পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১০৬ নিবাসী শ্রীযুক্ত কান্তিচন্দ্র রাঢ়ী নামক জনৈক ব্যক্তি রচিত “নবদ্বীপমহিমা” গ্রন্থে লিখিত হইয়াছেন,— “রঘুনন্দের পিতার নাম হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ভট্টাচাৰ্য্য। তিনিও নবদ্বীপে একজন স্মাৰ্ত্ত পণ্ডিত ছিলেন। হরিহরের দুই পুত্র, জ্যেষ্ঠের নাম রঘুনন্দন, কনিষ্ঠের নাম যদুনন্দন। যদুনন্দন বাল্যকালেই কালগ্রাসে পতিত হন। হরিহর কুলীন ছিলেন। কুলীনদের মধ্যে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ তৎকালে অতিশয় প্রবল ছিল। কিন্ত হরিহর পুত্রের কাব্যাদি পাঠ শেষ হইলে অন্ততঃ ২০ বৎসর বয়সে নবদ্বীপেই পুত্রের বিবাহ দেন। এই বিবাহের পরই রঘুনন্দন পিতার নিকট স্মৃতি অধ্যয়নে প্রবৃত্ত হন। ইত্যাদি।” গ্রন্থকার কোথা হইতে এই সকল কাহিনী সংগ্ৰহ করিয়াছেন, তাহার কোন ঠিকানা পাওয়া যায় না। তদীয় গ্রন্থের ভূমিকায় লিখা আছে, “আমি নবদ্বীপ নিবাসী।” বাল্যকাল হইতে নবদ্বীপের মহাজনদিগের সম্বন্ধে স্থানীয় প্রবাদ যতদূর সঙ্গত বোধ হয়, তাহা লিপিবদ্ধ করিবার ইচ্ছা হইয়াছে। ইতিহাস লেখা আমার উদ্দেশ্য নহে।” ইহাতে এইমাত্র প্রতীত হইতেছে যে রঘুনন্দনের সম্পর্কে উপরিভাগে যাহা উদ্ধৃত হইয়াছে, তাহার ঐতিহাসিক মূল্য বড় বেশী নয়।” “মহামহোপাধ্যায় পূজ্যপাদ শ্রীযুক্ত চন্দ্রকান্ত তর্কালঙ্কার মহাশয়* তদীয় “উদ্বাহ চন্দ্রালোকের” “বিজ্ঞাপন” প্রবন্ধে লিখিয়াছেন “পূজ্যপাদ মহামহোপাধ্যায় রঘুনন্দন ভট্টাচাৰ্য বন্দ্যঘটীর বংশং পূবববঙ্গ প্রদেশঞ্জ জন্মনালস্কৃতন্তঃ। অদ্যাপি পূৰ্ব্ববঙ্গপ্রদেশে তেষাং বংশ্যাঃ সন্তি। পরতন্তু তেষাং নিরাসো নবদ্বীপে জাত ইতি কিংবদন্তী।’ ইত্যাদি।” “শৈশবে পাঠ্যাবস্থায় একদা দৈববাণীর ন্যায় শুনিয়াছিলাম, রঘুনাথের জন্মভূমির শ্রীহট্ট জিলার হবিগঞ্জ উপরিভাগেস্থ নবিগঞ্জ থানার নিকটবৰ্ত্তী মান্দারকন্দি নামক গ্রাম। মান্দারকন্দি গ্রামটিতে গিয়া খুঁজ করা হইয়াছিল। কিন্তু কেহ কিছু বলিতে পারিল না। কিন্তু ইহাতে আমার বাল্যকাললব্ধ ধারণাটি দূর হইল না।” জন্মভূমিতে কেহ তাহাব সংবাদ রাখিবে এইদেশে এমনটি আশা করা বৃথা। তাহার বংশীয়েরা, পূজনীয় তর্কালঙ্কার মহাশয় কথিত শ্রীহট্টের তথা পূৰ্ব্ববঙ্গের অন্যত্র অবশ্যই আছেন, ইহাতে অসম্ভাব্যতা কিছুই নাই বরং প্রতিপোষক আর একটি উদাহরণ শ্রীহট্ট হইতেই দিতেছি।” CG ত প্রভু শ্রীহট্টের লাউড় রাজ্যে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন সেও আজ পাঁচ শতাব্দীর কথা। আজ যদি অদ্বৈত প্রকাশ প্রভৃতি প্রামাণ্য গ্রন্থে এই কথাটির উল্লেখ না থাকিত, তবে কি শ্রীহট্টভূমি শ্রীমদদ্বৈতাচার্যের জন্মস্থান বলিয়া গৌরব করিতে পারিত?” “তবে কি শ্রীহট্ট রঘুনন্দনের জন্মভূমি নয় ? মান্দারকন্দি গ্রাম সম্বন্ধে প্রমাণ পাওয়া দুর্ঘট হইতে পারে, কিন্তু শ্রীহট্টই যে রঘুনন্দনের জন্মস্থান, এই বিষয়ে সন্দেহ করিবার কোনও কারণ দেখা যায় না। শ্রীহট্ট কিছুদিন আসামভূক্ত হইয়া থাকিলেও ইহা পূৰ্ব্ববঙ্গেরই একটা প্রকৃষ্ট অংশ; সুতরাং আমার এই ধারণা পূজ্যপাদ তর্কালঙ্ককার মহাশয়ের মতদ্বারা সম্পূর্ণ সমর্থিত হইতেছে।” ১১৫. এই প্রবন্ধটা শ্রদ্ধাস্পদ শ্রীযুক্ত পদ্মনাথ ভট্টাচাৰ্য বিদ্যাবিনোদ এম এ, মহোদয কর্তৃক ১৩১৫ সালের অগ্রহায়ণ সংখ্যা নব্যভারতে প্রকাশিত হয়, সেই প্রবন্ধ হইতে কিযোদংশ এ স্থলে উদ্ধৃত হইল। যখন প্রবন্ধটা প্রকাশিত হয় তৎকালে তর্কালঙ্কাব মহাশয জীবিত ছিলেন এবং নব্যভারতে প্রবন্ধ দিলাব পূৰ্ব্বে লেখক কর্তৃক তাহাকে শুনান হইয়াছিল।