পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত। ইহার পূৰ্ব্বপুরুষ দুলালীবাসী ছিলেন। কবির পিতামহ দুলালী হইতে ছাতকে উঠিয়া আসেন, তদবধি তাহারা ছাতকবাসী। কবির রচিত পদ্মাপুরাণ ১২০৫ ৭ বঙ্গাব্দের মধ্যে লিখিত হয়। কবির ভাষা বেশ মধুর ও গম্ভীর, শব্দবিন্যাস চতুর্য্যপূর্ণ, ভাব অতি উচ্চ; বৈষ্ণব সমাজ ব্যতীত অন্যত্র দুৰ্ল্লভ। তাহার এই পদ্মাপুরাণ ছাতকও দুলালী প্রভৃতি স্থানে গীত হইয়া থাকে। ইহা মুদ্রিত হয় নাই। আনন্দরাম (লালা) শ্রীহট্ট শহরবাসী লালা আনন্দরামের রচিত ব্রজবুলি বিমিশ্রিত বৃন্দাবন লীলা বিষয়ক “দোহাবলী” অতি প্রসিদ্ধ, এই দোহাবলীর কবিত্ব অতি মধুর ও রচনা অতি পরিপাটি। সকল দোহা সংগ্রহের চেষ্টা করিলে এখনও উহা বিলুপ্তির হাত হইতে রক্ষা পাইতে পারে। লালা আনন্দরাম শ্রীহট্টীয় সাহু-কুল-সস্তুত ছিলেন, ইংরেজ আমলের প্রথমে ইনি শ্রীহট্টের সৰ্ব্বপ্রধান কার্যকারকের সহকারী ছিলেন। দশসনা বন্দোবস্তের সময়ে এ জিলার তালুক সমূহের উপরে যে জমা (কর) ধাৰ্য্য হয, তাহা নিদ্ধারণ পূৰ্ব্বক স্থাপনেব ভার ইহার উপরেই ছিল; এইরূপ গুরুতর দায়িত্বপূর্ণ বাজকাৰ্য্যে ব্যাপৃত থাকিয়াও তিনি বঙ্গ ভাষার সেবা করিতে বিস্মৃত হন নাই। বৰ্ত্তমানে যেমন যশের জন্য অথবা অর্থের জন্যও অনেকেই সাহিত্য সেবক সাজেন পূৰ্ব্বে লোকের প্রবৃত্তি তদ্রুপ ছিল না; উহারা অনেকেই ধৰ্ম্মের জন্য--লোকের উপকারের জন্য কবিতা লিখিতেন। অল্প কেহ বা আত্মতৃপ্তির উদ্দেশ্যে সঙ্গীত রচনা করিতেন । লালার দোহা প্রণয়ন ধৰ্ম্মার্থে; তাই তিনি গুরুতর রাজকাৰ্য্যে থাকিয়াও ইহার জন্য সময় করিয়া লইয়াছিলেন। লালার হাতে প্রচুর রাজক্ষমতা ছিল—দেশের যত বড় বড় জমিদার তাহার করতলগত ও বাধ্য ছিলেন। কথিত আছে যে সেই ভরসাতে তিনি স্বজাতী সামাজিক উন্নতি বিধানে সচেষ্ট হইয়াছিলেন। এই সময়ে একদা কাছাবীতে গিয়া হঠাৎ শিরঃপীড়ায় আক্রান্ত ও জ্ঞান শূন্য হইয়া পড়েন; তখন শিবিক সহায়ে তিনি গৃহে নীত হন ও অল্পকাল মধ্যেই প্রাণত্যাগ করেন। লালা আনন্দরাম সম্বন্ধে আরও অনেক কথা শুনা গিয়া থাকে। লালার অনেকখানা নৌকা ছিল, ইহার অধিকাংশই ব্যবসায়ী নৌকা, একদা প্রত্যেক নৌকার একখানা করিয়া “বৈঠা” তাহার গৃহে আনীত হয়, তাহা একত্র রক্ষিত হইলে পুরুষ প্রমাণ উচ্চ হইয়াছিল। পূৰ্ব্বে শ্রীহট্টে শহরের সাহুজাতীয় প্রত্যেক ব্যক্তিরই উত্তম ব্যবসায়ী ছিলেন। উচ্চ রাজপদে থাকিয়াও সকলেরই অবস্থা অতি উজ্জ্বল ছিল, এক্ষণে স্ববৃত্তি ত্যাগে সকলেরই অবস্থা অতি মলিন হইয়া পড়িয়াছে। শহরের পল্লীগুলি লক্ষ্মীর কৃপা বিহীনতায যেন ক্ৰন্দন করিতেছে বিগত ভূকম্পে পূৰ্ব্ব গৌরবের ভগ্নাবশেষ চিহ্নও বিলুপ্ত করিয়া দিয়াছে। ফরহাদ খাঁর পোলের পাশ্বে গোয়ালিনী তীরে লালা আনন্দরামে প্রাসাদতুল্য গৃহের ভগ্নাবশেষ ও দেউড়ী-দেওয়াল প্রভৃতি বাল্যকালে আমবা দেখিয়াছি; এখন তাহা রূপান্তরিত হইয়া গিয়াছে। লালা ধৰ্ম্মপরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন, তিনি নিজ পুরোহিত গৃহের বংশীধারা দেবতার জন্য “পঞ্চরত্ন মন্দির” নিৰ্ম্মাণ করিয়া দিয়াছিলেন।** ২৬. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ ৩য় ভাঃ ১ম খঃ ৪ৰ্থ অঃ দেখুন।