পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫১ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত শোধন করিতে যত পাইলাম ক্লেশ । সাধুগণ পঠনে হইবে দুঃখ শেষ।” (বঙ্গবাসী প্রকাশিত মহাভারতের ভূমিকা হইতে) ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দে তর্কবাগীশ গুরুতর পীড়িত হইয়া পড়েন, কিন্তু সে যাত্রা রক্ষা পাইয়াছিলেন, ইহার পরবর্ষে (১২৬৫ বাং ২৫ শে মাঘ) ৫৮ বৎসর বয়সে তিনি মৃত্যু মুখে পতিত হন।” গৌড়গোবিন্দ (রাজা) শ্রীহট্টের গৌড় রাজ্য এককালে এ প্রদেশে এক শক্তি সম্পন্ন খণ্ডরাজ্য ছিল, গোবিন্দ ইহার অধিপতি ছিলেন, খৃষ্টীয় চতুৰ্দ্দশ শতাব্দীতে ইনি শ্রীহট্টে শাসন দণ্ড পরিচালন করেন, ইহার বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশে বর্ণিত হইয়াছে। চন্দন শৰ্ম্মা বাণিয়াচঙ্গ পরগণার অন্তর্গত দড়য়া মৌজায় চূড়ামণি ভট্টাচাৰ্য নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন, তিনি দাস জাতির যাজনা করিতে আরম্ভ করেন, চূড়ামণির রাম, চন্দন, বলাই ও জগন্নাথ নামে চারি পুত্র হয়, তন্মধ্যে চন্দন গুরুর উপদেশ অনুসারে কামাখ্যা পীঠে মন্ত্র সাধনে সিদ্ধি লাভ করিয়াছিলেন। তিনি কামরূপ হইতে দেশে আসিলে-নানা ব্যক্তি র্তাহার কাছে আসিয়া উপস্থিত হইত। চন্দন শৰ্ম্মার গুণ শ্রবণে দাউদ নগরের প্রসিদ্ধ সাধক পীরবাদশা তাহাকে গ্রহণ করিতে অনুরোধ করেন। চন্দন পীরবাদশার অভিপ্রায় বুঝিতে পারিলেন ও “খানা” গ্রহণে স্বীকৃত হইলেন। পীর বাদশার কথামত তখন মোসলমানের ভক্ষ্য খাদ্যদ্রব্য আনীত হইল। চন্দন সেই পাত্রের আবরণ উন্মোচন করিলে দেখা গেল যে, পাত্রে পুষ্প, ঘৃত, তণ্ডুল ও চিনি রহিয়াছে, আনীত পরিপক্ক আমিষ এক রতিও নাই।" এইরূপে তাহার দৈব শক্তির পরিচয় পাইয়া পীর সাহেব অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইলেন, এবং উভয়ের মধ্যে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়। তদবধি চন্দন ঠাকুর দাউদ নগরে প্রায়শঃ যাইতেন। চন্দনের সাংসারিক অবস্থা ভাল ছিল না বলিয়া পীর সাহেব “কশা” মৌজায় তাহাকে কতক ভূমি দিতে ইচ্ছা করেন, তিনি তাহা গ্রহণ করিতে অস্বীকৃত হন এবং বলেন– “সম্পত্তিই ইষ্ট সাধনে অনিষ্ট করিয়া থাকে, ব্রাহ্মণের তাহাতে প্রয়োজন কি ?” চন্দন পীর বাদশার বন্ধু বলিয়া পরিচিত হইলে, তাহার নাম মোসলমান সমাজেও পরিজ্ঞাত হইয়া পড়িল। কথিত আছে, একবার অনাবৃষ্টি হইয়া ছিল ও বহুলোক র্তাহার কাছে আসিয়া বারিপাতের উপায় করিয়া দিতে প্রার্থনা করিয়াছিল। তিনি সমাগত লোকদিগকে বলেন—“বিধাতার ইচ্ছা হইলে বৃষ্টিপাত হইবে, আমি কি করিব ? তোমরা সকলে ভগবানকে ডাক, এখনই বৃষ্টিপাত হইতে পারে।” চন্দন ঠাকুরের এই কথা পরেই বৃষ্টিপাত আরম্ভ হয়। ৪৯ এই প্রবন্ধ সঙ্কলনে দেশবাৰ্ত্তা ও বিজয়া পত্রিকায় প্রকাশিত দুইটি প্রবন্ধের সাহায্য পাইযাছি। ৫০ ইহার কথা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাঃ ২য় খঃ ৫ম অধ্যায়ে কথিত হইয়াছে। ৫১. এইরূপ কথা অন্যত্রও শুনা গিয়াছে। অমাবস্যায় চন্দ্রোদয়, মৃন্ময়ীকালীপ্রতিমাতে শানিত প্রদর্শন প্রভৃতি বিনয়ের ন্যায় এই ঘটনাও বহু সাধক চরিত্রের সহিত জড়িত রহিয়াছে।