পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৬৬ নামের মাহাত্ম্য ব্যাখ্যাত হইত, এখানে তাহার কিছুই ছিল না, সে সব যেন কিছুই জানেন না! শচী নববধু ও নিমাইকে লইয়া পুনৰ্ব্বার সুখী হইলেন। এই ভাবে কিছু কাল গত হইলে নিমাই পিতৃকৃত্য ব্যপদেশে গয়াতে গমন করেন। বিষ্ণুপদে পিণ্ডদান করিতে গিয়া তাহার যে আশ্চৰ্য্য ভাবোদয় হয়, তদর্শনে সঙ্গী সকল ব্যাকুল নেত্র হইতে অবিরলধারে অশ্রুপাত হইতে থাকে। এই সময় ঈশ্বরপুরী নামক সন্ন্যাসীর সহিত র্তাহার সাক্ষাৎ হয় ও তাহার নিকট হইতে দীক্ষামন্ত্র গ্রহণ করেন। কৃষ্ণানুরাগ র কৃষ্ণানুরাগ ক্ষণে বৃদ্ধি পাইতে লাগিল, দেখিয়া গয়াবাসী চমৎকৃত হইল, সঙ্গীগণ চিন্তিত হইয়া পড়িলেন। এমন ভাব তো মানুষে কেহ কখন দেখে নাই, মানুষের চক্ষে যে এত জল থাকিতে পারে, তাহাও কেহ কল্পনা করে নাই। নিমাই জ্ঞানশূন্য হইয়া কৃষ্ণদৰ্শন মানসে “কৃষ্ণ প্রাণধন কোথায়” বলিয়া বৃন্দাবনের মুখে ছুটিলেন। সঙ্গীগণ বহু চেষ্টা করিয়া তাহাকে কিছু স্থির করিলেন ও কোনরূপে গৃহে লইয়া আসিলেন। নবদ্বীপে যে কয়েকজন হরিভক্ত তখন ছিলেন, নিমাই পণ্ডিতের ভাব পরিবত্তনের বাৰ্ত্তা প্রাপ্তে তাহাদের চিত্ত পরম হর্ষ উপজাত হইল; সুখসম্পন্দিত চিত্তে তাহারা দেখিলেন যে নিমাই এক অদ্ভুত বস্তু। বিনয়ের আধার, নিজকে নিতান্তহীনজ্ঞান, দম্ভ নাই, অহঙ্কার নাই, আপনাকে গোপনে রাখিতেই ব্যস্ত। মেহের আধার,—এত যে বাহ্যজ্ঞানহারক কৃষ্ণপ্রেম, তবু মাকে দেখিলে সব ভুলে যান, মাতাই তাহার কাছে সাক্ষাৎ ধৰ্ম্মরূপিনী। ভগবৎভক্ত যেন প্রাণের সদৃশ। দয়ার আধার, + দীনহীন দেখিলে নিমাই গলিয়া যান—চক্ষের জল থামে না। ভক্তির ভাসে। প্রেমের আধার—— সৰ্ব্বদা ভগবৎপ্রেমে ভাসিতেছেন, ভিতর হইতে যেন ভাবরাশি বস্তুতঃ বযসে নবীন হইলেও নিমাইয়ের আচরণ সকলের শিক্ষনীয় ও আদর্শস্থানীয় হইল; দেখিতে দেখিতে চারিদিক হইতে ঈশ্বরানুরাগী ভক্তগণ আসিয়া নিমাইকে ঘেরিলেন। সঞ্জীবনী বংশীধবনী-শ্রবণে বহুদিনের শুষ্কতরু মঞ্জরিত হইল—নিজ্জীব বঙ্গদেশবাসী প্রাণ পাইল। সে সকল অমৃত বাৰ্ত্তা বিস্তারিতরূপে বর্ণনের আমাদের স্থান নাই—শক্তিও না।” এই কীৰ্ত্তনতরঙ্গে নবদ্বীপের জমিদার নন্দন ও শান্তিরক্ষক জগন্নাথ ও মাধব (জগাই মাধাই) বাধা দিতে গিয়া তৃণের ন্যায় ভাসিয়া গিয়াছিল ও তাহারই চরণলগ্ন হইয়া অকূলে কূল পাইয়াছিল; নবদ্বীপের যবন কাজি এই কীৰ্ত্তন-প্রবাহের রোধ করিতে অগ্রসর হন, কিন্তু প্রেমমহাবন্যার এক বিন্দু ১৬ পূৰ্ব্বে শ্ৰীবাস পণ্ডিতের কথা প্রসঙ্গে ইহা উল্লেখিত হইয়াছে। ১৭ মাই গয়া হইতে আসিয়া সশিষ্য পথে চলিতে চলিতে একদা শ্রীহট্টবাসী রতুগর্ভ আচার্যের টোল হইতে শ্রীমদ্ভাগবতের শ্লোক ব্যাখ্যা শুনিয়া কৃষ্ণ প্রেমে মুচিত হইয়া পড়েন। রত্নগর্ভের কথা “ইতিবৃত্তের”৩য় ভাঃ ১ম খঃ ৩য় অধ্যায়ে বলা গিয়াছে। শ্রীহট্টের শ্রীবাস পণ্ডিতের তাহার কীৰ্ত্তন লীলা চলিত, শ্রীহট্টের রত্নগর্ভের ব্যাখ্যা শ্রবণে প্রথম তদীয় প্রেম প্রকটন, শ্রীহট্টের আচার্য রত্ন গৃহে বাঙ্গালার প্রথম নাটকাভিনয় এবং শ্রীহট্টের মুরারি গুপ্তকর্তৃক সববাদ্যে এসব লিখিত হয়; তাহা ভাবিতে ভক্ত শ্রীহট্টবাসীর আনন্দ হয় নাকি?