পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮৭ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত অদৃশ্য হওয়ার কথা বাণীর অভিপ্রায়মত মহা মহোৎসবের আয়োজন হইল; অবিরত কীৰ্ত্তন চলিতে লাগিল, যখন কীৰ্ত্তনে সকলে মত্ত, তখন হঠাৎ ঠাকুরবাণী অদৃশ্য হইলেন, তাহাকে আর পাওয়া গেল না। পুত্ৰগণ পিতার মৃত্যু কল্পনা করিয়া শোকাভিভূত হইলেন। সেই রাত্রে রাজেন্দ্র স্বপ্নে দেখিলেন, যেন পিতা বলিতেছেন, “রাজেন্দ্ৰ ! ভ্রান্তধারণা ছাড়, আমি মবি নাই, আমার শ্রাদ্ধ করিও না। তবে লোকনিন্দ পরিহারের জন্য কিছু করা কৰ্ত্তব্য, আমার উদ্দেশ্যে কিছু চিড়া, গুড়, কদলী, দধি ও দুগ্ধ দিও। এসব দ্রব্য গোপালের কাছে ভোগ দিয়া প্রসাদস্বরূপ আমাকে প্রদান করিও; ইহাই যথেষ্ট।” পুত্ৰগণ পিতার শ্রাদ্ধ না করিয়া, পিতার উদ্দেশ্যে গোপালের প্রসাদ মাত্র নিবেদন করিয়া দিলেন। কালক্রমে রাজেন্দ্রের হরিরাম নামে একটী পুত্র জাত হয়, জন্মের ৬ষ্ঠ দিনে ষষ্ঠীপূজা উপলক্ষে যখন আত্মীয় স্বজন সকলে সমবেত হইয়াছেন, তখন তাহারা দেখিতে পাইলেন যে এক যোগীপুরুষ ধীরে ধীরে আগমন করিতেছেন। যোগী আর কেহ নহেন—ঠাকুরবাণী। পুত্রেরা এবং অন্যান্য সকলে বহুকাল পরে তাহাকে পাইয়া পরম আনন্দে বসিতে আসন দিলেন; কিন্তু তিনি না বসিয়া সূতিকালয়ে গেলেন। তাহার ইঙ্গিতে বধূ কর্তৃক শিশু তৎসমীপে আনীত হইলে, তিনি শিশুর মাথায় দক্ষিণ পদাঙ্গুষ্ঠ স্থাপন করিযা হঠাৎ অদৃশ্য হইয়া গেলেন; কোথায় গেলেন, আর কেহ খুজিয়া পাইল না। এই হরিরামের পৌত্র, ঠাকুরবাণীর বৃদ্ধ প্রপৌত্র জয়গোবিন্দের মনে হইয়াছিল যে ঠাকুরবাণীর শ্ৰাদ্ধাদি হয় নাই; ইহা শাস্ত্রসঙ্গত নহে এবং তদ্বংশীয়গণের প্রত্যবায় স্বরূপ। এই দীর্ঘকাল মধ্যে অবশ্যই ঠাকুরবাণীর মৃত্যু হইয়া থাকিবে, অতএব গয়াতে গিয়া তাহার উদ্দেশ্যে পিণ্ডদান করা কৰ্ত্তব্য। তিনি মনে মনে এইবাপ ভাবিয়া, গয়াতে যাইবেন স্থির করিলেন। প্রকাশ্যে গয়ার কথা কাহাকেও না বলিয়া তীর্থে যাইবেন বলিয়া প্রকাশ করিলেন। এতৎশ্রবণে তিনজন শিষ্য র্তাহার সহিত সাক্ষাৎ করার মানসে পুড়াইন্ধা নামক পাহাড়তলির পথে আসিতে আসিতে পথভ্রমে বডই বিপদগ্রস্ত হইলেন; এমন সময়ে তাহারা দেখিতে পাইলেন যে, জটা বন্ধলধারী এক ঋষি বন হইতে বহির্গত হইয়া তাহদের সম্মুখীন হইতেছেন, পথিকত্ৰয় বিস্মিত ও কিঞ্চিৎ ভীত হইয়া স্তম্ভিতপ্রায় হইলেন; তাহদের গতিশক্তি যেন রহিত হইয়া আসিল, ও তাহারা ঋষির দিকে চাহিয়া দাড়াইয়া রহিলেন। তাপসের হাতে বিম্বফল (মতান্তরে দাড়িম্বফল); তিনি পথিকদের নিকটে আসিয়া সহস্যে বলিলেন “পথভ্রষ্ট পথিক, তোমাদের মঙ্গল হউক!” তারপরে দূরে একটি পথের রেখা দেখাইয়া বলিলেন--"এই পথে তোমরা দিনারপুরে যাইতে পরিবে।” হাতের ফলটি একজনকে দিয়া বলিলেন "এই ফলটি জয়গোবিন্দকে দিও; বলিও বাণী মরে নাই, গয়াতে তাহার পিণ্ড দেওয়া নিম্প্রয়োজন।” এই বলিয়া মহাপুরুষ পুনঃ পৰ্ব্বতে আরোহণ করিলেন। তাপস চলিয়া গেলে পথিকত্ৰয় তৎপ্রদর্শিত পথে প্রফুল্লচিত্তে প্রস্থানকরতঃ অল্পদুরে গিয়াই পরিচিত পন্থা প্রাপ্ত হইয়া দিনারপুরে পৌছিলেন। র্তাহারা আপনাদের গুরু জয়গোবিন্দকে ঋষিদত্ত ফল প্রদানান্তর তৎকথিত কথাগুলি অবিকল বলিলেন। শুনিয়া জয়গোবিন্দ গয়া গমনের সঙ্কল্প পরিত্যাগ করিলেন। এই জটাবন্ধলধারী ঋষি যে ঠাকুরবাণী ব্যতীত আর কেহ নহেন, তাহা সকলেই বুঝিল । জয়গোবিন্দ আপন মনে গয়া-গমনের যে সঙ্কল্প করিয়াচিলেন, তাহা সেই সময়ই তাহার