পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১৩ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত কথায় তাহা নিবর্বাপিত হইবার নহে। তিনি রমণীকে অনুনয় করিতে লাগিলেন এবং তদীয় স্থৈৰ্য ও পবিত্রতা প্রভৃতি দর্শনে মনে মনে ধন্যবাদ দিতে লাগিলেন। প্রভাতে রঘুনাথের বিদায় কালে গৃহস্বামী আগন্তুকের সঙ্গে এক বোঝা পুথি দেখিয়া জিজ্ঞাসিলেন যে, তিনি এত পুথি লইয়া কোথায় যাইতেছেন। এ প্রশ্নে রঘুনাথের বড়ই সুবিধা হইল, তিনি উত্তর করিলেন যে, তিনি বিদ্যার্থী, থাকিবার স্থান অন্বেষণ করিতেছেন, গৃহস্বামী স্থান দিলে এখানে থাকিয়াই এসব আলোচনা করিবেন। সরল গৃহস্থ স্বীকৃত হইলেন, ও রঘুনাথ তথায় অবস্থিতি করিতে লাগিলেন । কিছুদিন পরে বম্মানিবাসী শ্যামকিশোর ঘোষ সেই গৃহস্থের বাড়ীতে আসিলেন। শ্যামকিশোর সহজধৰ্ম্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, " তিনি রঘুনাথেব ভাবভঙ্গিতে বুঝিতে পারিলেন যে, গৃহস্থ তনয়াতে তিনি আকৃষ্ট। শ্যামকিশোর তখন নিৰ্জ্জনে রঘুনাথকে বলিলেন “ঠাকুর, যে বিষ প্রাণনাশক, সদ্বৈদ্যের ব্যবস্থায় তাহা অমৃত সদৃশ হিতপ্রদ হইয়া থাকে, তুমি যে বাসনানলে পুড়িতেছ, সুপথে চালিত হইলে তাহাও শান্তিপ্রদ হইতে পারে; যদি আত্মহিত কামনা কর, তবে সদ্বৈদ্যের আশ্রয় গ্রহণ কর, দুলালীতে বৈদ্যরাজ তিলকচন্দ্রের* কাছে গেলে সুবব্যস্থা পাইবে।” রঘুনাথ বীরাচারী ছিলেন, শ্যামকিশোর ঘোষের নিকট সহজধৰ্ম্মের কিছু কিছু তথ্য অবগত হইয়া, তাহার ভালই বোধ হইল; উভয় মতে অনেকটা সাদৃশ্যও দেখিতে পাইলেন, কাজেই তিনি কালবিলম্ব না করিয়া দুলালীতে চলিলেন। শ্যামকিশোর ঘোষ তখন সেই গৃহস্থকে নানারূপ প্রবোধ বাক্য বলিয়া কন্যাসহ দুলালীতে পাঠাইলেন। গৃহস্থ শ্যামকিশোরকে শ্রদ্ধার চক্ষে দেখিতেন। দুলালীতে তিলকরাম গুপ্তের সহিত রঘুনাথের দেখা ও কথাবাৰ্ত্ত হইল, রঘুনাথ তাহার নিকট সহজধৰ্ম্মে দীক্ষিত হইলেন, সেই বিধবাই তাহার সাধনের সহায়স্বরূপ নিৰ্দ্দেশিত হইলেন। ২৬ ইতিপূৰ্ব্বে তিলকবাম শিরোমণি দুলালীর নারায়ণ নামক জনৈক ব্রাহ্মণকে শিষ্য করিয়াছিলেন, এক্ষণে মহাবংশজাত রঘুনাথকে শিষ্য করায় ব্রাহ্মণ্যসমাজে একটা আন্দোলন উপস্থিত হইল। ব্রাহ্মণবর্গ ইটার প্রসিদ্ধ পণ্ডিত “সাৰ্ব্বভৌমকে” মুখপাত্র রূপে লইয়া বিচার করিতে উপস্থিত হইলেন। কিন্তু তিলকরামের সহিত তাহাদের বিচার হইল না, রঘুনাথের কূটকৌশলে দ্বারদেশ হইতেই তাহাদিগকে একরূপ পরাজয় পাইয়া চলিয়া যাইতে হয়। "অতঃপর রঘুনাথ ঢেউপাশাতে প্রত্যাগমন করেন; আর তিনি গৃহে না গিয়া সেই শূদ্র তনয়াকে লইয়া সহজভজনে প্রবৃত্ত হইলেন। দেখিতে দেখিতে র্তাহার দল বদ্ধিত হইতে লাগিল। দেশের লোক রঘুনাথের ঈদৃশ ব্যবহারের ব্যথিত—কেহ কেহ উত্তেজিত হইয়া উঠিল। মনুতীরবর্তী দুৰ্ল্লভপুরের প্রাণকৃষ্ণ বসু তন্মধ্যে একজন। প্রাণকৃষ্ণ যুক্তি ও শাস্ত্রানুসারে তাহার ব্যবহারের অবৈধতা ১২৪. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩য ভাগ ৩য খণ্ড ৮ম অধ্যায়ে ইহার কথা দেখ। ১২৫. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩য ভাগ ১ম খমড ৫ম ইহাব কথা দেখ। ১২৬. সহজধৰ্ম্মেব মৰ্ম্ম শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পুৰ্ব্বাংশ ১ম ভাগ ৮ম অধ্যায়ের সংক্ষেপে বলা গিয়াছে। স্ত্রীলোকের সাহায্যসাপেক্ষে বলিয়া এ ধৰ্ম্ম-সাধনে ফল লাভ করা সাধারণের পক্ষে একরূপ অসাধ্য। সুতরাং ইহাতে নানারূপ ভ্রষ্টাচাব ও পাপাচাবের নিদর্শন সবৰ্বদাই সীমিত হইযা থাকে। ১২৭. “দ্বাররূপী প্রভুর কাছে পণ্ডিতের গণ। তর্কেতে হারিয়া সবে করিলা গমন।”রঃ লীঃ।