পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩৭ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত বরিশাল হইতে একদা পূজার সময বাড়ী আসিয়া তিনি জানিতে পারেন যে, গ্রামের লোকেবা একটি অসহায় ব্রাহ্মণ পরিবারকে অন্যায়রূপে সমাজচ্যুত করিয়াছেন। শুনিয়াই তাহার হৃদয় দ্রব হইয়া গেল, তিনি সেই ব্রাহ্মণকে ডাকিয়া আনিয়া তাহাকে নিজ পৌরহিত্যে বরণ করিয়া লইলেন। ইহাতে কাজেই তাহাকেও সমাজচ্যুত হইয়া একা থাকিতে হইল। ষোল বৎসর পর্যন্ত তিনি সেই ব্রাহ্মণকে লইয়া একা থাকেন, একদিনের জন্যেও তজ্জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন নাই, রামচন্দ্র এরূপই সদাশয় ছিলেন। সুবিখ্যাত বাগ্মী শ্রীযুক্ত বিপিনচন্দ্র পাল মহাশয় ইহারই একমাত্র পুত্র। বিপিনবাবু তাহার “প্রাণতুল্য” ছিলেন; কিন্তু এই “প্রাণতুল্য” পুত্র যখন হিন্দু ধৰ্ম্মে অনাস্থা প্রদর্শনপূৰ্ব্বক ব্রাহ্মমতের অনসুরণ করেন, তখন তেজস্বী পিতা আপন হস্তে আপনার হৃদয় উৎপাটনাপেক্ষা গুরুতর কাণ্ড করিয়া বসিলেন; তিনি আপনার “প্রাণত্যুল” পুত্রকে কৰ্ত্তব্যের অনুরোধ বজ্জন করিলেন। তিনি মনে করিয়া থাকিতে পারেন যে, ইহাতে পুত্রের মত পরিবৰ্ত্তিতও হইতে পারে কিন্তু যখন তাহার কোন চিহ্নই দেখা গেল না, তখন নিষ্ঠাবান রামচন্দ্র পিণ্ডলোপের ভয়ে বৃদ্ধবয়সে দারপরিগ্রহ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। যাহা হইক, পুত্রের প্রতি তাহার আন্তরিক স্নেহ বিলুপ্ত হয় নাই, তিনি অন্তিমকালে যে উইল করিয়া যান, তাহাতে সমস্ত সম্পত্তিই পুত্রকে প্রদত্ত হয়।" রুদ্রদেব মুনিগোসাঞি ছাতি আইনের ভট্টাচাৰ্য বংশে আন্দাজ ১৭৩৩ খৃষ্টাব্দে রুদ্রদেব জন্মগ্রহণ করেন, তাহার পিতার নাম শঙ্করদেব ভট্টাচাৰ্য্য। জেলা ত্রিপুরার নুরনগরের দেবগ্রামবাসী শুভগিরের নিকট তিনি দীক্ষিত হইয়া কসবাতে গিয়া কালী সাধনায় বৃত হন। তাহার মনোরথ সিদ্ধ হইয়াছিল। ত্রিপুরার মহারাজ তাহার গুণগ্রামে মোহিত হইয় তাহাকে অনেক ভূমি দান করিতে চাহেন, কিন্তু তাহা গ্রহণে তিনি অস্বীকৃতি হইলে, দৈনিক দুগ্ধের বরাদ্ধ জন্য মহারাজ মাসিক দুই টাকা হিসাবে বার্ষিক ২৪ টাকার বৃত্তি অবধারিত কবেন এবং কালীবাড়ী প্রস্তুত করিয়া দেন। রুদ্রদেব বিবাহ না করায় তাহার কনিষ্ঠ সহোদর শুভঙ্কর শুরু শুভগির সদনে গিয়া ভ্রাতাকে বিবাহ করার আদেশ দানের জন্য বারবার প্রার্থনা করেন। শুভগির তখন শিষ্যকে বিবাহ করিতে আদেশ করেন। এদিকে ভ্রাতাও বিবাহের আয়োজন করিতে প্রবৃত্ত হন; ফলে অতি শীঘ্রই ব্যাপার উপস্থিত হয়। যখন সপ্তপ্রদক্ষিণ হইবে, তখন একটা ঘটনা উপস্থিত হয়, তখন হঠাৎ তিনি কোথায় চলিয়া যাওয়ায়, সকলেই উৎকণ্ঠিত হইয়া পড়েন। অনেক অনুসন্ধানেও তাহাকে পাওয়া গেল না, কিন্তু কতক্ষণ পরে তিনি আপনিই আসিয়া উপস্থিত হইলেন। জিজ্ঞাসায় জানা গেল যে তাহার নিরুপিত জপকাল উপস্থিত হওয়ায় তাহাকে যাইতে হইয়াছিল। শ্বশুর জামাতার এই কাণ্ডদর্শনে তাহাকে কাণ্ডজ্ঞানহীন পাগল মনে করিয়া বিষাদিত হইয়াছিলেন কিন্তু ভব্য ব্যক্তিবর্গের কথায় তাহাকে “সিদ্ধপুরুষ” জানিয়া আশ্বস্ত হন। একদা ছাতি আইনে একটা বন্যহস্তী সমাগত হইয়া লোকের ভীতি উৎপাদন করে; উপায়ান্তরহীন ও একান্ত ভীত হইয়া বহু ব্যক্তি রুদ্রদেবকে ইহা জানাইলে, তিনি আড়াই হাত মাত্র লম্বা একটি ১৪২ বিজযা পত্রিকা ১৩১৯ বাং মাঘ সংখ্যায লিখিত “পিতা পুত্রে” প্রবন্ধ অবলম্বনে লিখিত।