পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৭ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত এই প্রশ্নোপলক্ষে আগন্তুক মৌলানা আপন বিবরণ বিবৃত করেন। তিনি মোনশী মহাশয়ের সহিত আলাপে মোনশীর জ্ঞানের পরিচয় পাইয়া ও শিষ্টাচারে এরূপ মোহিত হন যে, সেই সভায় স্পষ্ট বাক্যে বলেন যে, তাদৃশ উপস্থিত কবি সুবক্তা ও পণ্ডিত র্তাহার দৃষ্টিপথে বড় পতিত হন নাই; তিনি ইহাও বলেন যে ইহার সহিত পরিচিত হওয়ায় তাহার এদেশে আগমনের সার্থকতা হইয়াছে। গৌরীচরণ যেমন সুপুরুষ ছিলেন, তাহার দেহায়তন ও তদ্রুপ সৌষ্টব সম্পন্ন ছিল, তাহার শারীরিক সামর্থ্যের ন্যায় আহারও ছিল। সরু দানার তণ্ডুল তিনি ভালবাসিতেন না, লম্বা দানা লাল চাল তাহার মুখ-রোচক ছিল, প্রতিবেলা তণ্ডুলের অন্ন ভোজন করিতেন। একদা শ্রীহট্টের সুপ্রসিদ্ধ “বাবু” মুরারিচাদ রায়" তাহাকে ঝুলন উপলক্ষে নিমন্ত্রণ করিলে তিনি যখন আহার করিতেছিলেন, সৌজন্য প্রদর্শনার্থ “বাবু” তাহাকে বলেন—“মোনশী মহাশয় আয়োজন সামান্য, পরিশ্রম মাত্রই সার হইল।” মোনশীর আহারের পরিমাণ না জানাতে পরিবেশক অন্যান্যর ন্যায় তাহাকেও পরিবেশন করিতেছিল, তাই তিনি কহিলেন—“আয়োজনের কিছু মাত্র ত্রুটি নাই, কিন্তু হাতায় মারে।” “বাবু” হাসিয়া পরিবেশক ব্রাহ্মণকে বলিলেন “ঠাকুরজী, মোনশী যে আহারে আমারই তুল্য।” ঠাকুর ছুটিয়া গিয়া তৎক্ষণাৎ বৃহৎ ৩২ খান লুচি ও দুইসের পরিমিত পায়স আনিয়া দিলে তথাবিধ আহারের পরেও মোনশী তত্তাবৎ উদরস্থ করিয়া পরিতৃপ্ত হইলেন। তাহার আহার দর্শনে “বাবু” বিশেষ সুখী হইলেন ও পরদিন উভয়ে একত্রে মধ্যাহ্নে ভোজনের জন্য সনিৰ্ব্বন্ধ নিমন্ত্রণ করিলেন। পরদিন দেখা গেল যে, উভয়েই সম পরিমিত দ্রব্য আহার করিতে সমর্থ। তখনকার লোকের আহার ও সামর্থ্য এবং স্বাস্থ্যের কথা শুনিলে এখন গল্প বলিয়াই বোধ হয়। মোনশী বেশ গাইতে জানিতেন। তৎকালে লোকের সুখ স্বচ্ছন্দতা যথেষ্ট ছিল, তাহারা প্রায়শঃ সঙ্গীত বিদ্যার আলোচনা করিত; সুরসংযোগে মহাভারত রামায়ণ, পদ্মা পুরাণ পড়িতে না পারিলে নিন্দিত হইতে হইত; মোনশী একবার ঝুলনোপলক্ষে স্বীয় গুরুপাট পাণিশালির আখড়াতে গিয়া ঝুলনের পালটি গাইতে ছিলেন। ইন্দানগরের জমিদার রাধাগোবিন্দ চৌধুরী সপরিবারে সেই স্থানে উপস্থিত ছিলেন, র্তাহার বিবাহ যোগ্য কন্যা শ্রীমতী, মোনশীব সুকণ্ঠ নিশ্রিত সঙ্গীত শ্রবণে ও দৈহিক লাবণ্য দর্শনে মোহিতা হইয়া, ইহার সহিত র্তাহার বিবাহ হয়, তাহাই দেবতার কাছে প্রার্থনা করেন। কন্যার ভাব ভঙ্গিতে তাহাতে গুরু ধনঞ্জয়ের উদ্যোগে ইহা কার্য্যে পরিণত হয়। মোনশী মহাশয়ের ন্যায় উদার ও জ্ঞাতি বৎসর ব্যক্তি বড় দেখা যায় না। তাহাব কনিষ্ঠ ভ্রাতা শ্যামাচবণ যখন পৃথগন্ন হন, মোনশী স্বোপাজ্জিত সম্পত্তির অদ্ধাধিক তাহাকে দিয়া স্বয়ং অল্পাধিক গ্রহণ করিয়াছিলেন। তদীয জ্ঞাতি ভ্রাতা ব্রজরামকে তাহার গোমস্থা নিযুক্ত করিয়া জীবনোপায় করিয়া দিয়াছিলেন। “লাতুর লড়াই” অবসানে বিজয়ী সিপাহী কর্তৃক বাজার বিলুষ্ঠিত হইলে, এই দোকানের দ্রব্যাদিও গৃহীত হয়। অতঃপর তিনি দোকানের সমস্ত স্বত্বই ব্রজরামকে দান করেন। ব্রজরামকে শুধু কৰ্ম্মঠ ও কাৰ্য্যদক্ষ করিয়া তুলিবার জন্য এতদিন দোকান নিজ সম্পত্তি ভুক্ত রাখিয়াছিলেন। ব্রজরাম এই দোকান হইতে প্রচুর অর্থলাভ করিয়া “মহাজন” বলিয়া খ্যাত হন। ব্রজরাম পরম ধাৰ্ম্মিক লোক ৪৪. বাবু মুরারীচাদের কথা পরে কীৰ্ত্তিত হইবে। ৪৫ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য ভাঃ ৫ম খঃ ৩য় অঃ দেখ।