পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত অগ্নিকাণ্ড উপস্থিত হইল, নাগরিকের হাহাকার ধবনি সম্রাটের কর্ণগোচর হইতে লাগিল। সম্রাট নিজ মনে ইহা সাধু নিগ্রহের ঈশ্বর দত্ত শাস্তি বলিয়া বোধ করিলেন ও সেই অসৎ চিন্তায় বিরত হইলেন। সম্রাট ভাবিলেন—যে ব্যক্তি দিল্লীর বাদশাহের সম্মুখে বসিয়া বাদশাহের অনুরোধ উপেক্ষা করিতে পারে, তাহার সেই সাহস হইতে অদ্ভুত আর কি হইতে পারে? কোন “কেরামত” হইতে ইহা ছোট? এই ভাব মনে উদয় হইলে তিনি পূৰ্ব্ব কল্পিত সাধু দ্রোহের কথা স্মরণে লজ্জিত হইলেন ও তজ্জন্য সাধুকে বহুধন ও ভূমি দানের অভিপ্রায় প্রকাশ করিলেন। কিন্তু সাধুর কি অভাব ? তিনি এ দান গ্রহণ করিলেন না, বলিলেন ঃ– বাদশাহ! “কামিনী আর কাঞ্চন দুই অনর্থের মূল। তাতে লোভ কৈলে হর ধৰ্ম্ম নিরমূল।”—বঞ্চিত চরিত্র গ্রন্থ। বাদশাহ হিন্দু সাধুর নিলোভ ভাব অবলোকনে প্রীত হইলেন; সাধুও সম্রাট সকাশে বিদায় লইয়া বৃন্দাবনে চলিলেন। বৃন্দাবনে পথিমধ্যে এক পৰ্ব্বত, পৰ্ব্বত পার হওয়াকালে মধ্য পথে এক প্রকাণ্ড অজগর তাহাকে আক্রমণ করে, সাধু প্রসন্ন চিত্তে সেই সপকে হরিনাম শুনাইয়া দিলেন, আর সাপ সেই নাম মন্ত্র শ্রবণে উন্নত মস্তক অধঃ কবিয়া যেন তাহার চরণে প্রণত হইয়া পড়িল। কথিত আছে, একটা বিদেহী দানব তাহার সম্মুখে পতিত হইযাছিল, সেও হরিনাম শ্রবণে সরিয়া যায়। তিনি বৃন্দাবনে পৌছিলেন ও শ্রীবিগ্রহ দর্শনে প্রেমে পুলকিত হইলেন। গৌর-পরিকর গোস্বামীগণের সমাধি দর্শনে তিনি ক্ৰন্দন করিতে লাগিলেন। তৎপরে তিনি শোকাকুল চিত্তে শয়ন করিয়া নিদ্রাবিভূত হইলেন, সেই সময় শ্রীজীব গোস্বামী তাহাকে দর্শন দান করিলেন। তিনি শ্রীজীবের চরণে তত হইলে, গোস্বামী বলিলেন—“যাও বঞ্চিত, দেশে যাও, নিজের সুখের জন্য বৃন্দাবনে বসিয়া বহিও না; অসংখ্য দেশবাসী যে কৃষ্ণ প্রেম সুখে বঞ্চিত রহিয়াছে, কে তাহাদিগকে সুধায় আস্বাদন করাইবে? যাও বঞ্চিত, দেশে যাও, তুমি দেশে গিয়া বিবাহ কর ও সংসারে অলিপ্ত থাকিয়া ধৰ্ম্ম পালনে লোক উদ্ধারের পন্থা প্রদর্শন কর।” বঞ্চিত সাধন প্রভাবে অব্যাহত গতি লাভ করিয়াছিলেন বলিয়া লিখিত আছে, বৃন্দাবনে তিনি সামান্য কয়েকদিন মাত্র ছিলেন, তাহার পরেই নিজগৃহে উপনীত হন। তিনি দেশে আসিলে তাহার মাতা বিবাহের উদ্যোগ করিলেন, পঞ্চেশ্বরের বিশ্বাস বংশে একটি সুপাত্রী তিনি পূৰ্ব্বেই স্থির করিয়া রাখিয়াছিলেন, ইহাকেই বধূ করিতে ইচ্ছা করিলেন; বঞ্চিত আর অস্বীকৃত হইলেন না, মাতৃ আজ্ঞাপালনে গৃহী হইলেন। দেশে সংকীৰ্ত্তন বিবাহের পর বঞ্চিতের ভাবের কিছুমাত্র ব্যত্যয় ঘটিল না, বরং সংকীর্ণ তরঙ্গ আরও বদ্ধিত হইল, “বাণী চরিত্র” পাঠে জানা যায় যে, এই সময় ঠাকুরবাণী, পাগল শঙ্কর এবং বৈষ্ণব রায় তাহার সহিত কীৰ্ত্তনে কখন কখন যোগ দিতেন। কথিত আছে এতদঞ্চলে চৌতালা কীৰ্ত্তনের তিনিই প্ৰবৰ্ত্তন করেন। র্তাহার কীৰ্ত্তন কেবল স্বগ্রামেই নিবন্ধ রহিল না, তিনি ভক্তবর্গ সহ কীৰ্ত্তন লইয়া স্থানে স্থানে