পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৩৬ বোধ হয়। বিথঙ্গলে রামকৃষ্ণ ১২ বৎসর কাল অবস্থিতি করেন। বার বৎসর অতীত হইলে একদা তিনি দেহত্যাগের সময় সমুপস্থিত হইয়াছে বলিয়া শিষ্যবৰ্গকে সংবাদ দেন; তখন শত শত শিষ্য ও অনুরাগী ভক্তে বিথঙ্গল পূর্ণ হইয়া গেল, রামকৃষ্ণের অভিপ্রায় মতে তাহারা সংকীৰ্ত্তন আরম্ভ করিলে, তিনি ধীরে ধীরে মধ্যস্থানে গিয়া বসিলেন, যোগের প্রণালী অনুসারে আসনগ্রহণ করতঃ প্রাণবায়ু নিরোধ করিয়া বাহ্যজ্ঞান বিরহিত হইলেন ও কিছুক্ষণ পরেই সেই সহস্র ভক্তের কীৰ্ত্তনমণ্ডলী মধ্যে সমাধি অবলম্বনে ১০৫৯ বাং (১৬৫২ খৃঃ) মাঘী পূর্ণিমাযোগে ৭৬ বৎসর বয়ক্রম কালে তিনি দেহত্যাগ করিলেন। রামচন্দ্র পাল শ্রীহট্টের অন্তর্গত হবিগঞ্জ উপরিভাগেব পৈল গ্রামে রামচন্দ্র পাল জন্মগ্রহণ করেন, তিনি একজন কৰ্ত্তব্যনিষ্ঠ, চরিত্রবান পুরুষ ছিলেন। প্রথম বয়সে তিনি ঢাকায় সদর আলার দফতরে পেস্কার করিতেন, হাকিম র্তাহাকে অত্যন্ত মেহের চক্ষে দেখিতেন। তৎকালে উৎকোচ গ্রহণ করা কেহ গ্রানিজনক জ্ঞান করিত না; কিন্তু রামচন্দ্র ঈদৃশ অন্যায়াচরণ অতি ঘৃণনীয় মনে করিতেন। একদা ভাওযালের জমিদার কালীচরণ বায়ের সহিত নীলকর ওয়াট্ সাহেবের একটা মোকদ্দমা বাঁধে, এই মোকদ্দমার সরেজমিন তদন্তের ভার হাকিম ইহার উপরই অপণ কবেন । রামচন্দ্র সরেজমিনে উপস্থিত হওয়া মাত্রই কালীচরণের পক্ষীয় লোক তাহাদেব স্বপক্ষে বিপোর্ট দেওয়ার জন্য ২০০০ হাজার টাকা উৎকোচ প্রদান কবিল। উৎকোচ গ্রহণ না করিলে তখন তাহাকে প্রাণসঙ্কটে পড়িতে হইত, কাজেই বিপদে পড়িযা তাহাকে বলিতে হইল যে টাকাটা ঢাকায় পাঠাইয়া দিলেই নিরাপদে পাওযা যাইবে। এই উপায়ে তিনি ধৰ্ম্ম ও প্রাণ বাচাইয়া চলিয়া আসিলেন। যদিও অবস্থানুসাবে রিপোর্টটা কালীচরণের পক্ষে দিতে হইয়াছিল, তথাপি প্রেরিত ২০০০ টাকা তিনি পরে ফেরত পাঠাইয়া দিয়াছিলেন। এই কথাটা সকলেই শুনিযাছিল এবং আশ্চর্য হইয়াছিল। সদর আলার কর্ণেও কথাটা গিয়াছিল, শুনিয়া তিনি রামচন্দ্রকে বিষয়-বুদ্ধি-বিহীন বলিয়া প্রকাশ করেন। ফলতঃ এই ব্যাপারে কিছু প্রাপ্তির সম্ভাবনা মনে করিয়াই তিনি স্নেহভাজন রামচন্দ্রকে এই তদন্তে প্রেরণ করেন। তাহার চরিত্র যে কিরূপ উন্নত ছিল, এই একটি মাত্র উদাহরণেই তাহা বুঝা যায়। ঢাকা হইতে তিনি শ্রীহট্টে আসিয়া ওকালতি ব্যবসায় আরম্ভ করেন। তিনি শ্রীহট্টের একজন খ্যাতনামা উকিল ছিলেন, কর্তৃপক্ষ তাহার কৰ্ম্মঠতা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাইয়া তাহাকে সদরে প্রধান মুন্সেফ নিযুক্ত করেন। শ্রীহট্ট হইতে পারে তিনি বরিশালের কোটেরহাট বদলী হইয়াছিলেন। সচরাচর দেখা যায় যে, নিজের বা পরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্রট অনেকেই ততটা লক্ষ্য করে না, রামচন্দ্র এ প্রকৃতির ছিলেন না, তিনি সামান্য দোষকেও বৃহৎবৎ মনে করিতেন। বরিশালে থাকাকালে এক বৃদ্ধ পৰ্টুনী প্রতিবেশিনী একদা তাহাব বাসায় আসিয়া কিছু কলমী শাক দেয তিনি খাইতে বসিয়া প্রসঙ্গক্রমে জিজ্ঞাসা করেন যে, সেই শাক কোথায় পাওয়া গিয়াছে। র্তাহার স্ত্রী পাটুনী বুড়ির কথা বলিলে, দাম দেওয়া হইয়াছে কিনা জিজ্ঞাসা করেন। যখন তিনি জানিলেন যে বুড়িকে শাকের দাম দেওয়া হয় নাই তখন আমনি পাত হইতে উঠিলেন ও বাহিরে গিয়া তখনই সেই বুড়িকে ডাকাইয়া আনাইয়া দামটি দিয়া তবে কাছারিতে গেলেন। বস্তুতঃ এইরূপ ক্ষুদ্র কার্যেই লোকের অন্তঃকরণের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়।