পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৬৬ আসিয়া সাধুকে খাইতে দিলেন। এইরূপে কিছুদিন অতীত হইলে, সাধু স্বয়ং ভিক্ষায় বহির্গত হন। ভিক্ষারূপে তণ্ডুলে অন্ন প্রস্তুত করিয়া স্বয়ং তিনি গুরুগৃহে লইয়া যাইতেন ও তাহা হইতে গুরু কিছু খাইলে অবশিষ্ট আহার করিতেন। মনোমোহিনীর সাধুকে প্রসাদ প্রদান প্রসঙ্গ লইয়া গ্রামের লোকে হাস্য পরিহাস করিতে আরম্ভ করে। ইহাতে মনোমোহিনী বড়ই বিরক্ত হইলেন, সাধুকে আসিতে নিষেধ করিলেন। পরদিন সাধু অন্ন লইয়া গেলে তিনি স্পর্শ না করিয়া তাহা ফেলিয়া দিলেন। নিৰ্ব্বাক সাধু বিরস বদনে গৃহে চলিয়া আসিলেন ও অনাহারে বসিয়া রহিলেন। তিন দিন চলিয়া গেল, সাধু খাইলেন না, মনোমোহিনীকে লোকে অনুরোধ করিলেও প্রসাদ করিয়া অন্ন দিতে তিনি অস্বীকৃত হইলেন। তাহার পর সাত দিন গেল, সাধু খাইলেন না; আরও সাত দিন অতীত, সাধু জলবিন্দুও গ্রহণ করেন নাই। গ্রামেব লোক ভীত হইল ভাবিল, সাধু অনশনেই প্রাণত্যাগ করিবেন। এই প্রকারে সাধুর মৃত্যু হইলে থানার দারোগা তাহাদিগকেই দায়ী করিবে,—গ্রাম শুদ্ধ লোককে জবাবদেহি হইতে হইবে। সহপাঠী নিত্যানন্দ ও তাহার জ্যেষ্ঠগণের গরজ বেশীই হইল, তখন গ্রামবাসিগণ মনোমোহিনীকে ধরিয়া বসিল এবং তিনিও “না” বলিতে পারিলেন না। তখন হইতে সাধুর মহিমা চারিদিকে ব্যাপ্ত হইয়া পড়িল। কিন্তু দুষ্টব্যক্তি বর্গ তখনও তাহাকে নিৰ্য্যাতন করিত। ইটা চা বাগানের এক কুলি এই সময় তাহাকে গুরুতর প্রহার করিয়াছিল, কিন্তু অচিরে সাধু দ্রোহের ফল স্বরূপ কুষ্ঠরোগগ্রস্ত হয়! দুর্গাপ্রসাদের বাক্য বন্ধ হওয়ার সময় হইতে সেই পৰ্য্যন্ত বার বৎসর গত হয়, বার বৎসর একটি বাক্য উচ্চারণ করিতে পারেন নাই। বার বৎসবের পরে একটি ঘটনা ঘটে, একদিন মনোমোহিনীকে সাধু অধিক পরিমিত অন্ন পাক করিতে ইঙ্গিত করেন, রন্ধন হইলে সেই দিন ১২/১৩ জন লোকের আহারোপযোগী অন্ন একাকী আহার করেন; কিন্তু তাহাতেও সেদিন তাহার ক্ষুধা নিবৃত্ত হয় নাই, পেটে হাত দিয়া এই ভাব দেখাইলেন। ইহার পর একদা গুরুগৃহে হঠাৎ তাহার বাহ্যজ্ঞান লোপ হইয়া মুখ দিয়া অশ্রুতপূৰ্ব্ব শব্দস্রোত বহির্গত হইতে থাকে, যেন দুইটি লোক অজ্ঞাত ভাষায় আলাপ করিতেছে! সাধুর ইচ্ছা নহে, যেন ভিন্ন কোন শক্তির চালনায় কিছুক্ষণ শব্দস্রোত প্রবাহিত হইয়া পুনঃ বন্ধ হইয়া গেল। তখন হইতে সময় সময়ে এইরূপ হইত, কিন্তু স্বেচ্ছায় কিছু বলিবার তখনও সমর্থ্য হয় নাই। এইরূপে বাহ্যবিলোপের সহিত অশ্রুতপূৰ্ব্ব বাক্য বলিবার সময়ে তাহাতে মধ্যে মধ্যে বাঙ্গালা কথাও মুখ হইতে মিশ্রিতভাবে বাহির হইত। এইরূপে বহুদিন পরে, ক্রমে তিনি বাক্য কথন শক্তি পুনঃ প্রাপ্ত হন ও আলাপ করিতে সমর্থ হন। এই সময়েও অভ্যস্ত নাম তালুমূলে সদা ধবনিত হইত, অজঃপর কীৰ্ত্তনে সাধুর নানারূপ অলৌকিক ভাবোদয় হইত। একদিন মহাসহস্ৰবাসী শক্তি উপাসক তারা সুন্দর ভট্টাচাৰ্য্য “জয়দুর্গাশিব” ধ্বনির সহিত সাধু গৃহে উপস্থিত হইলে, সাধুর শিবের আবেশ হইয়াছিল। আর একদিন কতকটি যাত্রী বদনহাটার কালী বাড়ীতে “মানস” আদায় করিতে আসিয়াছিল, তাহারা যে স্থানে ছিল দৈবতঃ দুর্গাপ্রসাদ তথায় গমন করিলে, কীৰ্ত্তন আরম্ভ হয়। তখন র্তাহার গৌরদেহে কাল আভা প্রকটিত হইয়া কালিকার আবেশ হয়। যাত্রিগণ মা মা বলিয়া স্তুতি করিতে আরম্ভ করে, ও সেই স্থানেই “মানসিক” প্রদান করিয়া, কদমহাটায় না গিয়াই ফিরিয়া যায়।