পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭৯ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত কেবল যে সরল কবিত্বের ভাণ্ডাব তাহা নহে, ইহাতে তদীয় স্বদেশ বাৎসল্য, পরিজন প্রীতি এবং মাজ্জিত নীতির বহুল পরিচয় পাওয়া যায়। এই গ্ৰন্থখানাও তাহার পাঠ্যবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে লিখিত এবং ১৮৭৬ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। তদীয় “ভারতেশ্বরী’ কাব্য স্বগীয় মহারাণী ভিক্টোরিয়ার “এম্প্রেস” উপাধি গ্রহণ উপলক্ষে লিখিত হয়। তৎকৃত পদ্যপুস্তক প্রথম ভাগ (প্রথম প্রকাশ ১৮৭৬ খৃঃ) বহুকাল এতদঞ্চলের পাঠশালা সমূহের পাঠ্য পুস্তক ছিল। বর্ণশিক্ষাদানের উপদেশ (শিক্ষকদের) নামক শিশুদের উপযোগী এক পুস্তিকা মৃত্যুর কিছু পূৰ্ব্বে তিনি মুদ্রিত করিয়া ছিলেন। উহা প্রচারিত হয় নাই, গৃহদানে সমুদয় নষ্ট হইয়া গিয়াছিল। তিনি শেষাবস্থায় বহুমূত্র রোগে পীড়িত হইয়া পড়িয়াছিলেন, এই সময়ে শিলং সেক্রেটারিয়েটে তিনি একটি কৰ্ম্ম প্রাপ্ত হইয়াছিলেন কিন্তু রোগের তাড়নায় শীঘ্রই কাৰ্য্যত্যাগ করিয়া পুনঃ শ্রীহট্টে প্রত্যাগমন করিতে বাধ্য হন, সেই রোগেই তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। শ্রীহট্টের ঘাটুগান প্রথমে উপাদেয় ছিল, দুঃখের বিষয় পরে ইহা বিকৃত হইয়া পড়ে; শ্রীহট্ট শহরে এক সময় ঘাটুর নাচের অত্যন্ত প্রাবল্য ছিল, ঘাটুর ছোকরাদের তখন অত্যন্ত আদর ছিল, উহারা “রাজভোগে” আহার পাইত, রাজ কুমারের ন্যায় সুবেশ ধরিয়া থাকিত, ইহাদিগকে নৰ্ত্তকী বেশে আসরে আসিয়া নাচিতে ও রাধা কৃষ্ণ লীলাত্ম্যক সঙ্গীত গাইতে হইত। প্যারীবাবুর চক্ষে ইহা বড়ই বিসদৃশ বোধ হইত, এই জন্য তিনি উদ্যোগী হইয়া, ধৰ্ম্মপুর নিবাসী তদীয় বন্ধু কৃষ্ণচরণ দাসের সহায়তায়, এই কুপ্রথাকে শহর হইতে চির বিদায় দিয়াছিলেন। ইহাতে সামান্য বেগ পাইতে হয় নাই, বহু ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাহাদিগকে ঘোরতর যুদ্ধ করিতে হইয়াছিল। শহরে সৰ্ব্বশেষ ঘাটু নাচ হওয়ার পরদিন ছোকরাটিকে একটি গর্দভের উপর উলটা চড়াইয়া শহর হতে বিদায দেওয়া হয; বলা বাহুল্য যে সেই কুপ্রথার প্রতি ঘৃণা প্রকাশই এই অনুষ্ঠান করা হয়। প্যারীচরণ দাস এই প্যারীচরণ ব্রাহ্মণ ছিলেন; নিবাস শ্রীহট্টের পুটিজুরী। নামের পরে তিনি “দাস” খ্যাতি ব্যবহার করিতেন। তাহার জীবন যে কিরূপ দৈন্যময় হইয়াছিল, ইহাতেই তাহা বুঝা যায়। শ্ৰীমহাপ্রভুর ভক্তগণের মধ্যে অনেক ব্রাহ্মণ সন্তানকে দাস উপাধিতে আত্মপরিচয় প্রদান করিতে দেখা যায়, তাহারা আপনাকে নিতান্ত হীন মনে করিতেন; প্যারীচরণের দাসোপাধি ধারণ সেই ভাব জাত। 曙 প্যারীচরণের জীবন কাহিনী অল্পই জ্ঞাত হইয়াছি, তিনি অবিবাহিতাবস্থায় বৃন্দাবন গমন করেন এবং চির কৌমাৰ্য্য ব্রত পালন করেন। তাহার অভিপ্রায় অবগত তদীয় কোন কোন আত্মীয় তাহাকে তথা হইতে ফিরাইয়া আনিয়া বিবাহ দিতে বিশেষ চেষ্টা করেন, কিন্তু তাহা বিফল হইয়াছিল। যাহার আকর্ষণে তিনি গৃহত্যাগ করিয়া গিয়াছিলেন, সামান্য অস্থায়ী কল্পিত সুখের আশায় তিনি তাহা পরিত্যাগ প্রয়াসী হন নাই। র্তাহার জ্ঞান ও বৈরাগ্য অতুল্য ছিল, ভক্তি অসাধারণ ছিল। ভগবৎ মহিমা বর্ণন করিতে তাহার মুখে বড়ই মধুর শুনাইত। তিনি বৃন্দাবনে রাধাকুণ্ডতীরে বাস করিতেন। নিৰ্জ্জন রাধাকুণ্ডতীর ভজনের পক্ষে অতি উপযোগী, সেই স্থানেই বিগত ১৩০৬ সালে তিনি দেহরক্ষা করেন।