পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত অনুগ্রহে বিবিধ ব্যাধি হইতে নিরাময় হইত, তাহার হস্ত স্পর্শে কঠিন পীড়াও প্রশমিত হইত বলিযা কথিত আছে। একদা বুড়ীকোণা বাসী, বিনন্দরাম ধর নামক একব্যক্তি র্তাহার কাছে আসিলে তিনি বলিলেন— ‘জেঠা ! তোমার গাছে আম পাকিয়াছে, আমার জন্য আন নাই কেন?” তখন আমের দিন নহে, আমের মুকুলই তখন হয় নাই। কিন্তু বিনন্দরাম বাড়ীতে গিয়া কথিত আম্র বৃক্ষটি দেখিয়াই অবাক! তাহার পুকুরের কিনারে ছোট গাছটিতে যথার্থই পাকা আম ঝুলিতেছে! বলা বাহুল্য সেই পরিপক্ক আম্রগুলি কেশবকে উপহার দেওয়া হইল! এই সময়ে কুতবশাহ নামে খ্যাত জনৈক মোসলমান সিদ্ধ পুরুষ এইস্থানে আগমন করিয়াছিলেন, তিনি ঘটনাক্রমে একদিকে নিষ্ঠীবন নিক্ষেপ করেন। কেশব ভাব বিশেষে নিবিষ্ট চিত্ত হইয়া তখন বাহ্য জ্ঞান বিরহিত প্রায় ছিলেন, তদবস্থায় তিনি মাটি হইতে উঠাইয়া উক্ত নিষ্ঠীবন গলাধঃকরণ কবেন। এতদ্বষ্টে কুতব সাহেব তাহাকে “অজ্ঞান” বলিয়া মিষ্ট ভৎসনা করেন। এই সময় হইতে কেশব “অজ্ঞান ঠাকুর” বলিয়া খ্যাত হন। তখন হইতে কুতব ও তিনি উভয়ে একত্রে থাকিতেন। একদা পঞ্চগ্রামের নিকট এই দুই মহাত্মা এক অন্যে কুস্তি করিয়া দাস বংশীয় জনৈক ভদ্রলোকের পাকা ধান্যের ক্ষতি করিয়াছিলেন, ভদ্রলোক অপচয়কারী ব্যক্তি দ্বয়কে শাস্তি দিবার অভিপ্রায়ে ক্ষেত্রে উপস্থিত হইলে কুতব পলায়ন করিলেন, অজ্ঞান ধরা পড়িলেন। অজ্ঞানের পরিচয় প্রাপ্তে ভদ্রলোকটি শাস্তির পরিবৰ্ত্তে ১৩/০ হাল পরিমিত সেই ভূমিখণ্ড তাহাকে অপণ করিলেন। এই ভূমি পরে “অজ্ঞানের জাঙ্গাল” নামে খ্যাত আছে। অজ্ঞানের নৌকা নামান উপলক্ষে একটি সারিগান রচিত হইয়াছিল, অদ্যাপি লোকে বলিয়া থাকেঃ— “সবে বল হরি হরি। অজ্ঞানে সোয়ারি নাও যাইতে অন্তেহরি।” অজ্ঞানের বাসস্থানে গ্রাম্য লোকে একটি মন্দির প্রস্তুত করিয়া দিয়াছিল, উহা অদ্যাপি আছে এবং তাহাতে অজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত রাধাকৃষ্ণ ও শালগ্রাম শিলা বিরাজমান। অজ্ঞানের মন্দির হইতে প্রায় অদ্ধ মাইল দূরে কাওয়াদীঘী হাওরের নিকট “নুনডুবা” বলিয়া একটা স্থান আছে। প্রবাদ যে, কোন এক মহাজন অজ্ঞানকে লবণ না দেওয়াতে এই স্থানে তাহার লবণ পূর্ণ নৌকা ডুবিয়াছিল; তৎক্ষণাৎ সে প্রবুদ্ধ হইয়া অজ্ঞান ঠাকুরের শরণ লয় ও নৌকা উঠাইয়া ফেলে এইবার সে ব্যবসায়ে যথেষ্ট লভ্য করিয়াছিল। অজ্ঞান ঠাকুর যেস্থানে রাখালদের সহিত খেলা করিতেন, তথাকার একটি উচ্চ স্থানকে লোকে “অজ্ঞানের ঢিপি” বলিয়া থাকে। অজ্ঞান ঠাকুর শেষ বয়সে ভেখধারণ করিয়া বৈরাগী হইয়াছিলেন। তিনি সমাজের চক্ষে হীনপদস্থ হইলেও তদীয় আধ্যাত্মিক উন্নতিতে দেশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ সৰ্ব্বদাই তাহাকে শ্রদ্ধার নেত্রে দর্শন করিতেন। উপযুক্তের সম্মান দিতে হিন্দু কখনও কুষ্ঠিত হয় না, শ্রদ্ধা জাতিকুল অপেক্ষা করে না। শমশের নগরের চৌধুরীও কানুনগোবর্গ অজ্ঞান ঠাকুরের সেবা পরিচালনার জন্য ১১৬৪ সালে তাহাকে কতক ব্রহ্মভূমির দান করিয়াছিলেন।” ৩২ উত্তঃ দান পত্রের প্রতিলিপি এইঃ– “ইযাদিকিদ শ্রীঅজ্ঞান দাস বৈষ্ণব সাকিন পরগণে সমসের নগব সদাসযেযু। লিখিতং শ্রীচৌবধুবীআন ও কানুনগৈ আন পং মজকুব পত্র মিদং কার্যাঞ্চ আগে—আমবা পৰগণা মজকুরে কেশববাম পণ্ডিত তালুক কিং বিবাইবাদ ও