পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৬৪ দুর্গাপ্রসাদ কর (দুর্গা সাধু) ইটা পরগণার অন্তর্গত ক্ষেম সহস্র গ্রামবাসী হরিবল্লভ করের তৃতীয় পুত্রের নাম প্রসাদ। ১৮৫১ খৃষ্টাব্দে (কাৰ্ত্তিক মাসে) ইহার জন্ম হয়। বাল্যকালে দুর্গাপ্রসাদের লেখাপড়া হয় নাই বলিলেই চলে, হাতেখড়ির পরে স্বগ্রামে মাত্র বৎসর কাল ওঝার কাছে লেখাপড়া করিয়া ছিলেন; তাহার পর পাঠে যাওয়ার কালে একদা সহপাঠী নিত্যানন্দ করের গৃহে তিনি তিন পাতের একখানা হস্তলিখিত পুথি প্রাপ্ত হন। সেই পুথি পাঠে তাহার মনে হঠাৎ বৈরাগ্যের উদয় হয়; সেই হইতে তিনি পাঠ ও বালকদের সহিত খেলা ইত্যাদি ত্যাগ করিয়া উক্ত তিন পাতের পুথি লইয়া থাকিতেন। পুত্র পাঠ ত্যাগ করিলে, পিতা তাহাকে কাজকৰ্ম্ম শিক্ষা করিতে বলিলেন। ধাতুর বাসন প্রস্তুত করাই তাহাদের ব্যবসায়; পিতৃ আজ্ঞায় দুর্গাপ্রসাদ তাহা শিখিয়া লইয়া স্বয়ং কাজ করিতে লাগিলেন। ইহার পর একাদশ বৎসর বয়সে র্তাহার পিতৃ বিয়োগ ঘটে। তিনি কনিষ্ঠ হইলেও কাৰ্য্যতৎপরতা বশতঃ অল্প কাজ মধ্যেই ভ্রাতৃবর্গের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব প্রাপ্ত হন, তাহারা তদীয় পরামর্শ গ্রহণ না করিয়া কোন কাৰ্য্যই করিতেন না। যখন তাহার বয়স পঞ্চদশ বৎসর, তখন সেই ক্ষুদ্র সংসারে তিনি একজন কৃতি পুরুষ। তখন তিনি কিঞ্চিৎ সঞ্চয় করিতে সমর্থ হইয়াছেন। এই সময় তিনি উদ্যোগী হইযা জ্যেষ্ঠের বিবাহ দেন। তাহার পরে তিনি দীক্ষামন্ত্র গ্রহণ করেন এবং আমিষ ভক্ষণ বজ্জন, একাদশী প্রভৃতিতে উপোষণ ও নিয়মিত সন্ধ্যাবন্দনাদি করিতে আরম্ভ করেন। এইরূপে চারি বৎসর গত হয়, তখন ধৰ্ম্মতত্ত্ব ভালরূপে অবগত হইতে র্তাহার প্রবল আকাঙক্ষা জন্মে; কিন্তু এক বৎসর কাল উপযুক্ত উপদেষ্টার অনুসন্ধান কবিয়া তিনি বিফল মনোরথ হইলেন এবং নিরাশ চিত্তে নিয়মিতরূপে ভগবানের নাম গ্রহণ করিতে লাগিলেন, ভাবিলেন নাম গ্রহণেব ফলে তাহাব শিক্ষা গুরুব সঙ্গ লাভ ঘটিবে। তাহা সহপাঠী নিতানন্দের জননী মনোমোহিনীর পতির প্রতি অকৃত্রিম ভাব এবং সরল ব্যবহাব তিনি অনেক দিন দেখিয়াছেন। তিনি ভাবিয়া দেখিলেন যে, নিত্যনন্দ জননীর নিষ্ঠাই তাহাকে উদ্দিষ্ট পথে চালাইতে সহায় হইতেছে, ঈদৃশ নিষ্ঠা ব্যতীত ধৰ্ম্ম বিষয়ে অভীষ্ট সিদ্ধির সম্ভাবনা নাই, সুতরাং নিত্যানন্দ জননীর ভাবানুকরণ করিতে হইয়াছিল বলিয়া মাতৃবয়স্কা সেই বর্ষীয়সী রমণীকেই মনে মনে শিক্ষা গুরুরূপে গ্রহণ কবিলেন। একথা কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তি জ্ঞাত হইতে সমর্থ হইল না। দুর্গাপ্রসাদ মনে মনে হরিনাম করেন ও সকলের অজ্ঞাতে শিক্ষাগুরুরূপিনী মনোমোহিনীকে যেরূপেই হউক, প্রত্যহ দুব হইতে একবার দর্শন করিয়া মনে মনে প্রণাম করিয়া আসেন। এদিকে নিজভাব গোপনের জন্য বাসনের কাজ কৰ্ম্মে অধিকতর মনোযোগ দিলেন। এই সমযে দুর্গাপ্রসাদ নিজ হৃদয় অনুসন্ধান করিয়া দেখিলেন যে, তাহার হৃদয়ে তখনও বাসনা রহিয়াছে কাম ক্রোধ স্থান পাইতেছে। এ সকল থাকা পৰ্যন্ত কিছুতেই অগ্রসর হওয়া যায় না। কিন্তু এ সব যাইবে কিরূপে ? নাম, একমাত্র হরিনাম গ্রহণই তিনি এ রোগের মহৌষধ বলিয়া বিবেচনা করিলেন। দুর্গাপ্রসাদ দিবারাত্রি অবিচ্ছেদে নাম লইতে সঙ্কল্প করিলেন। দিবসে কোন বাধা হয় না, কাজ করেন ও মনে মনে নাম লয়েন, কিন্তু রাত্রে নিদ্রার জন্য তাহা হইয়া উঠে না। তখন নিদ্রার সহিত