পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩০৫ চতুর্থ অধ্যায় ; তরফের মজুমদারদের কাহিনী 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত জিজ্ঞাসায় তিনি বলিলেন যে অচিরকাল মধ্যেই তদীয় মৃত্যু ঘটবে। এই কথায় সকলেই ভীত হইলেন, গম্ভীরাশয় ভৈরবচন্দ্রের কথা কেহই অবিশ্বাস করিতে পারিলেন না; দেখিতে দেখিতে সেই ভয়ঙ্কর দিন সমাগত হইল, তিনিও পূৰ্ব্ব কথিতানুসারে পরলোক যাত্রা করিলেন। ইহার কনিষ্ঠ সহোদর শিবচন্দ্র সেন মহাশয় নানা গুণের আধার ছিলেন, তাহার দেবদ্বিজে প্রগাঢ় ভক্তি ছিল। একদা শারদীয় পূজার পরে তিনি স্বগীয় কামাখ্যা পাঠ দর্শনে গমন করেন, তথায় একটি কুমারী দেবীভাবাপন্না হইয়া তাহাকে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছিলেন—“অশুদ্ধ চণ্ডীপাঠ করাইয়া কিরূপে শুভ কামনা কর? অশুদ্ধ চণ্ডীপাঠে সোণার লঙ্কা ছারখার হইয়াছিল। এবার পূজাকালে আমি গ্রহণ করিতে পারি নাই।” ব্যথিত চিত্তে বড়ীতে আসিয়া শিবচন্দ্র, দেবগৃহে নিয়োজিত ভৃত্যু “দেওঘরি” কে ইহা বলিলে, সে অকপট চিত্তে তাহা স্বীকার করিয়াছিল। তিনি পরবৎসর পূজাকালে চণ্ডীপাঠের নূতন ব্যবস্থা কবিলেন। কিন্তু তাহার ভ্রাতুষ্পপুত্র ঈশান চন্দ্র হঠাৎ কালগ্রাসে পতিত হওয়ায়, ভীত হইয়া তৎপর বৎসর পূবর্ব নিয়মেই, অধিকতর সতর্কতার সহিত চণ্ডীপাঠ করাইয়াছিলেন। শিবচন্দ্রের পৌত্র শ্রীযুক্ত শ্রীশচন্দ্র সেন মজুমদার মহাশয় আমাদিগকে বলিয়াছেন যে, যেদিন শিবচন্দ্রের মৃত্যু ঘটিবে, সেদিনও তাহার দেহ বোগশূন্য ও সুস্থ ছিল। তাহার পূবর্বরাত্রে তিনি কিছুই আহার না করায়, শ্রীশ বাবুর পিশী তাহাকে শিবচন্দ্রের নিকট প্রেরণ করেন; শ্রীশ বাবু তখন ৮/৯ বর্ষীয় বালক মাত্র। পৌত্র আসিয়া খাওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করিলে, শিবচন্দ্র তাহাকে বলেন, "দাদা, আজই যে আমার মৃত্যুর দিন, এ সময় কি খায়?” বাল্যচাপল্য বশতঃ শ্রীশ বাবু তখন একথা কাহাকেও বলেন নাই, কিন্তু তাহার কিছুকাল পরেই হঠাৎ কোন অজ্ঞাত কারণে শিবচন্দ্রের দেহ অবশ হইয়া পড়িল এবং সেই অভুক্ত অবস্থায় শুদ্ধদেহে কিয়ংক্ষণ মধ্যেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলিয়া পড়িলেন। ভৈরবচন্দ্রের পাঁচ পুত্র, তন্মধ্যে জ্যেষ্ঠ গিরীশচন্দ্র সুশিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন, তিনি সাংসারিক কোন কার্যে লিপ্ত না হইয়া ধ্যান ধারণায় সময় কৰ্ত্তন করিতেন। সৰ্ব্বজীবে তাহার দয়া ছিল, পাছে পদতলে দলিত হইয়া কোন প্রাণী বিনষ্ট হয়, এই ভয়ে তিনি পথ চলিতে সদা সতর্ক থাকিতেন। সবর্বদা তিনি শুচি ভাবে থাকিতেন; একদা শৌচাদি সমাধা করিয়া গৃহে আসিতে আসিতে হঠাৎ তাহার দেহ অবসন্ন হইয়া পড়ে, তাহাতেই তিনি সজ্ঞানে মৃত্যুমুখে পতিত হন (১৭৫৯ শকাব্দ), মৃত্যুর পূবৰ্ব মুহুৰ্ত্তে র্তাহার গৃহে ব্ৰাহ্মণভোজন সমাপ্ত হইয়াছিল। ইহারই সুযোগ্য পুত্র পূৰ্ব্বোক্ত শ্রীশচন্দ্র সেন মজুমদার মহাশয় হইতে এই বিবরণী প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। হেরম্বরায় ও তদ্বংশ কথা প্রায় চারিশত বৎসর হইল, রাঢ়দেশ হইতে বৈদ্যবংশীয় কৃষ্ণাত্রেয় গোত্রোদ্ভব হেরম্ব রায় নামক জনৈক সন্ত্রান্ত ব্যক্তি এ দেশে আগমন করিয়া তরফের সুকরিপাড়া গ্রামে বাস করেন; তাহার অনুষঙ্গে ব্রাহ্মণ, নাপিত, নট, ধোপা, ও মালী প্রভৃতি বহুলোক আসিয়াছিল। সুঘরের আচাৰ্য্য বংশীয়ঘণের পূৰ্ব্বপুরুষ মুরারি আচার্য হেরম্বরায়ের সহিত এ দেশে আসিয়াছিলেন।