পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৮০ প্রদ্যুম্ন মিশ্র প্রদ্যুম্ন মিশ্র শ্রীহট্টের ঢাকা দক্ষিণ নিবাসী ছিলেন, ইহার পিতার নাম কংসারি মিশ্র, ইনি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জ্যৈষ্ঠতাত পুত্র। প্রদ্যুম্ন মিশ্র একজন শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত ছিলেন, “শূদ্রাহ্নিকাচার” নামক গ্রন্থের রচিয়তা এই প্রদ্যুম্ন মিশ্র। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যখন শ্রীহট্টের ঢাকা দক্ষিণে আগমন করিয়া ছিলেন, তখন তাঁহার সহিত ইহার সম্মিলন ঘটে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাক্য-সুধা শ্রবণে তাঁহার বৈরাগ্য জন্মে, এবং তিনি সংসারধর্ম্মে জলাঞ্জলি দিয়া সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। ঐ সময়ে পূর্ব্ববঙ্গের বহুব্যক্তি নীলাচলে গিয়াছিলেন, চৈতন্য ভাগবতে লিখিত আছে :— “সহস্র সহস্র লোক না জানি কোথার। জগন্নাথ দেখি আইল প্রবু দেখিবার। কেহ বা ত্রিপুরা কেহ চাটি গ্রাম বাসী। শ্রীহট্টীয়া লোক কেহ, কেহ বঙ্গদেশী।” প্রদ্যুম্ন মিশ্র এই যাত্রিদল সহ নীলাচলে উপস্থিত হন। সচরাচর শ্রীমহাপ্রভুকে ভক্তবর্গ সাক্ষাৎ ভাবে কোন প্রশ্ন করিতেন না; এই সরল বিদেশী ব্যক্তি সেই নিয়ম রাখিয়া চলেন নাই। ভক্তবর্গ সম্ভবতঃ সন্ত্রমবশতঃ জিজ্ঞাসা করিতে সঙ্কোচিত হইতেন; ইনি কতকটা আত্মীয় গৌরবেও হইতে পারে, নীলাচলে গিয়া শ্রীমহাপ্রভুর কাছে কৃষ্ণলীলা রহস্য শ্রবণ করিতে চাহেন। শ্রীমহাপ্রভুর স্বয়ং তাহাকে কিছু না বলিয়া, নীলাচলের অন্যতম প্রধান পুরুষ রায় রামানন্দের নিকট প্রেরণ করেন। বিদ্যানগরের রায় রামানন্দ রায়কে নীলাচলের কে না জানিত; রামানন্দ নীলাচলের অধিপতি প্রতাপরুদ্র গজপতির প্রতিনিধি রূপে বিদ্যানগরের শাসনকর্ত্তা ছিলেন; পক্ষান্তরে তিনি একজন প্রধান ভক্ত ও রসতত্ত্ববেত্তা ছিলেন; কিন্তু প্রদ্যুম্ন মিশ্র নতুন লোক ছিলেন বলিয়া তাহার আচার ব্যবহার সম্বন্ধে অজ্ঞ ছিলেন। শ্রীমহাপ্রভুর বাক্যে তিনি রামানন্দের গৃহে গিয়া, তাহার কোন কোন ব্যবহারের কথা শুনিয়া তৎপ্রতি তাঁহার শ্রদ্ধার হস্বতা জন্মে এবং তিনি কৃষ্ণলীলা রহস্য-কথা না শুনিয়াই ফিরিয়া আসেন; তখন শ্রীমহাপ্রভু রামানন্দের আচার ব্যবহার ও মহিমার কথা তাহার কাছে স্পষ্ট করিয়া বলিয়া তদীয় ভ্রান্তি দূর করেন ও পুনর্ব্বার তাহাকে তৎসদনে প্রেরণ করেন। এবার প্রদ্যুম্নমিশ্র রামানন্দ রায়ের মুখে কৃষ্ণকথা শুনিয়া পরমসুখী হইয়া আসিলেন। সন্ন্যাস গ্রহণের পরে শ্রীমহাপ্রভু শ্রীহট্টের ঢাকাদক্ষিণে পিতামহী দর্শনের জন্য আগমন করিয়াছিলেন। এই ঘটনা উপলক্ষে প্রদ্যুম্নশ্রী “শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যোদয়াবলী” নামে একখানা গ্রন্থ সংস্কৃতে রচনা করুন। এই গ্রন্থ শ্রীকৃষ্ণচৈতনা মহাপ্রভুর আদেশ গ্রহণ পূর্ব্বক তিনি প্রণয়ন করিয়াছিলেন। তিনি উপেন্দ্রমিশ্র বংশোদ্ভব, গ্রন্থ সমাপ্তিতে শ্লাঘার সহিত একথাও লিখিয়াছেন। শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে প্রদ্যুম্নমিশ্রের কৃষ্ণকথা-শ্রবণ বিবরণ বিস্তারিত ভাবে লিপিবদ্ধ আছে, চরিতামৃতের অন্ত্যখণ্ডে আর একজন প্রদ্যুম্ন মিশ্রের নাম পাওয়া যায়, তিনি এই সন্ন্যাসী প্রদ্যুম্ন হইতে ভিন্ন ব্যক্তি, তিনি গৃহস্থ ও নীলাচলবাসী ছিলেন। নীলাচলের রায় রামানন্দ তাহার সুপরিচিত ছিলেন।