পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৩১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯৯ তৃতীয় অধ্যায় ; বিবিধ বংশীয় ব্রাহ্মণ বিবরণ 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত সকলই সাধক মহাত্মা ছিলেন। একদা জয়গোবিন্দ স্বীয় বালকপুত্র দোলগোবিন্দকে স্নেহবশতঃ স্নানের পূৰ্ব্বে তৈল মাখাইতে মাখাইতে বলিয়াছিলেন—“বাপ, তোমার গৃহে আমি জন্মিব”। এতচ্ছুরণে বালক জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন—“বাবা, ইহা কি সত্য কথা? তবে তোমাকে কিরূপে বাবা বলিয়া চিনিব ?” হাসিয়া পিতা বলিলেন—“দক্ষিণ পায়ের তলাতে একটি লাল চিহ্ন থাকিবে, তাহা দেখিলেই বুঝিতে পরিবে যে আমি জন্মিয়াছি। এ কথা ভুলিয়া যাইও না।” পিতা পুত্রের এই কথা উপস্থিত সকলেই শুনিয়াছিল, ও তৈল মাখিতে অনিচ্ছুক বালককে ভুলাইয়া স্থির রাখিবার গল্প বলিয়াই মনে করিয়াছিল। দোলগোবিন্দ একদা শ্ৰীক্ষেত্র যাইতে ইচ্ছা করেন, কিন্তু তাহাকে তথায় যাইতে হয় নাই। ক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য যখন তিনি উদ্যোগ করিতেছিলেন, তখন একদা রাত্রে স্বপ্নাবস্থায় দেখিলেন যেন এক জগন্নাথ মূৰ্ত্তি জীবন্তভাবে তাহাকে বলিতেছেন, “তুমি শ্ৰীক্ষেত্রে যাইবে কেন ? তোমার অভিলাষ পূর্ণ করিতে আমিই তোমার কাছে যাইব । বালশিরাস্থ উত্তরশরের দত্তদের পুষ্করিণীতে আমি আছি উঠাইযা লইযা আসিবে।” এই স্বপ্নে যাথার্থ পরীক্ষার্থপরদিনই তিনি উত্তরশর গমন করেন, ও দামদলাবৃত শ্বেতপদ্মবনাচ্ছাদিত জলাশয়ে লোকদ্বাবা অনেক চেষ্টা করিয়াও মূৰ্ত্তি প্রাপ্ত হইলেন না, নিরাশ হইয়া ফিরিয়া আসিলেন। সেই রাত্রেও পুনঃ তিনি স্বপ্ন দেখিলেন, সেই জগন্নাথ মূৰ্ত্তিই যেন পুনঃ বলিলেন, “তুমিই স্বয়ং উঠাইবার কথা আমি বলিয়াছি, ভিন্ন লোকের দ্বারা আমি যাইতে চাহি না।” এইরূপ একই বিষয়ে ক্রমশঃ স্বপ্ন দেখিলে বিশ্বাস না হইবে কেন? দোল গোবিন্দ পুনশ্চ সেই পুষ্করিণী অভিমুখে চলিলেন এবং উপস্থিত হইয়া স্বয়ং জলে নামিয়া জগন্নাথ বিগ্রহ উত্তোলন করিলেন ও সেই বিগ্ৰহ লইয়া আসিলেন। ত্রিপুরাধিপতি মহারাজ গঙ্গাধর মাণিক্যের মহিষী দোলগোবিন্দের শিষ্যা ছিলেন। রাজমহিষী গুরুদেবের স্থাপিত জগন্নাথ বিগ্রহের সেবা পরিচালনের জন্য বার্ষিক ৩৬০ টাকা বৃত্তি প্রদান করিয়াছিলেন। ইহার পুত্রের নাম হরিগোবিন্দ। যাহারা আত্মিক তত্ত্বের আলোচনা করিয়া থাকেন, তাহারা বলেন যে আত্মিকগণ জীবিতাবস্থায় কোন প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ থাকিলে, তাহা পূর্ণ না করা পর্যন্ত তাহাদিগকে মানসিক অশান্তি ভোগ করিতে হয়; বিশেষতঃ পরলোকের প্রমাণ পক্ষে তাহারা কোন অঙ্গীকারে আবদ্ধ থাকিলে, তাহা পালন করিতে যত্নের ক্রটী করেন না; ইহার না কি বহু উদাহরণ আছে। দোলগোবিন্দের পিতা, পুত্রকে তৈল মাখাইতে মাখাইতে যাহা বলিয়াছিলেন, তাহা প্রতিপালনে তাহার সামর্থ্য ছিল না কি? স্বেচ্ছায় কোথাও জন্মগ্রহণ করাও কি মানুষের (হউন তিনি সিদ্ধ পুরুষ) সাধ্যাত্ত ? এ সকল প্রশ্নের মীমাংসার স্থল ইহা নহে। কিন্তু ইহাই আশ্চৰ্য্য যে তৎপুত্র হরগোবিন্দের পদতলে রক্তবর্ণ একটা চিহ্ন ছিল। আমরা যাহার নিকট হইতে এই বংশবিবরণ প্রাপ্ত হইয়াছি তিনিই (শ্রীযুক্ত গুরুগোবিন্দ গোস্বামী) হরিগোবিন্দের পুত্র। পিতৃপদতলে লাল রঙ্গের একটা পদ্ম তিনি বহুবার দর্শন করিয়াছেন বলিয়া লিখিয়াছেন। .حسمِ দোলগোবিন্দ পুত্রের পদতলে লালরঙ্গের চিহ্ন দর্শনে পিতৃবাক্য স্মরণে, “বাবা, বাবা” বলিয়া