পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৫৮ “সাধু সত্য কি বাণী, গুরু সত্য,” এই ধ্বনি উচ্চারণ করিতে লাগিলেন, ফলতঃ ইহা তাহার ধৰ্ম্মের মূলমন্ত্র স্বরূপ হইল। জগন্মোহনের গৃহে ফিরিবার ইচ্ছা ছিলনা, মনে করিয়াছিলেন যে, রথে জগন্নাথ দশনান্তে রথচক্রে প্রাণদান করিবেন। কিন্তু তাহা হইল না; দেশে গিয়া দেশের লোককে জ্ঞান দান করিতে, গুরু মুরারিজী দৃঢ়ভাবে তাহাকে আদেশ দিলেন। গুরুর আদেশে জগন্মোহন দেশে আসিলেন কিন্তু না গিয়া মাছুলিয়ার বিজনবনে বিরলে বসিয়া ভজন করিতে লাগিলেন। শশধর উদিত হইলে তদীয় জ্যোতিরেখা চতুৰ্দ্দিকে আপনা হইতেই বিকীর্ণ হইয়া পড়ে; জগন্মোহনের সংবাদ গোপনে রহিল না। অচিরেই নানা স্থানের সাধু সন্ন্যাসীর আগমন ঘটিতে লাগিল, সুধারাম নামে এক নাগাসন্ন্যাসী একশত সাধু সহ আশ্রমে আসিয়া দেখিলেন যে, কোন দেবমূৰ্ত্তি নাই। তিনি এই বিষয় প্রশ্ন করিলে গোসাই বলিলেন “বৈষ্ণব ভগবানের বিগ্রহ, স্বতন্ত্র বিগ্রহের প্রয়োজন কি?” ইত্যাদি। কোন পৰ্ব্ব উপস্থিত হইলে শিষ্যগণ “চতুৰ্দ্দিকে আলিঙ্গ (লম্বাগৃহ) নিৰ্ম্মাইল", ও তাহার মধ্যে দোল মঞ্চ স্থাপন করিল, তৎপরে শিষ্যবৰ্গ তাহাকেই পূজা করিল। ইহাতে ব্রাহ্মণবর্গ অতিশয় ক্রুদ্ধ হইলেন, এমন কি তাহারা এ ধৰ্ম্মবিগহিত কার্যের প্রতিকার জন্য আমিলের কাছে নালিশ করিলেন। গোসাই আমিল সদনে উপস্থিত হইয়া বুঝাইলেন, আত্মাই ব্রহ্ম, শিষ্যদের তদুপ পূজা দোষাবহ হয় নাই, ইত্যাদি। ফলতঃ জগন্মোহনের খ্যাতি চতুৰ্দ্দিকে বিস্তুত হইয়া পড়িল; দেশপতি সুলতানশীর মোসলমান ভূস্বামীও তাহার পক্ষপতি হইয়া পড়িলেন।" ইহাতে তদীয় মহিমা আরও বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইল এবং ভক্তবর্গ জুটিতে আরম্ভ করিল। গোবিন্দের সঙ্গীত এই সময়ে তাহার আদি শিষ্য গোবিন্দ গোসাই তাহার নিকট আগমন করেন; গোবিন্দ রাঢ়িশাল বাসী; ও সাহাবংশীয় ছিলেন।" গোবিন্দ ধ্যান-মগ্ন জগন্মোহনের নিকট উপস্থিত হইয়া দীক্ষিত হইতে চাহিলে, মাছুলিয়ার বিজন বনে জগন্মোহন গোবিন্দকে পরব্রহ্ম সম্বন্ধে উপদেশ দিয়া গুরুতত্ত্বর মাহাত্ম্য বিশদ ভাবে বর্ণন করেন। তুলসী পত্রের ও গোময়ের পবিত্রতা সম্বন্ধে জগন্মোহন বিশ্বাসী ছিলেন না, তিনি অদ্বৈত ব্ৰহ্মবাদী ছিলেন! জগন্মোহন ভাগবতকার বলেন তিনি— “দেব বিধি মত যত পরিত্যাগ কৈল। কেবল অভেদ পরমার্থ প্রচারিল।” ইত্যাদি গোবিন্দ গোসাঞি জগন্মোহনের মতানুযায়ী যে সকল সঙ্গীত রচনা করেন, জগন্মোহনী সম্প্রদাযে তাহা “নিৰ্ব্বাণ সঙ্গীত” নামে উক্ত হয়।” সমসময়ে বৰ্ত্তমান ছিলেন। জগন্মোহনের গুরু মুরারিজী তুলসী দাসেব শিষ্য হওয়া অসম্ভব নহে। জগন্মোহন ভাগবতেও ইহার নাম আছে,কিন্তু মিলনটা গৃহে থাকা কালে (“বামবাগে") লিখিত হইয়াছে। একথা বিশ্বাসযোগ নহে। কবিবদাস কৃত রামকৃষ্ণচরিতে শ্ৰীক্ষেত্রে মিলন প্রসঙ্গ উল্লেখিত আছে। ৫৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ ২য় ভাঃ ৪ৰ্থ খঃ ৬ষ্ঠ অধ্যায় ইহার বিবরণ বিস্তারিত ভাবে বর্ণিত হইয়াছে। ৫৯. জগন্মোহন ভাগবত মতে ইহাব নাম গোবিন্দবল্লভ নাগ, তাহার পিতার নাম গৌরীবল্লাভ নাগ । ৬০. উদাহরণ স্থলে তিনটি নিবৰ্বাণ সঙ্গীত নিম্নে উদ্ধত হইল ঃ– (১) “বজহে পরব্রহ্ম থাকিবা আনন্দে। কিশোর কারণে ভাই লাগি রৈলা ধন্ধে।।