পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-চতুর্থ খণ্ড 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৮২ বিশারদের জ্যেষ্ঠপুত্র মথুরানাথ একজন সংসার-বিরাগী ব্যক্তি ছিলেন, পিতার মুখে তত্ত্বকথা শুনিয়া বাল্যাবধিই তাহার সংসারে বিতৃষ্ণা জন্মিয়াছিল, তিনি বাড়ীতে যোগচৰ্য্যাতেই বৃত থাকিতেন। র্তাহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা রামচন্দ্র জ্যেষ্ঠের সংসার-বৈরাগী দর্শনে সানন্দে স্বার্থ-সংসাধনে সচেষ্ট হইলেন। কিন্তু মথুরানাথের স্ত্রীর ইহা অসহ্য হইয়া উঠিল; তিনি তদীয় স্বার্থসাধনের অন্তরায় স্বরূপ হইলেন। ইহার কিঞ্চিৎ পূৰ্ব্বে লোহিতাক্ষের বংশ পরিচয়ে আরও কতক জন ব্রাহ্মণ আসিয়া বাণিয়াচঙ্গ বাসী হন ও কতক যজমান-শাসন পাইয়াই তৃপ্ত থাকেন। বিশারদ বৰ্ত্তমান থাকা কালে ইহাদিগকে বিদ্বিষ্ট ভাবাপন্ন দৃষ্ট হয় নাই; কিন্তু এক্ষণে অবসর পাইয়া তাহারা রামচন্দ্রকে লইয়া এক দলাবদ্ধ হইলেন। বিশারদ বংশের গৌরব এই দলাদলিতে অনেকটা নষ্ট হইবার উপক্রম হইয়া উঠিল। মথুরানাথের বুদ্ধিমতী পত্নী ইহা লক্ষ্য করিলেন; তিনি দেবরকে ডাকিয়া আনিয়া এসকল কথা কথন কখন বুঝাইতেন, কিন্তু রামচন্দ্র একদিনও তাহাতে কর্ণপাত করেন নাই। তখন বাধ্য হইয়া তিনি দেবর হইতে পৃথক থাকেন। বাদি বা বিপক্ষদের সহিত ঘনিষ্ঠতা বশতঃ রামচন্দ্র সাধারণের নিকট “বাদি’ অভিধা প্রাপ্ত হন।” আশুতোষের দর্শন দান যখন রামচন্দ্র এইরূপ স্বার্থ-সাধনে ব্যগ্র হইয়া পড়িয়াছিলেন, তৎকালে মথুরানাথের আহারাদির সহিত বড় একটা সম্বন্ধ ছিল না; তিনি বাড়ীতে বড় আসিতেন না। একদিন ঐ সময়ে তিনি যদৃচ্ছাক্রমে বাড়ীতে আসিলে, তাহার পত্নী গৃহত্যাগ করিয়া তদীয় অনুগামিনী হইতে ইচ্ছা করিলেন; পতি স্বীকৃত হইলেন না। পত্নী পতি-সদনে দেবরের অন্যায়াচার ও সংসারে নিজের অনাবস্থার কথা ব্যক্ত করিলেন। পতি বলিলেন—“তোমরা এ সংসার-বিরাগ, আসক্তিই রূপান্তর। ইহা বৈরক্তা নহে, ভোগ-স্পহা বাধা প্রাপ্ত হইলে ঈদৃশ ক্ষণিক বৈরাগ্যের উদয় ইহয়া থাকে যাহারা ইহাকে অনাসক্তিবোধে সংসার ত্যাগ করে, দুদিন পরেই দ্বিগুণ তেজে তাহদের আসক্তি উপস্থিত হয় এবং তাহারা ভণ্ড বলিয়া পরিগণিত হয়। তুমি এ পথ পরিত্যাগ কব, অন্তৰ্য্যামি আশুতোষের আরাধনা কর-ভাবানুরূপ লাভ হইবে।” সেদিন মথুরানাথ গৃহে রহিলেন। মথুরাথের স্ত্রী তখন প্রৌঢ়বয়স্কা। কিছুদিন পরে এই বয়সে তাহার গর্ভলক্ষণ প্রকাশ পাইল। আর একদিন মথুরানাথ গৃহে আসিলে তাহার পত্নী স্বামীকে একটি স্বপ্নের কথা বলিলেন; তিনি যেরূপে মহাদেবকে নিজ পুত্ররূপে দেখিতে পাইয়াছিলেন, তাহাকে কোলে করিতে গিয়াছিলেন ও তৎকালেই নিদ্রাভঙ্গ হইয়াছিল ইত্যাদি বলিলেন। পত্নীমুখে স্বপ্ন-কথা শ্রবণে মথুরানাথ অতি বিস্মিত হইলেন। বিস্ময়ের কারণ এই যে, ঠিক সেই রাত্রে ধ্যানে বসিয়া মানস নেত্রে তিনি সমুজ্জল সুশুভ্র স্নিগ্ধ-কিরণ খণ্ডের ন্যায় কে তেজঃপুঞ্জ কলেবর ধৃষ্ঠ-ত্রিশূল পুরুষকে, তুষার-ধবল বৃষভাঢ়রুপে স্বসদনে সমুপস্থিত দেখিতে পাইয়াছিলেন। পত্নী-মুখ-শ্রুত বৃত্তান্তে তাই তিনি বিস্মিত হইলেন। ৮ ইহার পবে এই বংশ যখন মধুবানাথের পুত্র মহাদেব পঞ্চনের নামে খ্যাত হয, তখন বামচন্দ্রের বংশ শাখাও “বাদিপঞ্চানন” নামে পবিচিত হয়।