পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১২৪ লোক তাহার প্রতি শ্রদ্ধান্বিত হইযা পড়িয়াছিল, এবং তাহাকে “সিদ্ধবাবা” বলিত। র্তাহারা বাবার কথা শ্রবণ করিতে আগ্রহ প্রকাশ করিলে তিনি পুনঃ বলিতে আরম্ভ করিলেন ঃ—“অত্রত্য গান্দাই নদীর দক্ষিণ তীরে যে একটি প্রাচীন দীর্ঘিকা আছে, উহার মধ্যে এক দেবমূৰ্ত্তি নাম রঘুনাথ ও বহু মূল্য দ্রব্যাদি নিমজ্জিত আছে। উহার উত্তরে ও পশ্চিমে সারি সারি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টীলা সজ্জিত মনোহর স্থান—যোগ সাধনের উপযোগী বলিয়া এস্থানে অবস্থিতিপূৰ্ব্বক কিছুদিন সাধন করিব ইচ্ছা হইয়াছে। সে যাক, একসময়ে আমি মণিপুর রাজবাটীতে উপস্থিত হইয়া দেবালয়ে এক সীতামূৰ্ত্তি পূজিতা হইতেছেন দেখিয়া মহারাজ গম্ভীর সিংহকে “রামশূন্য সীতা কেন” জিজ্ঞাসিলে তিনি বলেন যে তাহার সীতাকুমারী, সময়ে বিবাহ দিতে ইচ্ছা আছে এবং আমি বরপক্ষ হইতে পারিব কি না। মহারাজের বাক্যে স্বীকৃত হইযা বলিয়া ছিলাম যে পর্যটনোপলক্ষে কোথাও সীতাশূন্য রাম দেখিতে পাইলে তাহাকে সংবাদ দিব। মহারাজও তাহাতে স্বীকৃত হন। পূৰ্ব্বোক্ত দীঘতে যে রামমূৰ্ত্তি দেখিয়াছি, তাহারই সহিত মণিপুররাজের সীতার বিবাহ দিতে চাহি। এই বৃহৎ ব্যাপারে আপনারা সাহায্য করবেন। অর্থ সাহায্য নহে, তাহা আমিই বহন করিব।” রাধাগোবিন্দ প্রমুখ সকলেই আনন্দের সহিত প্রস্তাবের অভিনন্দন করিলেন। যোগসিদ্ধ পুরুষের অনায়ত্ত বিষয় কিছুই নাই; অন্তেয় সিদ্ধি ঘটিলেই দূরস্থধনরত্ন দৃষ্টিপথে পতিত হয়; ইহা তাহারা বিশ্বাস করিতেন। যে দীঘীর কথা বলা গিয়াছে, উহার নাম ঘাঘরা দীঘী। উহার পশ্চিম দিশ্বত্তী টীলায়ও তদুত্তরবর্তী টাংপাড়া গ্রামের পশ্চিমের টালায়, দুইটি আশ্রম নিৰ্ম্মিত হইল; বাবা উভয় স্থানে বা কখন বা রাধাগোবিন্দের বাড়ীতে বাসা করিতে লাগিলেন। একদিন দীঘী হইতে মূৰ্ত্তি উত্তোলনের সংবাদ ঘোষিত হইল, যথাকলে দীঘিকা তীরে বহু কীৰ্ত্তিনদল সমবেত হইয়া মধুর কীৰ্ত্তনধ্বনিতে দিক প্রতিধবনিত করিতে লাগিল, তাহাতে দীঘীর স্থির জল কম্পিত হইতে লাগিল ও পরে স্ফীত হইয়া উঠিল। যোগের প্রাকাশ্য সিদ্ধিবশে বা যে কারণেই হউক দেখিতে দেখিতে ক্ষুদ্র নৌকাকৃতি আধার সমেত রঘুনাথ বিগ্রহ ভাসিযা সন্নিকটবৰ্ত্তী হইতে লাগিলেন। নিকটবৰ্ত্তী হইলে বাবা জলে নামিয়া বঘুনাথকে কোলে তুলিয়া লইয়া আসিলেন। রাম সীতার বিবাহ কথা সমাগত জনসমূহ এই আশ্চৰ্য্য ব্যাপার অবলোকনে বিস্ময় বিহলচিত্তে বাবার জয় ঘোষণা করিতে লাগিল। বাবা শ্রীমূৰ্ত্তিকে আশ্রমে আনিয়া প্রাণ প্রতিষ্ঠাপূৰ্ব্বক পূজাদি দিলেন এবং মণিপুররাজ গম্ভীর সিংহের নিকট এই বৃত্তান্তঘটিত পত্র সহ লোক পাঠাইলেন। মহারাজ নির্দিষ্ট দিনে সীতা সহ আগমনের সম্মতি জানাইলে, বাবা ত্রিপুরেশ্বরকেও এই উৎসবে যোগদানের নিমন্ত্রণ করিলেন। (কীৰ্ত্তিকমাসে রঘুনাথের উদ্ধাব হয়, এই সময় হইতেই রাধাগোবিন্দের বিশেষ সাহায্যে উৎসবের অনুষ্ঠান চলিতে থাকে। মেলাস্থল, বিবাহ বাসর সভামণ্ডপ, রাজনিকেতন, ভূত্যনিবাস, অভ্যাগত বাসস্থান, অশ্বশালা, বাদ্যাগার প্রভৃতি ঘাঘরদীিঘর চতুস্পার্শ্বে নিৰ্ম্মিত হইল। ঘোড়দৌড় ও পাতিখেলার স্থান পরিষ্কার, কদলীবৃক্ষ-সারি রোপণ ও ধ্বজ উত্তোলন প্রভৃতি সম্পন্ন হইল, অপরিমিত খাদ্যদ্রব্যে ভাণ্ডার পরিপূরিত হইল। সন্নিকটবৰ্ত্তী গ্রাম সমূহের ব্রাহ্মণগণ উৎসাহের সহিত ব্যাপারে যোগ দিলেন। নানাস্থানের নিমন্ত্রিত ও দর্শকসমূহে খেলাস্থল পূর্ণ হইয়া গেল। ○