পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৪৪ গোস্বামী কাকে বলে জানেন না ? গো শব্দে ইন্দ্রিয় বুঝায়, যে ইন্দ্রিয় জয়ী, সে-ই গোস্বামী। কিন্তু ইন্দ্রিয় যাহার উপর স্বামিত্ব করে, সে “গোস্বামী গাভীর স্বামী ষাঁড় মাত্র গুরুদেব, আপনাকে অধিক কি বলিব, আপনি কি রূপ গোস্বামী বুঝিয়া লউন।” সেবক-পত্নীর এই ভৎসনা বাক্যগুলিতে গুরুদেবের জ্ঞান-নেত্র স্ফুরিত হইল, তিনি রমণীর প্রতি বিরক্ত না হইয়া সন্তুষ্ট হইলেন। সেবার আর তাহার “প্রবাসে” যাওয়া হইল না, বিবেকের তীব্র তাড়নায় গৃহে ফিরে চলিলেন। গোরাচাদ সহজ ধৰ্ম্ম প্রচারক শ্যামকিশোর ঘোষের" কন্যার পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন, গৃহে গিয়া পত্নীর কাছে অকপটে চিত্তে সেই শিষ্য পত্নীব ভৎসনার কথা বর্ণন করিলেন এবং এই অপমানে গৃহত্যাগের বাসনা করিলেন। গোরাচাদের পত্নী পরম বুদ্ধিমতী ছিলেন, নানা উপায়ে তিনি পতিকে স্থির করিয়া আপন পিতার নিকটে তাহাকে পাঠাইলেন। গোরাচাদ শ্বশুরের নিকটে অনেকদিন অবস্থান করিলেন। সহজ ধৰ্ম্মের প্রতি র্তাহার অনাস্থা ছিল, সেই স্থানে থাকিয়া তিনি বুঝিলেন যে, তাহার ন্যায় ইন্দ্রিয়াসক্ত পুরুষ সহজ ধৰ্ম্মের নিন্দাবাদ করা উচিত নয়, এবং এই ধৰ্ম্মের সাধনায় উদ্দাম পরিহার করিয়া মন অনেকটা সাম্যাবস্থা প্রাপ্ত হয়। গোরাচাদ কাজেই সহজ ধৰ্ম্ম অবলম্বন করিলেন। যে যাহা হউক গুরুগণের কিরূপ সতর্ক থাকিয়া চলা উচিত, অসতর্ক গুরু গোরাচাদের চরিত্র চিন্তা করিলে তাহা বুঝিয়া লওয়া যায়। গোবিন্দচরণ দাস গোবিন্দচরণ দাস শ্রীহট্টর সাহু বংশ সস্তুত গৌরাঙ্গচন্দ্র দাসের কনিষ্ঠ পুত্র। ১৯৩৬ খৃষ্টাব্দের মার্চ মাসে শহরের রায়নগর মহল্লায় তাহার জন্ম হয়। গোবিন্দচরণ তিন বৎসর বয়সে পিতৃহীন হন, তাহার মাতা পুত্রকে সংস্কৃত পড়াইবার বন্দোবস্ত করেন। বালক অধ্যবসায় সহকারে অধ্যয়নে প্রবৃত্ত হইয়া ব্যাকরণাদিতে ব্যুৎপত্তি লাভ করতঃ ব্যাকরণের তর্কে কখন কখন ব্রাহ্মণদিগকেও ঠেকাইতে কুষ্ঠিত হইত না। ইহাতে কোন কোন ব্রাহ্মণ তাহার মাকে বলেন যে গোবিন্দচরণের সংস্কৃত অধ্যয়ন বন্ধ না করিলে তর্কে পরাভূত কোন ব্রাহ্মণের অভিশাপে অনিষ্ট হওয়া অসম্ভব নহে; পুত্রের ভবিষ্যৎ বিপদাশঙ্কায় মা ছেলের টোলে যাওয়া বন্ধ করিয়া দেন। তখন গোবিন্দচরণের বয়স তের বৎসব মাত্র। এই সময় দৈবক্রমে একজন মিশনারীর সহিত তাহার দেখা হইল। তিনি তাহাকে ইংরেজী পড়িতে পরামর্শ দেন। তৎকালে ইংরেজী শিক্ষায় প্রেরণ কবা একরুীপ সমাজ বিদ্রোহিতা বলিয়া বিবেচিত হইত। ইংরেজী শিক্ষিতেরাও প্রায়শঃ খ্ৰীষ্টিয়ান হইয়া যাইত। তদবস্থায় অনেকেই এ প্রস্তাবে অসম্মত হইলেও গোবিন্দচরণের অত্যাগহে শেষে তাহার মাতা পুত্রকে ইংরেজী পড়িতে অনুমতি দিলেন। ইংরেজী শিক্ষায় তাহার অনুরাগ শতগুণে বৰ্দ্ধিত হইল, সাহেব শিক্ষক তাহার পরিশ্রম ও প্রতিভা দর্শনে পরম প্রীত হইলেন। গোবিন্দচরণ ছয় বৎসর কাল ইংরেজী অধ্যয়ন করিয়া অতি ৪২. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ ৩য় ভাঃ ৩য় খণ্ড ৮ম অঃ দেখ।