ভাসিত হইয়া তরঙ্গে তরঙ্গে লীলা লহরী বিস্তার করিল, কৃষ্ণ ঘোষ বিস্মিত-নেত্রে সুব তরঙ্গিনী-তীর-বিহারী নদীয়ার গৌরকান্তি নবীন নাগরকে দেখিতে পাইলেন। কৃষ্ণ ঘোষ সে অপরূপ রূপপ্রভা বিলোকনে বিহুল ও আত্মবিস্মৃত হইয়া গেলেন। একি জাগ্রত স্বপ্ন ? ঘোষ ঠাকুর দেখিলেন, যেন এ জগত গৌরকান্ত দয়ারামের প্রেমহিল্লোলে আপ্লাবিত রহিয়াছে। তিনি কে এবং কোথায়, এ জ্ঞান তাহার তিরোহিত হইল, তাহার স্বতন্ত্র সত্ত্বা যেন বিলোপ পাইল; তখন যেন শুনিতে পাইলেন,—যেন শত বাঁশরী বাজিয়া উঠিল, সেই গৌর—কান্ত পুরুষ করুণার স্বরে আশ্বাস দিয়া বলিলেন-“চিন্তা কি কৃষ্ণচন্দ্র ! তোমার গৃহে আমাব প্রিয় ভক্তের উদ্ভব হইবে, তোমার বাঞ্ছা পূর্ণ হইবে, তাহাকে পবিত্র ভাবে প্রতিপালন করিও।” আর কিছু নাই, নিমেষ মধ্যে সে রূপবাশি যেন বাতাসে মিশিয়া গেল; ঘোষ ঠাকুরের অপূৰ্ব্ব জাগ্রৎ স্বপ্ন ভাঙ্গিযা গেল। ইহার কিছুদিন পবেই কৃষ্ণ ঘোষের পত্নী রেবতী গর্ভধারণ করিলেন; এই গর্ভে মহাত্মা গঙ্গারামের উদ্ভব হয়। গঙ্গারামের জন্মেব কিছু পরে কৃষ্ণ ঘোষ কালগ্রাসে পতিত হন। রেবতীর মনে ধাপণা ছিল যে পুত্র এক অনন্যসাধারণ পুরুষ হইবে, পুত্রকে তিনি অতিযত্নে প্রতিপালন করেন; কিন্তু পুত্রের বাল্যচরিত্র বিপরীত দৃষ্ট হইতে লাগিল। লেখা পড়ায় মন নাই, কেবল চাঞ্চল্য; দুষ্ট বালক বর্গ সহ ঘনিষ্ঠতা। একদা মাতা তাহাকে তীব্র তিরস্কার কবেন, বালকের মনে ইহাতে বড়ই ধিক্কার জন্মে, এবং বালস্বভাববশতঃ সে সন্নিকটবৰ্ত্তী বনে গমন করে। কিন্তু সেই স্থানে গেলে হঠাৎ তাহার মনে এক ভাবোদয় হইল, তিনি আর গৃহে আসিলেন না; একাদশ বর্ষীয় বালক,সরস্বতী-পতির আরাধনায় বৃত হইল।