পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আঠার মালাকার বা মালী—শ্ৰীহট্টে প্রায় দৃষ্ট হয় না। এই নবশায়ক ব্যতীত শূদ্র জাতীয় “দেব” গণের উল্লেখ প্রয়োজন। অবস্থার উন্নতিতে ইহারা কায়স্থ সমাজে প্রবিষ্ট হইতে প্রয়াস পায়, তাহাতে কেহ বা কৃতকাৰ্য হইয়াও থাকে। সিং বা ভাণ্ডারী মধ্যেও এইরূপ আত্মাগোপনের যথেষ্ট উদাহরণ আছে। এস্থলে “দাস-চুণার” এবং “রাজদাস” প্রভৃতির কথা উল্লেখ না করিলে অন্যায় হয়। চুণারকে অনেকে ছুতারের সমজাতীয় মনে করেন, বস্তুতঃ তাহারা ছুতার নহে ও ইহাদের ব্রাহ্মণ পৃথক। কালারায়ের চক, রাঙ্গাউটিয়া এবং লাতু প্রভৃতি স্থানে চুণারগণের বাস আছে। ইহারা কাষ্ঠমিস্ত্রির কাজ করে। লাতুর চুণারগণ চুণের ব্যবসায়ও চালাইয়া থাকে। “রাজাদাস” জাতীয়গণ ছাতক প্রভৃতি স্থানে দৃষ্ট হয়; পূৰ্ব্বোক্ত দাসজাতির সহিত ইহাদের কোনরূপ সামাজিক সম্পর্ক নাই। রাঢ়জাতীয় ব্যক্তিবর্গের আর্থিক অবস্থাদি মন্দ নহে:ইহারা আনারসের চাষ করিয়া থাকে, পূৰ্ব্বে কুশিয়ারের চাষ করিত। তাহদের বাড়ীতে কমলার বাগান প্রায়শঃ দৃষ্ট হয়, তাহাতে বাড়ীগুলি সুরম্য উপবনবৎ প্রতিভাত হইয়া থাকে। বৈশ্যাবৃত্ত রাঢ়জাতীয় ব্যক্তিবর্গ নামের শেষে দাস উপাধি ব্যবহার করে। ইহাদের মধ্যে ধনহীনের সংখ্যা বিরল। এবং তাহারা প্রায়শঃ ধৰ্ম্ম-কৰ্ম্ম-নিরত এবং ন্যায়পরায়ণ। তাহাদের সাহস ও বীয্য প্রশংসনীয়। এতদ্ভিন্ন অন্যান্য জাতির মধ্যে যোগীজাতির অবস্থা অনেকাংশে উন্নত। যোগীজাতির উৎপত্তি ইত্যাদি সম্বন্ধে আগম সংহিতাদিতে অনেক তথ্য লিখিত আছে, তাহাতে অবগত হওয়া যায় যে, ইহাদের জাতীয় নাম যুগী নহে—যোগী। তাহারা যোগী গোরক্ষনাথের সন্তান বলিয়া নামের শেষে “নাথ” শব্দ ব্যবহার করে। শ্রীহট্টের অপর যে সমস্ত জাতি বৰ্ত্তমান আছে, তাহাদের বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (পূৰ্ব্বাংশে) ১ম ভাগের সপ্তম অধ্যায়ে বিস্তারিতরূপে বর্ণিত হইয়াছে বলিয়া এ স্থলে পুনরুক্ত হইল না। এই সমস্ত হিন্দুজাতি এবং মোসলমান জাতির মধ্যে সন্ত্রান্ত পরিবারের বংশবৃত্তান্ত এবং কাহার কাহারও জীবনবৃত্তান্ত ইতিবৃত্তের এই অংশে আমরা বর্ণন করিতে প্রবৃত্ত হইতেছি।