পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৪৭ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত হইল। কিন্তু ইহা অপরের সাহায্য সাপেক্ষ, কে সে সাহায্য করিবে? শীতলগিরি সন্নিকটবৰ্ত্তী ভরণের অন্যতম জমিদার স্বগীয় স্বরূপচন্দ্র রায়ের নিকট উপস্থিত হইয়া, জীবিতাবস্থায় তাহাকে মাটিতে পুতিয়া রাখিতে অনুরোধ করিলেন। স্বরূপচন্দ্র ভীত হইয়া অস্বীকৃত হইলেন। শীতলগিরি তৎপর বটরশীবাসী মোহাম্মদ কাশিম চৌধুরীর কাছে গিয়া পূৰ্ব্বোত্তরূপ অনুরোধ করিলে, তিনিও ভীত হইয়া প্রথমতঃ অস্বীকৃত হন, কিন্তু “ইহাতে ভবিষ্যতে র্তাহার মঙ্গলই হইবে, অন্যথায় অমঙ্গল সম্ভাবনা; এবং এই কাৰ্য্যদ্বারা বিপদে পড়িবার কিছুমাত্র সম্ভব নাই” ইত্যাদি বাক্য সাধু র্তাহাকে বার বার বলিলে, সাধুবাক্যে বিশ্বাস করিয়া, তিনি সাধুর অভিপ্রায় মত একটি গৰ্ত্ত খনন করা হইল। চৌধুরী মহাশয়ের সংবাদমতে র্তাহার বিশ্বস্ত অনেক ভদ্রলোক ব্যাপার দর্শনে আগমন করিলেন। সকলের সাক্ষাতে সাধু যথাকলে তাহার ভিতরে উপবিষ্ট হইলে কিছুটা গাজা, একখানা কটি ও একগ্রাস দুগ্ধ পাশ্বে রাখিয়া দেওয়া হইল; দেখিতে দেখিতে সাধু ধ্যানস্থ ও বাহ্যজ্ঞান বিরহিত হইয়া পড়িলে, পূৰ্ব্বোপদেশ মত তাহার উপরে বাঁশের আচ্ছাদন দিয়া, তদুপরি মাটি ক্ষেপণে ঢাকিয়া রাখা হইল,—গৰ্ত্তে বায়ু প্রবেশের পথ রহিল না। (১২৭৮ বাংলা) জীবন্ত ব্যক্তিকে ভূগর্ভে কবর দিয়া পরে চৌধুরী বড়ই ভাবিত ও ভীত হইয়া পড়িলেন, তাহাব মনে বড়ই উৎকণ্ঠা জন্মিল, তিনি বিশ্বস্ত লোক প্রহরায় রাখিয়া দিলেন, এবং সাত দিন পূর্ণ হইলে, হতাশচিত্তে স্বজন সহিত সেই স্থানে উপস্থিত হইযা সাধুকে উঠাইতে আদেশ দিলেন। উপরের মাটি সরান হইলে গৰ্ত্ত হইতে যেন একটা রশ্মি-রেখা চলিয়া গেল বলিয়া দৃষ্ট হইল, সাধুর কোনরূপ অমঙ্গল সংঘটিত হইয়াছে মনে করিয়া চৌধুরী আতঙ্কিত হইলেন এবং তৎক্ষণাৎ অগ্রসর হইয়া দেখিলেন যে সাধু পূৰ্ব্ববৎ বসিয়া রহিয়াছেন। বহির্বায়ু দেহে লাগিয়া অচিরাৎ সাধুর চেতনা হইল এবং তিনি অনতিবিলম্বেই গৰ্ত্ত যে গঞ্জিকা, রুটি বা দুগ্ধ রক্ষিত হইয়াছিল, তাহা পূৰ্ব্ববৎ রহিয়াছে দৃষ্ট হইল—সাধু স্পর্শ করেন নাই। পঞ্জাবের প্রসিদ্ধ হরিদাস ভূগর্ভে প্রবেশেব পূৰ্ব্বে কয়েকটি প্রক্রিয়া করিতেন; সুদূর গ্রাম্য অঞ্চলে সাধু শীতলগিরি তদুপ কোন প্রক্রিয়া করিয়াছিলেন কি না; কেহ তাহার সংবাদ রাখে নাই, সুতরাং বলিতে পারা যায় না। এই ঘটনার কথা প্রচারিত হইলে বহুলোকের সভক্তি দৃষ্টি শীতলগিরির উপর পতিত হয় এবং বহুলোক কত্ত্বক তিনি নানাভাবে সম্মানিত হন। সাধু সমাধি হইতে না উঠা পর্যন্ত ঘটনাটি ংগোপনে রাখা হইয়াছিল। এই সমাধি ব্যাপারের পর সাধু প্রায় ২৫ বৎসর কাল জীবিত ছিলেন। শৈলজা দেবী শৈলজা দেবী একজন সতী। সতরশতী পরগণার সাধুহাটী গ্রামের প্রসিদ্ধ ভট্টাচাৰ্য বংশে গঙ্গারাম শিরোমণি" ও বিষ্ণুদাস ভট্টাচাৰ্য নামে দুই সহোদর ছিলেন, তন্মধ্যে বিষ্ণুদাসের পত্নীর নাম শৈলজা। শৈলজাসুন্দরীর পতিভক্তি অতুলনীয় ছিল, তিনি প্রত্যহ পতি-পাদোদক পান না করিয়া অন্ন ১৪৭ সাধুহাটীর গঙ্গারাম শিরোমণি একজন সনন্দ প্রাপক সম্মানিত ব্যক্তি। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ ৩য় ভাঃ অঃ শেষ টীকা দেখ।