পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৫১ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পাট বাটী’ বলিয়া খ্যাত তদীয় জীর্ণ বাটিকা কেবল বৈষ্ণবের নহে-বঙ্গীয় সাহিত্যসেবীরও পীঠস্থান স্বরূপ, চৈতন্য ভাগবত দেনুড়েই রচিত হয়।” সত্যভানু উপাধ্যায় সত্যভানু উপাধ্যায় শ্রীহট্টবাসী ছিলেন, শ্রীহট্টের কোন স্থানে তাহার গৃহ ছিল, তাহা জানা যায় না। নামটিও যে প্রচ্ছন্ন নহে, তাহা বলা যায় না। তিনি জগন্নাথ মিশ্র ও শ্ৰীবাস পণ্ডিত প্রভৃতির সমসাময়িক ছিলেন। সত্যভানু শ্রীহট্ট হইতে যাত্রা করিয়া নানাতীর্থ ভ্রমণপূৰ্ব্বক নবদ্বীপে উপস্থিত হন ও জগন্নাথ মিশ্রের গৃহে আতিথ্য গ্রহণ করেন।** সত্যভানুর বালগোপাল উপাসনা ছিল, জগন্নাথগৃহে তিনি অন্ন প্রস্তুত করিয়া নিজ ইষ্টদেব স্বগীয় গোপালকে যথারীতি অন্ন নিবেদন করেন। জগন্নাথ-তনয় নিমাই তখন দুগ্ধপোষ্য শিশু। সত্যভানু ধ্যানান্তে নয়নউম্মলনে দেখিতে পান যে জগন্নাথ মিশ্রের শিশু পুত্র কোথা হইতে আসিয়া সেই অন্ন উভয় হাতে আহার করিতেছেন। দেবতার ভোগ নষ্ট হইল বলিয়া অতিথিরও আর আহার হইল না। এই ঘটনায় জগন্নাথ মিশ্র বড়ই লজ্জিত হইলেন এবং ক্রটীস্বীকারপূৰ্ব্বক পুনৰ্ব্বার পাকের দ্রব্যাদি দিয়া, পাকের জন্য অনুরোধ করিলেন। অতিথি পাকে গেলে পুত্রকে বিশেষ সাবধানে রাখিলেন। কিন্তু পাক শেষ হইলে ভোগ প্রস্তুত করিয়া সত্যভানু যখন গোপালকে নিবেদন করিতে লাগিলেন তখন সতর্কতার মধ্যেও নিমাই গিয়া সেই অন্ন পূৰ্ব্ববৎ আহার করিতে লাগিল। এবার জগন্নাথ বড়ই ক্রুদ্ধ হইলেন এবং নিমাইকে মারিতে গেলেন, কিন্তু তাহার জ্যেষ্ঠতনয় কিশোর বিশ্বরূপ আসিয়া বিবাদের মীমাংসা করিলেন। নিমাই অবোধ ও চঞ্চল বলিয়া, পিতাকে বুঝাইয়া তিনি অতিথি বিপ্রের কাছে গেলেন ও র্তাহাকে বহুতর মিনতি করিয়া পুনঃ রন্ধন করিতে অনুরোধ করিলেন। সত্যভানু বলিলেন “মনে ক্লেশ অনুভব করিও না, বিধাতা আজ অন্ন লিখেন নাই, তাই বার বার বাধা পড়িতেছে।” কিন্তু বিশ্বরূপ কিছুতেই প্রবুদ্ধ হইলেন না। তাহার মধুর বাক্যে অতিথিকে পুনঃ পাক করিতে হইল। এবার নিমাইকে গৃহে অবরুদ্ধ করিয়া রাখা হইল, জগন্নাথ মিশ্র লাঠি হাতে দ্বারে রহিলেন। এদিকে অতিথি ভক্তিভরে গোপালকে অন্ন নিবেদন করিতে বসিলেন। বড়ই আশ্চৰ্য্য কথা যে তৎকালে জগন্নাথ মিশ্র প্রভৃতির একটা মোহ উপস্থিত হইল, দৈবমোহে তাহারা যেন তন্দ্রাবিভূত হইয়া পড়িলেন, তদবসের নিমাই গিয়া সেই গৃহে উপস্থিত। এবার নিমাই কথা কহিলেন, বলিলেন—“অতিথি! তুমি আমাকে ডাকিয়া অন্ন নিবেদন কর, আমি থাকিতে পারি না, ভোগের অন্ন সেবন করি।” সত্যভানুর সমূদয় সন্দেহ দূরীভূত হইল, সত্যভানু সেই সবর্বপ্রথম বুঝিয়া লইলেন ঃ– “ব্রজেন্দ্র নন্দন যেই শচীসুত হৈল সেই।” ১৪৯. কবি বৃন্দাবন দাস শ্রীহট্টেকতকাল ছিলেন, অথবা কিনা,ঠিক জানা যায়না। তবে শ্রীচৈতনা ভাগবতে শ্রীহট্টে অঞ্চলে প্রচলিত “থইবাম”(থুইব),“নি”(কি?)ইত্যাদি শব্দগুলির প্রয়োগ আছে। ১৫০. আনন্দবাজার পত্রিকা—১৩১৮বং ১৬ই কাৰ্ত্তিক সংখ্যায় লিখিত "দ্বিজ বলরাম ও শ্রীপাঠ দোগাছিয়া"প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য।