পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১১৪ প্রদর্শন করিলে, তিনিও তাহাকে সহজধৰ্ম্মের মৰ্ম্ম প্রকাশ করিয়া বলিলেন; তাহাকে প্রাণকৃষ্ণর মন ফিরিয়া গেল এবং তিনি বঘুনাথের নিকট দীক্ষিত হইয়া পড়িলেন। একদা একটা সপ রঘুনাথকে দংশন করিয়াছিল, সাধক রঘুনাথের তাহাকে কিছুই হয় নাই; তদৃষ্টে লোকে রঘুনাথকে সিদ্ধপুরুষ জ্ঞান করিতে লাগিল; বৃন্দাবনদাস নামক এক ব্যক্তি এই সময় তাহার শিষ্য হন। একদা ভানুগাছের রামপাশা গ্রামে এক ব্রাহ্মণ তনয়াকে দেখিয়া এই বৃন্দাবন ইহাকে গুরুর উপযুক্ত পাত্রী মনে করিয়া বিবাহের প্রস্তাব করিলে, কন্যার পিতা মদনরাম সম্মত হন। বৃন্দাবনদাস ঢেউপাশাতে গিয়া এই সম্বন্ধে প্রসঙ্গ প্রকাশ করিলে বিধবাসাধিকা শুনিয়া বড়ই সন্তুষ্ট হইলেন। ফলে রঘুনাথ তাহার আগ্রহ উপেক্ষা করিতে না পারিয়া বিবাহ করিলেন। যে বিধবার কথা বলা হইল, সেই বিদুষী রমণীর নাম শ্রীমতী, শ্রীমতী সহজধৰ্ম্মে সুবিজ্ঞা ছিলেন, তিনি সহজধৰ্ম্মমূলক পদ বাঙ্গালায় রচনা করিযা গিয়াছেন; রঘুনাথলীলামৃত গ্রন্থে তাহার দুই একটি পদ উদ্ধত করা হইয়াছে। রঘুনাথের বিবাহের পর শ্রীমতী অধিকদিন ছিলেন না, রঘুনাথকে সম্মুখে বাখিযা মৃত্যুমুখে পতিত হন। রঘুনাথকৃত সহজধৰ্ম্ম সম্বন্ধীয় কয়েকটি পদ প্রাপ্ত হওয়া যায়। রঘুনাথলীলামৃতে ইহাব কৃত কযেকটি পদও পাওয়া যায়। শ্রীমতীর মৃত্যুর পর রঘুনাথ অনেকদিন জীবিত ছিলেন, তিনি অনেক ব্যক্তিকে সহজধৰ্ম্মে দীক্ষিত করেন, তৎকর্তৃক এতদঞ্চলে সহজধৰ্ম্মের মত বিশেষভাবে প্রচাবিত হয। সহজধৰ্ম্ম কি, তাহা পূৰ্ব্বে বলা হইয়াছে, সপ লইয়া খেলা করিতে গেলেই পদে পদে প্রাণহানির সম্ভাবনা। জলে নামিবে অথচ বস্ত্র ভিজিবে না ইহা যেমন অসম্ভব; অপরিপক্ক অসিদ্ধ সাধারণ লোকের পক্ষে তদুপ স্ত্রীলোক অবলম্বনে সাধনমাগে অগ্রসর হওয়ারও সম্ভাবনা নাই; এই জন্যই সহজ ধৰ্ম্ম বজ্জনীয় ও ইহা সামাজিক ধৰ্ম্ম নহে। রঘুরাম শ্রীহট্টের অন্তর্গত জলড়বগ্রামে রাঢ় জাতির বাস, ইহাদের মধ্যে নিধিরামের বংশে প্রায় দশ বার পুরুষ চলিতেছে। নিধিরামের বৃদ্ধ প্রপৌত্র সূৰ্য্যরামের শিবপ্রতিষ্ঠা ও ভূমি দানাদি সৎকার্যের ভূমি উদাহরণ পাওয়া যায়। সূৰ্য্যরামের পুত্রের নাম রঘুরাম। রঘুরামের শারীরিক অসীম বলের কথা অদ্যাপি লোকমুখে শুনা যায়। যখন রঘুরামের বয়স ত্রয়োদশ বৎসর, সেই সময়ে একটা প্রকাণ্ড শূকর তদীয় যষ্ঠির আঘাতে নিহত হয়। ইহার পর ঘটনা বশতঃ ৭/৮ হাত উচ্চ একটা বটবৃক্ষ লম্ফদানে ডিঙ্গাইয়া যাওয়ায় সাধারণে র্তাহাকে “ডিঙ্গাইরাম" এই উপনামে ডাকিত। একদা ঢাকাদক্ষিণের রণিকালিতে একটা প্রচণ্ড ব্যাঘ্রকে জালাবদ্ধ করা হয়, তথায় উপস্থিত কোন ব্যক্তি সেই ভীষণ পশুর উপরে অস্ত্রাঘাত করিতে সাহস করে নাই। শ্ৰীহট্ট যাওয়ার পথে এতদ্বষ্টে রঘুরামের হাস্য সম্বরণ করা কঠিন হইয়া উঠে, রঘুরামকে হাসিতে দেখিয়া সকলেই তাহাকে বাঘ মারিতে অনুমতি দেয়। তাহার একগাছি জাঠি” ছিল, ঐ জাঠির বাটও লৌহ নিৰ্ম্মিত ছিল। কথিত আছে যে ছয়জন লোক এই লৌহ জাঠি আনিতে প্রেরিত হইয়া কষ্টে বহন করিয়া আনিয়াছিল। রঘুরাম জাঠি লইয়া জালের ভিতর প্রবেশ পূৰ্ব্বক এক আঘাতেই ব্যাঘ্রকে বধ করিলে, সকলেই তদীয় সাহসের প্রশংসা করিয়াছিলেন।