পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭৭ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত প্যারীচরণ দাস প্যারীচরণ দাস সাহু বংশে লাতুর মোনশী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ইনি পূৰ্ব্ব বর্ণিত মোনশী গৌরীচরণের ভ্রাতুষ্পপুত্র। র্তাহার পিতার নাম শ্যামচরণ দাস। প্যারীচরণ যে কবি প্রতিভা লইয়া জন্ম গ্রহণ করেন, বালক-কাল হইতেই তাহার পরিচয় পাওয়া গিয়াছিল। যখন তিনি ৬/৭ বৎসরের বালক তখন বড়ই চঞ্চল ছিলেন, সেই সময় মৈনা গ্রামে তদীয় জ্যৈষ্ঠা সহোদরার গৃহে একদা গিয়াছিলেন, তিনি এবং অন্যান্য বালকদল তথায় একত্রিত হইয়া একদা কোলাহল করাতে, তদীয় সহোদরার বর্ষীয়সী শাশুড়ী গোলমাল থামাইতে ইহাদিগকে ধমক দিলে, প্যারীচরণ সেই প্রবীণাকে নিম্নোক্ত কথা বলিয়া তথা হইতে পলায়ন করেন, যথা ৪— “ভেউ ভেউ করিও না, কথা কহিও কম। নিশ্চয় জানিও বুড়ি আমি তোমার যম।” অন্যান্য বালকেরাও তখনই ইহা কণ্ঠস্থ করিয়া বৃদ্ধাকে ক্ষেপাইয়া তুলিয়াছিল। ইহার বৎসর তিনেক পরে পুনঃ পুনঃ তিনি ভগিনী-গৃহে আগমন করেন। তখন র্তাহার চাঞ্চল্য অনেকটা তিরোহিত হইয়াছে। ঐ সময় বারুনীযোগে সেই গ্রামের অনেকেই, প্রায় পাঁচ ক্রোধ দূরবত্তী মাধবতীর্থে (জলপ্রপাত) গমন করেন, প্যারীচরণ প্রমুখ কয়েকটি বালকও তাহাদের অনুষঙ্গী হইয়াছিল; প্যারীচরণের সহচরেরা তদীয় রচনা শক্তির পরিচয় পাইয়াছিল, এবং মাধব উপস্থিত হইলে, একটি কবিতা বলিতে তাহারা অনুরোধ করিলে তিনি তৎক্ষণাৎ নিম্নলিখিত কবিতা রচনা করিয়া দিয়াছিলেন ৪— “পবর্বত উপরে বসে মাধব সোণার; রূপা গলাইয়া সেই ঢালে দুইধার। শিলারূপে হাড় তার দেখিতেই পাই। ইহাতে যদিও শব্দ বিন্যাসাদি নাই, তথাপি ইহা যে মাধব জলপ্রপাতের একটি সরল ও প্রকৃত বর্ণনা, যাহারা মাধব গিয়াছেন, তাহারাই তাহা বুঝিতে পরিবেন।" প্যারীবাবু যখন পাঠ্যাবস্থায়, তখন জনৈক বন্ধুর মৃত্যু সংবাদ শ্রবণে “মিত্র বিলাপ” নামে একটি সুন্দর কবিতা রচনা করিয়া একমুদ্র পুস্তিকাকারে তাহা প্রকাশ করেন (১৮৭০ খৃঃ), ইহাই তাহার প্রথম পুস্তক। এই সময় তিনি কলিকাতায় ছিলেন। ১৮৬৭ খৃষ্টাব্দে তিনি শ্রীহট্ট মিশন স্কুল হইতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং কলিকাতায় শিক্ষার্থ গমন করেন, কিন্তু তথায় ইণ্ডিয়া আফিসের পররাষ্ট্র বিভাগে একটি কেরাণীগিরি কার্য্য পাওয়ায়, অধিক অধ্যয়নে অগ্রসর হইতে পারেন নাই। কেরাণীর কাৰ্য্যে তিনি যেরূপ কৃতিত্ব প্রদর্শন ৮৬. “মাধব”আদম আইল বা পাথারিয়া পাহাড়ের প্রসিদ্ধ জলপ্রপাত, প্রায় দ্বিশত হস্ত উদ্ধ হইতে দুইটি জলধারা নিম্নে পতিত হইয়া, তাহা একবাটি পাৰ্ব্বত্য স্রোতা রূপে একদিকে চলিয়া যাইতেছেঃ ঐ স্রোতের বুকে অসংখ্য প্রস্তর খণ্ড সমূহ। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ১ম ভাঃ ৯ম অধ্যাযে ইহার বিস্তৃত বিবরণ প্রদত্ত হইযাছে।