পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৮৬ একদা বাণীর এক শিষ্য কালীপূজার আয়োজন করেন। তাহার নিতান্ত ইচ্ছা হইল, বাণীকে দিয়া পূজা করাইবেন। কিন্তু একথা পূৰ্ব্বে বাণীকে বলা হয় নাই। যেদিন পূজা হইবে সেদিনই ইহা মনে হইল এবং তাহার প্রাণ বড়ই আকুল হইয়া উঠিল। সিদ্ধপুরুষ শিষ্যের আকুলতা নিজ প্রাণে অনুভব করিতে পারিলেন, তাহার মনও চঞ্চল হইয়া উঠিল ও অনতিবিলম্বে তিনি শিষ্যালয়ে উপনীত হইলেন; যথা— “দৈববলে জানিয়া সেবকের মনোরথ । চারিদণ্ডে গেলা এক দিবসের পথ। শিষ্যালয়ে উত্তরিয়া কল্যাণে তাহার। কালীপূজা করিয়া দেখাইলা চমৎকার। নভুত নভবিষ্যতি—জীবের অসাধ্য। প্রতিমাকে ভক্ষাইল পূজার নৈবেদ্য।”—চরিত্র চিন্তারত্ব। সিদ্ধপুরুষ বাণীকিশোর কি শক্তিবলে একদিবসের পথ চারিদণ্ড সময়ের মধ্যে গিয়াছিলেন, তাহার আলোচনা নিম্প্রয়োজন। ঠাকুর দুল্লভের জীবনী প্রসঙ্গে যথার্থই বলা হইয়াছে “আমরা প্রকৃত মানুষ, তাহা কি রূপে বুঝিব?” আর শিশু প্রকৃতি সরল ভক্তের আব্দার রক্ষার্থ চিন্ময়ী শক্তি, জড় প্রতিমার বিকাশ প্রাপ্ত হয় কিনা, এবং সেই প্রতিমা নৈবেদ্য গ্রহণ করিতে পাবে কি না, তাহাও আমবা সংসারের মায়ামোহিত মানুষ কিরূপে বুঝিব? কিন্তু এই রূপ অদ্ভুতকথা বিশ্বাসী লেখকগণের গ্রন্থপত্রে আরও দেখিতে পাওয়া যায। ভক্তমান প্রভৃতি বৈষ্ণব গ্রন্থেও এরূপ বৃত্তান্ত প্রাপ্ত হওয়া যায । দয়াবশতঃ দ্বিতীয়বার বিবাহ শিষ্যালয় হইতে বাণী অপব এক ব্রাহ্মণ গৃহে উপনীত হইলেন। এই ব্যক্তির এক কুন্ডাকন্যা ছিল কুক্ত বলিয়া তাহাকে কেহই বিবাহ করেন নাই। কন্যাটি বয়স্থা হইয়া পড়িয়াছিল, পিতা তনয়ার দুঃখে নিতান্ত দুঃখিত ছিলেন, তাহাকে দুঃখিত দেখিয়া বাণী এই কন্যাকে বিবাহের জন্য প্রার্থন করিলেন। শিষ্য এতৎবাক্য শ্রবণে পরম আহ্লাদ সহকারে গুরুকে কন্যা সম্প্রদান করিলেন। এই কন্যার গর্ভে তাহার দ্বিতীয় পুত্র রাজেন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন। রাজেন্দ্র যখন উপযুক্ত হইয়াছেন, সেই সময়ে অকস্মাৎ একদিন পাগলশঙ্কর বাণীগৃহে উপস্থিত হইলেন। দুইজনে বহু কথাবাৰ্ত্ত হইল; পাগলশঙ্কর বিদায় লইয়া পুনঃ তীর্থ যাত্রা করিলেন; বহুতীথ দর্শনান্তর কুরুক্ষেত্রে গেলে তাহার দেহপাত হইল। সিদ্ধপুরুষ বাণীর নিৰ্ম্মল হৃদয়-দপণে ঐ ঘটনার ছায়াপাত হইল। ইহা তাহাব জ্ঞানগোচর হইলে, আর গৃহে থাকিতে র্তাহার ইচ্ছ রহিল না, তিনি নিজ পুত্রদ্বয়কে ডাকিয়া মনোভাব ব্যক্ত করিলেন ও এক মহামমোৎসবের আয়োজন করিতে বলিলেন। পিতৃবাক্য শ্রবণে পুত্রেরা অত্যন্ত অধীর হইয়া পড়িলে তিনি র্তাহাদিগকে আশ্বাস দিয়া বলিলেন— “আমি সময়ে সময়ে তোমাদিগকে দেখা দিব, তোমরা হরিপদে মনস্থির রাখিয়া স্বচ্ছন্দে সংসারযাত্র নিববাহ কর।”