পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯৫ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পরিচয় প্রদান করিলেন। দেশের লোকেরা জানিতে পারিল যে ভৌলা জ্ঞানী ও পীর হইয়া প্রত্যাগমন করিয়াছেন। তখন গ্রামের অনেকেই উপদেশপ্রাপ্তি প্রত্যাশায় প্রত্যহ তাহার কাছে উপস্থিত হইত, তিনিও তাহাদিগকে শিক্ষা দিতেন। এই রূপে তথায় এক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হইল। ভৌলা কাহাকেও কোনরূপ অদ্ভূত কাৰ্য দেখাইতেন না, বরং তাহা গোপন রাখিতে সচেষ্টা ছিলেন; কিন্তু অবস্থা বিশেষে তাহা সময় সময় প্রকটিত হইয়া পড়িত। তাহার মাসী প্রত্যহ অগ্নিসেবন করিতেন, কাজেই তাহার কাঠের খুব প্রয়োজন ছিল। মাসী তাহাকে কাঠের অভাব জানাইলে, একদা রাত্রিতে ৬/৭ হাত বেষ্টনি বিশিষ্ট একটা গাছ কোন অদৃশ্য শক্তি সাহায্যে আনাইয়া রাখিয়া দিয়াছিলেন। এই ঘটনার পর আর তিনি আত্ম-গোপন করিতে সমর্থ হন নাই। শ্রীহট্ট শহরের এক সন্ত্রান্ত পরিবারের একটি বালিকা বয়ঃপ্রাপ্ত হইলেও বস্ত্র পরিধান করিতেন না; বলপ্রয়োগেও কিছু হয় নাই; ” বস্ত্র পরিধান করিলে তাহার প্রাণ যেন আকুলই হইয়া উঠিত, ছটফট করিত। তিনি অষ্টাদশ বৎসর বয়স পর্যন্ত একেবারে উলঙ্গিনী রহিয়াছিলেন। তাহার বাসের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা করা হইয়াছিল, একটী সুন্দর গৃহে তাহাকে একাকিনী থাকিতে দেওয়া হয়; সেই গৃহে তাহার জনৈকা সখী ও দাসী ব্যতীত কেহই যাইতে পারিত না, সে গৃহ সৰ্ব্বদা চাবিবন্ধ থাকিত। গৃহস্বামী জমিদার মহাশয় কোনক্রমে ভৌলার গুণের কথা শুনিয়া তৎকত্ত্বক কোন দৈবপ্রতিকার দ্বারা কন্যার এই বস্ত্রবিদ্বেষরোগ আরোগ্য হয় কি না, দেখিতে ইহাকে পরম সমাদরে বাড়ীতে নেন। কিন্তু ভৌলাকে কিছুই করিতে হয় নাই, তাহার উপস্থিতি মাত্র আবদ্ধ গৃহের ভিতর হইতে স্ত্রীলোকটি পরিধেয় বস্ত্রের জন্য প্রার্থনা করিতে থাকেন, তৎক্ষণাৎ তাহাকে বস্ত্র দেওয়া হয় এবং তিনি স্বয়ং তাহা পরিধান করেন। তদবধি উহার বস্ত্র-বিদ্বেষ বিদূরীতা হয়, এবং তৎপর তাহার বিবাহ হয়। শাহ ভৌলার শিষ্য পিয়ারশাহ, তাহার শিষ্য নাইওর শাহ, তৎশিষ্য লাল শাহ, ইহার পুত্রগণ বৰ্ত্তমান আছেন। মথুরানাথ ভট্টাচাৰ্য্য হবিগঞ্জ সবডিভিসনের অন্তর্গত বাজুকা গ্রামে মথুরানাথের জন্ম, ইহার পিতামহ বিবাহ সূত্রে একটি বিষয়ের অধিকারী হইয়া বাণিয়াচঙ্গের জাতুকৰ্ণ পল্লী হইতে রাজুকায় গিয়া বাস করেন। মথুরানাথ শৈশবে অভিভাবক বিহীন হইয়া পড়িয়াছিলেন; ইহার বুদ্ধি অতি প্রখর ছিল, মাত্র এক বৎসর কাল ব্যাকরণ অধ্যয়ন করিয়া তাহাতে বুৎপত্তি লাভ করেন। এতদ্ভিন্ন কি স্মৃতি, কি সাহিত্য, কি জ্যোতিষ, যে কোন বিষয়ের আলোচনা করিতেন; অতি অল্পকালেই তাহাতে র্তাহার বিশেষ অধিকার জন্মিত, এইজন্য তাহার স্বজ্ঞাতি-খুল্লতাত প্রসিদ্ধ শিবচন্দ্র ন্যায়পঞ্চানন তাহাকে পুত্রাধিক স্নেহ করিতেন। ১০৩ নানা কারণে এই জমিদাব তনয়ার পরিচয় এস্থলে প্রদত্ত হইল না। এইরূপ ঘটনা অঘটনীয় নহে, আমরা দেখিয়াছি, জফবগড় নিবাসী একটি বালক উলঙ্গ থাকিত, ২৫ বৎসর বযস পর্যন্ত সে বস্তু পবিধান করে নাই; পবিধান করাইযা দিলে তৎক্ষণাৎ খুলিয়া লইত। সে একখানা কাপড় (সাধারণতঃ যোগীয়ানা গিলাপ) গায়ে দিয়া থাকিত, উহা উপীবতাকারে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত পড়িত ও তাহাতেই লজ্জা নিবারণ হইত। লোকটি এখনও জীবিত আছে কিন্তু এইক্ষণে যন্ত্র ব্যবহার কবে। পূৰ্ব্বোত্ত বালিকার বস্ত্রবিদ্বেষ ইহার অপেক্ষ অধিক ছিল।