পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১১৬ কি,” বলিয়া প্রশ্ন করিলে তিনি উত্তর করিলেন—“ভাবনা বশে শ্ৰীমহাপ্রভুর সম্বন্ধে একটা অনুচিত চিন্তার উদ্রেক হইয়াছিল।” সাহাজীর প্রতি সঙ্গীদের একব্যক্তির বিশেষ শ্রদ্ধা ছিল, সে একথাটি ভুলিয়া না গিয়া দেশে আসিলে যাহারা ঢাকাদক্ষিণের রথে গিয়াছিল, তাহাদের কাছে সন্ধান পাইল যে, রথের সময় কোন ঘটনা ঘটিয়াছিল কি না, কিছু হয় নাই বলিয়া সকলেই বলিল। একব্যক্তি পড়ে নাই; একব্যক্তি হঠাৎ ধরিয়া ফেলিল।” সেই ব্যক্তি অতঃপর ঢাকাদক্ষিণে গিয়াও অনুসন্ধানে এই কথাই জানিতে পারে। বৃন্দাবনে তুলসীতলায় ধ্যানবিষ্ট সাধুর উচ্চারিত বাক্যদ্বয়ের অর্থ তখন বুঝিতে পারা গেল। ঐকান্তিক ভক্তের ভাবনেত্রে সময়ে সময়ে কিরূপে দূরবর্তী ঘটনা-চিত্রের ছায়াপাত হয়, তাহারাই তাহা বলিতে ও বুঝিতে পারেন। মহাপ্রভুর নাটমন্দির পূৰ্ব্বে পাকা ছিল না, ইহা পাকা করিতে র্তাহার ইচ্ছা হয়; কিন্তু সেই গৃহখানা অতি সুন্দর ছিল বলিয়া মিশ্রঠাকুরগণ উহা ভাঙ্গিতে প্রস্তুত ছিলেন না। কয়েক বৎসর পরে পাহারাদারের মশালের আগুনে গৃহখানা ভস্মীভূত হয়। এই সময় সাহাজীর আর্থিক অবস্থা অনেকটা মলিন হইয়া পড়িয়াছিল, হাতে টাকা ছিলই না কিন্তু তাহাতে তিনি নিরস্ত হইলেন না ও সংবাদ প্রাপ্তি মাত্র কতকখানা ইষ্ট লইয়া উপস্থিত হইলেন নাট মন্দিরের “নেউ” বা ভিত্তিস্থাপন করিয়া চলিযা গেলেন। কাজ সেই পৰ্য্যন্ত পড়িয়া রহিল। তাহার কিছুকাল পরে তিনি কতক তৈল আনাইতে টাকা পাঠাইলেন। মনে সঙ্কল্প রহিল যে এই বারে যত লভ্য হইবে, তৎসমস্ত মন্দির নিৰ্ম্মাণে অপিত হইবে। কিন্তু ছাতকের বাজারের ভাটিতে আসিয়াই নৌকা ডুবিয়া গেল! সাহাজীব আশা পুরিল না, তখন তাহার কাছে এই সংবাদ আসিল, তিনি “প্রভুর যেমন ইচ্ছা” এই মাত্র বলিলেন। পরে শীত ঋতুর অবসানে নদীর জল যখন কমিযা গেল, তখন সাহাজীর ডুবানৌকার “গলুইটি” জলের উপরে দৃষ্ট হইতেছে বলিয়া সংবাদ আসিল। নৌকাচেষ্টা করিলে উত্থোলিত হইতে পারে বলিয়া সংবাদ পাইয়া তিনি একটি লোক পাঠাইয়া দিলেন। সেই লোকটি “ডুবারি" দ্বারা অনুসন্ধান লইয়া জানাইল যে, বোঝাই নৌকাখানা পলিমাটিতে বসিয়া রহিয়াছে; মালপত্রও নষ্ট হয় নাই, তুলাইতে পারিলে উঠিবে। সাহাজীর তখন স্বয়ং তথায় গিয়া বহুলোক লাগাইয়া সন্তপণে সুকৌশলে অগ্রে তৈল ভাণ্ডগুলি উঠাইয়া লইলেন, দেখা গেল যে মুখঢাকা তৈলপূর্ণ পাত্র সমূহে জল প্রবিষ্ট হয় নাই, ফলে সকল তৈলই মিলিল। এই সময়ে তৈল অগ্নিমূল্য হইয়া উঠিয়াছিল, সুতরাং এই তৈলবিক্রয়ে চতুগুণ লভ্য হইল ও তদ্বারা মহাপ্রভুর নাটমন্দির প্রস্তুত হইয়া গেল! এই নাট মন্দির অনেকদিন ছিল, বিগত ভূকম্পে বিনষ্ট হইয়া যায়। শ্রীহট্টের কালীঘাটের জগন্নাথদেবতাকে প্রতিবৎসর নিয়মিতরূপে ২/৩ দিনের জন্য তিনি নিজগৃহে আনিয়া মহামহোৎসব করিতেন। কথিত আছে, চট্টগ্রামবাসী জনৈক কুষ্টরোগী শ্ৰীক্ষেত্রে “হত্যা" দিয়াছিল ও প্রত্যাদেশ প্রাপ্তে ইহার কাছে আসিয়া প্রসাদপ্রার্থী হয়, বহু অনুনয়ে তিনি ভুক্তাবশেষ স্বরূপ একটি বাতাসা দিয়া তাহাকে বিদায় করিয়াছিলেন। সেও তাহাতেই তুষ্ট হইয়া চলিয়া