পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৫৩ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত সহিত সেই কন্যার সম্বন্ধ স্থিরীকৃত হইয়াছিল। বিবাহের সময় উপস্থিত হইলে দেশের প্রথা মত কন্যাপক্ষ হইতে খোদাবন্দ সকালে “পান” প্রেরিত হইলে, তিনি কন্যাকে আশীৰ্ব্বাদপূৰ্ব্বক তদুদেশে বলিলেন—“যাও বিবি সালামত, আও বিবি আনামত।” খোদাবন্দ একজন সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন, তাহাকে প্রত্যাখ্যান করায় এ বিবাহ যে মঙ্গলপ্রসূ হইবে না, ইহা অনেকেই মনে করিয়াছিল। কথিত আছে কন্যা সহ গৃহে যাইতে পথেই পতির মৃত্যু হয়। বিধবা কন্যা শ্বশুরগুহে গেলেন বটে কিন্তু তথায় নিয়ত অমঙ্গল ঘটিতে লাগিল। এই বিধবা বধুই তাবৎ দুন্নিবিত্তের কারণ ভাবিয়া শ্বশুর তাহাকে পিত্রালয়ে পাঠাইয়া দিলেন। কন্যার আগমনে এ স্থানেও বিবিধ অমঙ্গল ঘটিতে লাগিল, স্বয়ং রামচন্দ্র এক আকস্মিক বেদনায় আক্রান্ত হইয়া মরণাপন্ন হইলেন এবং কন্যাটিও রোগে শোকে মৃত্যুদশাগ্রস্থা হইয়া উঠিল। বিপদের সময় হঠাৎ আদিত্যের মনে হইল যে এ সকল দুন্নিমিত্ত মহাপুরুষ খোদাবন্দকে অমান্য করা হেতু ঘটিতেছে। ইহা মনে হওয়া মাত্র তিনি শিবিকাযোগে তনয়াকে খোদাবন্দের সদনে পাঠাইয়া দিলেন। ইহাতে বাস্তবিকই সৰ্ব্বত্র সুমঙ্গল হইল। কন্যা ও পিতা প্রভৃতির রোগে দূরীভূত হইল। আদিত্যতনয়া মোসলমান ধৰ্ম্মে দীক্ষিত হইলে খোদাবন্দ তাহাকে বিবাহ করিলেন। “আও বিবি আনামত” একথার অর্থ তখন বুঝিতে পারা গেল। এই রমণী নিজ ব্যয়ে সিউরিকন্দির পালপাড়ায় এক পুষ্করিণী খনন কবাইয়াছিলেন । এই পুষ্করিণী “ঠাকুরাণীর পুকুর” নামে খ্যাত আছে। এই রমণীর তৃতীয় পুত্রই “মদালল ফওয়ায়েদ” নামক পারস্য গ্রন্থের রচয়িতা সৈয়দ শাহ ইস্রাইল মুলক-উল-উলামা ছিলেন। সৈয়দ শাহ ইলিয়াস কুতুব-উল-আওলিয়া শাহ ইলিয়াছের পিতার নাম সৈয়দ শাহ ইস্রাইল। ইলিয়াস বাল্যাবধি উদাসীন ছিলেন। একদা একটি দাসীর মুখে “দিন গিয়া” বাক্যটি শুনিয়া, সাংসারিকতায় বীতশ্রদ্ধ হইয়া পড়েন। দিন যাই। দুনিয়াতে আসিয়া কি করিলাম! ইহাই ভাবিয়া তিনি বাড়ী হইতে বাহির উত্তর দিকে গমন করেন ও খোয়াই নদীর দুই মাইল উত্তরে এক জঙ্গলে উপবিষ্ট হইয়া ঘোরতর তপস্যায় সময়াতিবাহিত করেন। তপস্যায় তিনি সিদ্ধ মনোরথ হন। কথিত আছে, এক অন্ধকার রজনীতে জ্যোৎস্নালোকের ন্যায় একটি স্নিগ্ধ কিরণ রেখা আকাশপ্রান্ত উজ্জ্বল করিয়া তাহার সাধনাশ্রমে প্রবেশ করিয়াছিল, তদবধি ঐ স্থান “চন্দ্রচুরি” নামে খ্যাত হয়। এবং তদবধি তিনি কুতুব-উল-আউলিয়া” এই শ্রেষ্ঠ উপাধিতে আখ্যাত হইতে থাকেন। ইলিয়াসের পূৰ্ব্বনিবাস খোয়াই তীরবর্তী ঘরগাও। তাহার বাটিকার স্থানটিকে অদ্যপি লোকে “পীরের বাড়ী” বলিয়া থাকে। তথায় তাহার ব্যবহৃত তিন খণ্ড পাথর আছে, উহার একটিতে তিনি উপবিষ্ট হইয়া “ওজু” করিতেন, ২য় টি “নমাজের” (উপাসনার) জন্য ব্যবহৃত হইত এবং ৩য় টিতে বসিয়া আহার করিতেন বলিযা লোকে বলিয়া থাকে। কুতুব সাহেব আরবি ও পারস্য ভাষায় সুবিজ্ঞ ছিলেন, সংস্কৃত ও বাঙ্গালা ভাষায়ও তাহার কিঞ্চিৎ জ্ঞান ছিল, তাহার কৃত আধ্যাত্মিক সঙ্গীতগুলিতে এই চারি ভাষারই শব্দের সমাবেশ দৃষ্ট 45 لا يجية ১৫২, কুতুব-উল-আউলিয়া সাহেবের একটি সঙ্গীত এস্থলে উদাহরণস্বরূপ দেওয়া গেলঃ–