পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৩৪ অন্যতম জমিদরা সৈয়দ হুসেন আলী’ তাহার সহিত দেখা করিতে আসিলেন, রামকৃষ্ণ জমিদার তনয়কে উপযুক্ত সম্ভাষণের সহিত আসন প্রদান করিলেন। হুসেন আলী বসিলেন এবং সাধুর পরীক্ষার উদ্দেশ্যে, তাহাকে উপহার দেওয়ার উপলক্ষে, হিন্দুর অভক্ষ্য দ্রব্যাদি প্রদান করিলেন। রামকৃষ্ণ একটি শঙ্খবাদন পুরঃসর উপহার গ্রহণ করিলেন। আচ্ছাদন উন্মোচন করিলে দৃষ্ট হইল যে পাত্রের মধ্যে মিছরি, চিনি, কদলী প্রভৃতি খাদ্য দ্রব্য রহিয়াছে। হিন্দুর অস্পৃশ্য কোন বস্তুই নাই। এতদ্বষ্টে সৈয়দ সাহেব রামকৃষ্ণকে প্রকৃত সাধুপুরুষ জ্ঞান করিয়া, পরীক্ষা করার জন্য ক্ষমাপ্রার্থন করিলেন। এই সময় হইতে দেশে রামকৃষ্ণের সুখ্যাতি অত্যন্ত বদ্ধিত হইয়া উঠে। এইরূপে কিছুদিন অতীত হইলে বঙ্গীয় নবাব কৰ্ম্মচারী ইমামকুলি নামে দস্যবৃত্ত জনৈক মোসলমান শ্রীহট্টে আগমন কালে, রামকৃষ্ণ মহিমাশ্রবণে র্তাহার নিকট উপস্থিত হন। তিরোহিত হয়। ব্যাধিযন্ত্রণা বিদূরিত হইলে, কুলির এই দুষ্টবুদ্ধি জন্মিল, ভাবিলেন যে এই সাধুকে সঙ্গে রাখিলে আর কখনও রোগ-যন্ত্রণা ভোগ কবিতে হইবে না। সুতরাং তিনি রামকৃষ্ণকে আপন দেশে লইয়া যাইতে মতলব করিয়া, প্রত্যাগমন কালে তাহাকে সঙ্গে যাইতে অনুরোধ করিলেন। রামকৃষ্ণ গোসাঞি আখড়াতাগ করিয়া অন্যত্র যাইতে অস্বীকৃত হইলেন, তখন কুলি তাহাকে জোর করিয়া, বাধিয়া লইয়া নৌকাপথে দেশে চলিলেন। সনাতন ও ব্রহ্মনামক শিষ্যদ্বয় তাহার অনুসরণ করিলেন। ইমামকুলির নৌকা মাছুলিয়া হইতে নোয়াবাদ নামক স্থানে পৌছিল। ঐ স্থানবাসী নয়ান কৈবৰ্ত্তের নবাবী নামী কন্যা অশীতি বৎসরে পদার্পণ কবিয়াছিল, কিন্তু তৎকাল পর্যন্ত এই পবিত্ৰাত্মা নারীর বিবাহ হয় নাই, সে রামকৃষ্ণকে পুত্রজ্ঞান করিত। রামকৃষ্ণকে কুলি লইয়া যাইতেছেন শুনিয়া সে উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ করিতেছিল; এদিকে নৌকা সেইস্থানে আসিয়া আটকিয়া গেল। কুলি তীরে বৃদ্ধাকে বিলাপ করিতে দেখিয়া, রোদনের কারণ জিজ্ঞাসিলে, বৃদ্ধ রামকৃষ্ণকে ছাড়িয়া দিতে প্রার্থনা করিল। কুলি রহস্যভাবেই বলিলেন “বুড়ি, যদি একঢাল টাকা দিতে পারিস তবে তোর বেটাকে ছাড়িয়া দিতে পারি” বৃদ্ধার বাস্তবিক কিছু টাকা ছিল, জাল বুনিয়া সে উহা উপাৰ্জ্জন করিয়াছিল, কিন্তু তাহাতে একখানা ঢাল পুরিয়া যাইবে, তত ছিল না। রামকৃষ্ণের স্নেহবিহুলা বৃদ্ধার কিন্তু এতটা বিচার করিবার শক্তি ছিল না। শিষ্য সনাতনও বৃদ্ধাকে সম্মত আসিল, বৃদ্ধা আসিতে ত্ৰস্ততাবশতঃ হাত হইতে পড়িয়া সে মৃৎভাণ্ডটি ভাঙ্গিয়া গেল—ঝর ঝর করিয়া টাকা ভূমিতে পড়িল, তখন দেখা গেল টাকার পরিমাণ অল্প নহে, বহুপরিমিত অর্থ ভূতলে স্তুপীকৃত হইয়া পড়িয়াছে। বৃদ্ধা অবাক হইয়া রহিল, কুলি একঢালের পরিবৰ্ত্তে বহু ঢাল পরিমিত অর্থ পাইয়া পূৰ্ব্ব স্বীকৃতি মতে রামকৃষ্ণকে ছাড়িয়া দিতে বাধ্য হইলেন। কুলি পূৰ্ব্বেই রামকৃষ্ণের দৈবশক্তির পরিচয় পাইয়াছিলেন, এই কাণ্ডটিও তাঁহারই ইচ্ছাসঞ্জাত বোধে মনে করিলেন সে সাধুর অনিচ্ছায় তাহাকে আর ক্লেশ দেওয়া সঙ্গত নহে। রামকৃষ্ণ সেই স্থানেই রহিয়া গেলেন; সেই স্থানে রামকৃষ্ণ কৈবৰ্ত্তিনী তনয় রূপেই পরিচিত ছিলেন। ১৩৭. ইনি তরফের কোন বংশীসভূত ছিলেন–জানা যায় নাই।