পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৯ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত এবং কনিষ্ঠ গুরুচরণ জুনিয়ার স্কলারশিপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া আইন অধ্যয়ন পূৰ্ব্বক কৃষ্ণনগরে অনেক দিন মুন্সেফ পদে ছিলেন, পরে অফিসিয়েটিং সব জজ নিযুক্ত হইয়া ৩৯ বৎসর বয়সে ১৮৬৩ খৃষ্টাব্দে মৃত্যুমুখে পতিত হন। জন্মান্তরীণ কোন কৰ্ম্ম ফলে বলা যায় না, মোনশী গৌরীচরণের এই তিন চেরাগ অকালে নিৰ্ব্বাপিত হইয়া যায়, কিন্তু দারুণ পুত্ৰশোকে এই গম্ভীরাশয় মহাত্মাকে বিচলিত করিতে সামর্থ হয় নাই। তিনি যে কিরূপ উচ্চহৃদয় ও মানসিক শক্তিশালী পুরুষ ছিলেন, এই সময় তাহা বুঝা গিয়াছিল; তিনি দৈনিক লক্ষ হরিনাম জপ করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন, নাম জপেই প্রায় সারাদিন কাটাইয়া দিতেন; পুত্ৰশোকে তাহাকে অবসন্ন করিতে অবসর পাইত না। তিনি যদিও হাস্য রসিক পুরুষ ছিলেন", এবং রহস্যাত্মক ও কুটার্থ বোধক বাক্য বৃলিতে ভাল বাসিতেন, কিন্তু এই সময় হইতে তাহা ত্যাগ করিয়াছিলেন, বৈষয়িক পরামর্শ বা উপদেশ প্রার্থী,অথবা আত্মীয় স্বজন কাহারই সহিত পূৰ্ব্বরূপ আলাপ করিতেন না, সৰ্ব্বদা জপমালা হাতে নিৰ্জ্জনে বসিয়া থাকিতেন। ফলতঃ এই সময় হইতে তিনি সাংসারিক কোলাহলের দূরে চলিয়া গিয়াছিলেন। তদবস্থায় ৮৪ বৎসর বয়সে ১২৭৭ বাং কাৰ্ত্তিক মাসে এক একাদশী তিথিতে তিনি সকলকে ডাকিয়া বলিলেন—“আজ একাদশী, আমার শরীর অবসন্ন লইয়া পড়িতেছে, সাবধান, কেহ আমার মুখে গঙ্গাজলটুকুও দিও না।” এই কথা বলার কিছুক্ষণ পরে মালা জপ করিতে করিতে, দেখিতে দেখিতে নিদ্রাগ্রস্তের ন্যায় ঢলিয়া পড়িলেন; তখন দেখা গেল যে গুপ্ত সাধকের প্রাণ বায়ু বহির্গত হইয়া গিয়াছে! গৌরীশঙ্কর ভট্টাচাৰ্য্য গৌরীশঙ্কর ইটার পঞ্চগ্রামে কৃষ্ণাত্রেয় গোত্রীয় ব্রাহ্মণ কুলে ১৭৯৯ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। ইহার পিতার নাম জগন্নাথ ভট্টাচাৰ্য্য। জগন্নাথের দুই পুত্র শ্রীনাথ ও গৌরীশঙ্কর। গৌরীশঙ্কর গৌর বর্ণ ও খৰ্ব্বাকৃতি পুরুষ ছিলেন। গ্রামের চতুষ্পাঠীতেই গৌরীশঙ্করের ব্যাকরণ ও সাহিত্য শিক্ষা সমাপ্ত হয়। তৎপূবেৰ্যই তাহার মাতৃ বিয়োগ হইয়াছিল। তিনি যখন কিশোর বয়স্ক পিতা জগন্নাথ তখন পরলোক গমন করেন। পিতৃ বিয়োগে গৌরীশঙ্কর অত্যন্তবিস্বাদিত হন এবং একদা রাত্রিযোগে কাহাকেও কিছু না বলিয়া বাটী পরিত্যাগ পূৰ্ব্বক নবদ্বীপ গমন করেন। তখন গৌরীশঙ্করের বয়স পঞ্চাদশ হয় মাত্র, পঞ্চদশ বর্ষীয় বালক অপরিচিত নবদ্বীপে জনৈক অধ্যাপকের গৃহে উপস্থিত হইয়া ন্যায়াধ্যয়নের অভিপ্রায় জ্ঞাপন করেন। তৎকালে দেশে বিদ্যা আর অর্থের অভাব ছিল না, অধ্যাপকুবৰ্গ ছাত্রের আহার দিতেন, দেশের জমিদারবর্গ হইতে র্তাহার সাহায্য পাইতেন। * ৪৮ মোনশী গৌবীচরণ জ্যোতিষের আলোচনা কবিতে ভালবাসিতেন, তিনি প্রত্যহ প্রাতে পঞ্জিকা হইতে সেদিনকাব বিবরণ কণ্ঠস্থ কবিয়া রাখিতেন। জীবনরাম দাস নামক তাহাব একজন হাস্যরসিক প্রতিবেশী যদিও লিখাপড়া জানিতেন না, তথাপি ছন্দোবন্দে রহস্যাত্মক কথা রচনা কুরিয়া মধ্যে মধ্যে গ্রামবাসিগণকে উপহার দিতেন। মোনশী মহাশযেব পঞ্জিকা-প্রীতি দর্শনে জীবনরাম একবার নববর্ষের হাস্যাত্মক পঞ্জিকা প্রস্তুত করেন, তাহার প্রথমেই লিখিত ছিল— “অস্মিন বর্ষে গৌরী চবণ মোনশী রাজা, তস্য মন্ত্রী নিরামিয় ব্রজরাম মহাজন” ইত্যাদি। এইরূপ আবম্ভ করিয়া সেই পঞ্জিকাতে লাতু গ্রামের তৎকালীন ইতবভদ্র সকলেরই কীৰ্ত্তি উদঘাটিত হইয়াছিল।