পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত না। তিনি তথায় কিছুদিন থাকিয়া এই শাস্ত্রগুলি কণ্ঠস্থ করিয়া লইয়াছিলেন। এইস্থানে মাধবেন্দ্র পুরীর সহিত র্তাহার পুনৰ্ব্বার সম্মিলন হয়। এই স্থান হইতে অদ্বৈত দণ্ডকারণ্যে (মহারাষ্ট্র দেশে) গমন করেন, তিনি নাসিক প্রভৃতি তদেশীয় বহুতীর্থ দর্শনান্তে দ্বারকাধামে উপস্থিত হন। দ্বারকায় লক্ষ্মী-বাসুদেব দর্শন পূৰ্ব্বক তিনি প্রবাস ক্ষেত্রে গমন করেন; তথা হইতে পুষ্কর তীর্থ ও পুষ্কর হইতে কুরুক্ষেত্রে এবং তদনন্তর তদুত্তরদিশ্বৰ্ত্তী হরিদ্বারে গমন করেন। হরিদ্বার হইতে বদরিকাশ্রমে উপস্থিত হইয়া নরনারায়ণ দর্শন করেন। বদরিকাশ্রম হইতে অদ্বৈত গণ্ডকীমানে গমন করিয়াছিলেন, এই নদীর অপর নাম চক্ৰনদী, ইহা মুক্তিনাথ পবর্বত হইতে নির্গত হইয়া হরিহর ছত্রের নিকটে গঙ্গার সহিত মিলিত হইয়াছে। এই নদীস্থিত শিলাই শালগ্রামচক্র নামে খ্যাত। অদ্বৈত তথা হইতে একটি সুলক্ষণ সম্পন্ন শিলা লইয়া মিথিলায় আগমন করেন। সীতা দেবীর জন্মস্থান দর্শনে তাহার মনে নানা কথা জাগিতে লাগিল। কবি-সম্মিলন এমন সময়ে হঠাৎ তিনি শুনিতে পাইলেন যে অদূরে কাহারও কিন্নর নিন্দিত কণ্ঠে করুণ কৃষ্ণলীলা গীতি ধ্বনি উত্থিত হইতেছে, মনঃপ্রাণ মুগ্ধকর সেই সুমধুর বিরহ-সঙ্গীত শ্রবণে অদ্বৈত অস্থির হইয়া সঙ্গীত-ধ্বনি লক্ষ্য করিয়া চলিলেন। এই নবীন বটবৃক্ষ মূলে ছায়া-তলে উপবিষ্ট একবৃদ্ধ ব্রাহ্মণ ভাবভরে গান গাইতে ছিলেন। সে গানের কি মোহিনী শক্তি অদ্বৈত দৌড়িয়াগিয়া গায়ককে আলিঙ্গ ন করিলেন। অদ্বৈত বলিলেন—“দ্বিজবর! এ অপূৰ্ব্ব সঙ্গীত কাহার রচিত? আপনিই কি লীলা সাগরে নিমগ্ন হইযা এ রত্ন উদ্ধার করিয়াছেন? এমন সঙ্গীত আর কোথাও শুনি নাই!” এই যুবকের আলিঙ্গনে বৃদ্ধ গায়কের দেহ দিয়া যেন একটা বিদ্যুৎ প্রবাহ বহিয়া গেল, দেহ কম্পিত হইযা উঠিল; গাযক বুঝিলেন যে, এ যুবক সামান্য নহেন; নতুবা তাহার স্পর্শে তাহার মনে সাত্ত্বিক ভাবোদয় কেন হইবে ? তিনি যুবকের প্রতি আগ্রহ সহকারে চাহিলেন, আগ্রহ সহকারে প্রত্যুত্তরে বলিলেন “মহাশয়! আমার নাম বিদ্যাপতি, মিথিলার রাজান্নপুষ্ট রাজকবি বলিয়াই খ্যাতি বটে। এই সামান্য সঙ্গীত গুলি আমারই বাতুলতার পরিচায়ক। " এইরূপে অদ্বৈতের বিদ্যাপতির সহিত সাক্ষাৎ ও পরিচয় হইয়াছিল। কবি বিদ্যাপতি আতি দীর্ঘজীবী ব্যক্তি ছিলেন। ৬ “ গুনি মাত্র সব প্রভু কণ্ঠস্থ করিলা । তাহা দেখি সাধুগণ বিস্ময় মানিলা।-অদ্বৈত প্রকাশ ৭ দ্বিজ তব কিবা নাম শুনিতে মনে হয; কাহাব রচিত এই গীত সমুদয ? বচনাব মাধুর্য ঐছে নাহি শুমো আব;তায়ে স্ববালাপ হয় অতি চমৎকার। এ হেন সঙ্গিত সুধা মোবে পিযাইযা। মত্ত কবি এ স্থানে আনিলা আকর্ষিকা। বিপ্র কহে মোব নাম দ্বিজ বিদ্যাপতি। বাজান্ন ভোজনে মোর বিষযেতে মতি।। বাতুলতা কবি মুঞি বচিনু এ গীত। সার গ্রাহী সাধু তুহ তেই ইথে প্রীত।” -অদ্বৈত প্রকাশ । ৮ বিদ্যাপতির প্রাপ্ত বাসপীগ্রামের দানপত্রে ২৯৩ লক্ষণাব্দ (১৪০১ খ্ৰীষ্টাব্দ) দৃষ্ট হয়।রাজা শিবসিংহেব যৌববাজ্যে থাকা কালেই ইহা প্রদত্ত হইয়াছিল। বিদ্যাপতি কৃত “দুৰ্গভিত্তি তরঙ্গিনী” শিবসিংহের বাজত্ব কালে (১৪৪৭-১৪৫১ খৃঃ) রচিত হয়। এই সময় মধ্যে অদ্বৈত মিথিলায় গিযা থাকিবেন এবং তখন উভযেব দেখা সাক্ষাৎ হওয়ার খুবই সম্ভাবনা। দেখাও যায যে অদ্বৈত বিদ্যাপতির পদ গাইতে ভালবাসিতেন।