পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২১ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত পশ্চাৎ দিকে ফিরিযা চাহিয়া দেখিতে পান যে, যে স্থানে সাধু বসিয়া রহিয়াছেন, তাহার কিছুটা স্থান ধরিয়া বারিপাত হইতেছে না। রাখাল শাহের মৃত্যু আশ্চর্য রকমে হইয়াছিল। একদিন তিনি নিকটস্থ লোকদিগকে সংকীৰ্ত্তন করিতে বলেন, তিনি কখনও কীৰ্ত্তনাদি করিতেন না, তাহার স্থানে কীৰ্ত্তন সেই প্রথম ও শেষ। হিন্দুগণ পরম উৎসাহে কীৰ্ত্তন আরম্ভ করিলে, তিনি কীৰ্ত্তনের মণ্ডলী মধ্যে আসন করিয়া বসিলেন ও দেখিতে দেখিতে সেই আসনোপাবিষ্ট অবস্থাতেই দেহত্যাগ করিলেন। লোকে হাহাকার করিয়া উঠিল ও র্তাহার দেহ “সমাধি” দিল। আশ্চর্য্যের বিষয়, শুনা যায় যে ইহার ১২ দিন পরে তাহাকে অন্যত্র অনেকেই দেখিতে পাইয়াছিল এবং সে আতিবাহিক দেহ সত্বরেই দৃষ্টি বহির্ভূত হইয়াছিল। কানাইর ঘাটে তিনি প্রায় ত্রিশ বৎসর কাল ছিলেন, মধ্যে কিছুদিনের জন্য “মোগলের চক” নামক স্থানে গিয়াছিলেন। ২০/২২ বৎসর হইল, তিনি দেহত্যাগ করিয়াছেন। রাখাল শাহকে হিন্দু মোসলমান উভয় সম্প্রদায়ই শ্রদ্ধা করিত। মোসলমানগণ র্তাহাকে মোসলমান মনে করিত, হিন্দুগণ সিদ্ধপুরুষ বলিয়া ভক্তি করিত। রাজারাম দত্ত শ্রীহট্টের নবাব রফিউল্লা খা বাহাদুরের সময়ে (১১০০ সনে) দত্তগ্রামের দত্তবংশীয় পারস্য ভাষাবিৎ রাজারাম উক্ত নবাবের দেওয়ান নিযুক্ত হইয়াছিলেন। তাহা কাৰ্য্যতৎপরতায় নবাব প্রীত ছিলেন, তিনি একদা বিদায় গ্রহণে বাড়ীতে আগমন করেন, এবং ডেীয়াদির প্রবল প্রতাপ কর মোহাম্মদ চৌধুরীর সহিত সাক্ষাৎ করিতে গমন করেন। চৌধুরী তখন অন্দরে ছিলেন। ভৃত্য রাজারামের আগমন সংবাদ তাহাকে জ্ঞাপন করিলে, তিনি অপেক্ষা করিতে বলিলেন। রাজারাম তদানুসারে বহুক্ষণ অপেক্ষা করিয়াও, চৌধুরী আসিতেছেন না দেখিয়া চলিয়া আসিলেন। এদিকে চৌধুরী বাহিরে আসিয়া যখন জানিলেন যে রাজারাম চলিয়া গিয়াছেন, তখন তাহার ক্রোধের সীমা রহিল না, তিনি আপনাকে অপমানিত জ্ঞান করিয়া তখনই রাজারামকে ফিরাইয়া আনিতে ভৃত্যকে পাঠাইলেন। আদিষ্ট হইয়া ভূত্য অনতিবিলম্বে রাজারামকে পথ হইতে ফিরাইয়া আনিল। রাজারামের আগমন সংবাদপ্রাপ্তে চৌধুরীও তাঁহাকে শাস্তি দেওয়ার মতলব করিলেন। কর মোহাম্মদের দয়াবতী জননী ক্রুর চরিত পুত্রের অভিপ্রায় বুঝিতে পারিয়া, ভৃত্যদ্বারা রাজারামকে এক গুপ্ত পথে পলায়নের পরামর্শ দিলে, রাজারাম তৎক্ষণাৎ পলায়নপূৰ্ব্বক বাড়ীতে আসিলেন ও সেইক্ষণেই কাৰ্য্যস্থলে চলিয়া গেলেন। ج নবাব রফিউল্লা খাঁ বাহাদুর দেওয়ানকে বিষগ্নচিত্ত ও বিদায় ভোগের পূবেৰ্বই প্রত্যাগমন করিতে দেখিয়া কারণ জিজ্ঞাসিলে, তিনি সমস্তই নবাবের গোচর করিলেন এবং সাধারণের প্রতি কর মোহাম্মদের অত্যাচার বর্ণনপূৰ্ব্বক প্রতীকারপ্রার্থ হইলেন; অধিকন্তু নবাবের অনুগ্রহের উপর নির্ভর করিয়া স্বীয় বাসভূমি ডেীয়াদি হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া লইতে প্রার্থনা করিলেন। নবাব রাজারামের প্রার্থনা পূর্ণ করিতে সম্মত হইলেন, এবং কর মোহাম্মদের অধিকৃত ডেীয়াদি পরগণা হইতে রাজারামের বাসভূমি সম্বলিত একটি পৃথক পরগণা খারিজ করিয়া দিলেন; নবাব বফিউল্লা খাঁর নামে ঐ নূতন পরগণা “রফিনগর” নাম প্রাপ্ত হইল। ১৩০. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩য় ভাঃ ২য় খঃ ৫ম অঃ ডেীয়াদির বিবরণে ইহার বিষয় বলা হইয়াছে।