পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬১ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত সকলেই খৃষ্টধর্ম অবলম্বন করিয়া ছিলেন, জয়গোবিন্দ তন্মধ্যে অন্যতম। ১৮৭৫/৭৬ খৃষ্টাব্দে তিনি কলিকাতা হইতে “ইণ্ডিয়ান খ্ৰীষ্টিয়ান হেরাল্ড” নামক ইংরেজী পত্রিকা পরিচালনা করেন; শ্রীহট্টবাসী কত্ত্বক পরিচালিত ইংরেজী কোনও পত্রিক তৎপূৰ্ব্বে বাহির হয় নাই। তিনি ইণ্ডিয়ান খৃষ্টিয়ান সোসাইটির” প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন এবং তাহার সেক্রেটারী ছিলেন। বাঙ্গালী খৃষ্টান সমাজে জয়গোবিন্দ প্রধান স্থান অধিকার করিয়া ছিলেন। জয়গোবিন্দ একজন বিশ্বাসী খৃষ্টান ছিলেন বটে; কিন্তু হিন্দুধৰ্ম্মকেও তিনি বিশেষ সম্মান ও ভক্তির চক্ষে দেখিতেন। কদাপি হিন্দু ধৰ্ম্মের নিন্দাবাদ তাহার মুখ দিয়া বাহির হইত না, বরং হিন্দুর বাল্য বিবাহ প্রথা সমর্থন করিয়া তিনি ১২৯৩ সনে এক বক্তৃতা করিয়াছিলেন। স্বদেশ ও স্বদেশীয়ের প্রতি তাহার প্রগাঢ় প্রীতি ছিল। তিনি পীড়িত হইয়া মধুপুরে বায়ু পরিবর্তন করিতে গিয়াছিলেন; 2 তাহার স্বদেশ হইতে বহুদূরে—মধুপুরে ১৯০০ খৃষ্টাব্দের ৩য় অক্টোবর তারিখে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন।** জয়নারায়ণ (রাজা) ইনি জয়ন্তীয়া রাজ্যের অধিপতি ছিলেন, ইহার বিস্তারিত বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশে ৩য় ভাগ ৪র্থ খণ্ডের ৩য় অধ্যায়ে বর্ণিত হইয়াছে বলিয়া এস্থানে কিছুই লিখিত হইল না। জীবন ঠাকুর ঠাকুর জীবনের জন্মস্থান সতরশতী পরগণার অন্তর্গত চাদপুর গ্রাম। ঠাকুর জীবন দাস জাতীয় ছিলেন। ইনি বিষ্ণুস্বামী সম্প্রদায় গোকুলের গোসাঞিদের শিষ্য ও একজন প্রসিদ্ধ সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন। ঠাকুর জীবনের বাড়ীর নিকটেই বরাক নদী, নদী ঐ স্থানে ভাঙ্গিয়া একটি ঘূর্ণিচক্রের উৎপত্তি করিয়াছিল। কথিত আছে, একদা কি জানি কি এক দৈব নিৰ্দ্দেশে ঠাকুর জীবন তটভূমি হইতে ঝম্প দিয়া উক্ত ঘূর্ণিচত্রে পতিত হন ও প্রায় দুই ঘণ্টা কাল ডুবিয়া থাকিয়া তৎপরে এক জগন্নাথ বিগ্ৰহ থেকে বক্ষে ধারণ করিয়া জল হইতে উত্থিত হন। এই ঘটনা হইতেই তিনি সিদ্ধপুরুষ বলিয়া খ্যাত হন, এই ঘটনার পর হইতেই ক্রমশঃ নদীতে চড়া পড়িয়া, সে স্থান হইতে নদী প্রায় দুই হাল অন্তরে চলিয়া যায়। এই ঘটনা ঠাকুর জীবনের দৈবশক্তি প্রভাবে সম্পন্ন হইয়াছে বলিয়া সাধারণে প্রচারিত হয়। প্রকৃতই অতঃপর তাহার বিবিধ দৈব্য শক্তি প্রকাশ পাইতে থাকে এবং জনগণ তাহার শিষ্যত্ব গ্রহণে অত্যাগ্ৰহ প্রদর্শন করিতে থাকে। ঠাকুর জীবনের শিষ্য সংখ্যা সামান্য নহে। ঠাকুর জীবন একজন প্রধান সিদ্ধ পুরুষ হইলেও, দুঃখের বিষয় আমরা তদীয় জীবন বিবরণী সম্বন্ধে বিশেষ তথ্য সংগ্ৰহ করিতে সমর্থ হই নাই। ঠাকুর জীবনের রোপিত একটি “জিরবট” বৃক্ষ চাদপুরে আছে, লোকে বৃক্ষটিকে যথেষ্ট মান্য করিয়া থাকে। ঠাকুর ফকির ঠাকুর ফকিরের প্রকৃত নাম কি ছিল জানা যায় না, ইনিও বিষ্ণুস্বামী সম্প্রদায়ভুক্ত বৈষ্ণব ছিলেন। ৬৩ ইহাব স্মৃতি বক্ষার্থে তদীয চিত্র “শ্রীহট্ট গৌবব চিত্রাবলী" ভুক্ত হইয়া সযত্বে রক্ষিত হইযাছে।