পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৬০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৭২ দর্শন করিতে আসেন, কিন্তু তৎকালে তিনি তথা হইতে যাত্রা করিয়া নীলাচলে গমন করায় আর তিনি তদ্বীয় দর্শন প্রাপ্ত হন নাই।" শ্রী মহাপ্রভু আসাম হইতে নীলাচলেং পৌছিলে প্রথমেই বাসুদেব সাবর্বভৌম সহ তাহার মিলন হয়। সাৰ্ব্বভৌমের নামোল্লেখ পূবেৰ্ব করা গিয়াছে, উড়িষ্যার রাজা প্রতাপরুদ্র সাবর্বভৌমের বিদ্যাযশ মহিমা শ্রবণে মোহিত হইয়া বৃত্তিদানে তাহাকে নীলাচলে নিয়া স্থাপন করেন। শ্ৰীক্ষেত্রে সাবর্বভৌমের কাছে শত শত শিষ্য বেদান্ত অধ্যয়ন করিত, রাজা তাহাকে অত্যন্ত সমাদর করিতেন। নীলাচলে সাৰ্ব্বভৌম একদা জগন্নাথ দর্শনে গিয়াছেন, তিনি দেখিলেন যে স্বর্ণকান্তি একটি যুবক জগন্নাথ দর্শনে আসিলেন। তাহার একাগ্রতা অতুলনীয়, তাহার ঐকান্তিকতা অনন্য সাধারণ। যুবকের নেত্রে জলধারা বহিতেছে যে অশ্রুবারি অপরিমেয় অদ্ভূত; গণ্ড বাহিয়া, দেহ ভিজিয়া, ভূমি আর্দ্র করিয়া সেই জলধারা জলযন্ত্রের উচ্ছাসের ন্যায় ছুটিয়া চলিল—“চতুৰ্দ্দিকে ছুটে সব নয়নের জল।” সাৰ্ব্বভৌমের বিস্ময় সীমা অতিক্রম করিল, এদিকে যুবক মুচ্ছ প্রাপ্ত হইলেন। সাৰ্ব্বভৌম দেখিতে পাইলেন যে যুবকের দেহ ছিন্নকণ্ঠ কপোতের মত কম্পিত হইতেছে দেখিলেন—লোমাবলী যেন সজারু কণ্টকের ন্যায় দাঁড়াইয়া উঠিল, দেহ বিবর্ণ হইয়া গেল ও পরক্ষণে লোমাবলী মূলে চণাকাকৃতি স্থূল ব্রহণরাজি উখিত হইল। এসব ভক্তি-লক্ষণ মানবে কদাচিৎ লক্ষিত হয়, সাবর্বভৌম ইহা দেখিয়া বিস্মিত ও যুবকের প্রতি অনুরুক্ত হইয়া পড়িলেন এবং তাহাকে লোকদ্বারা বহন করাইয়া নিজ গৃহে লইয়া গেলেন। সাৰ্ব্বভৌমের গৃহে গিয়া সন্ন্যাসীর জ্ঞান সঞ্চার হইল, তাহার সঙ্গীগণও আসিয়া মিলিলেন। সাবর্বভৌম র্তাহাদের কাছে সন্ন্যাসীর পূবর্ব পরিচয় পাইয়া পরম তুষ্ট হইলেন এবং স্নেহবশতঃ র্তাহাকে বেদান্ত শুনাইতে লাগিলেন। শ্ৰীমহাপ্রভু সাতদিন কোনরূপ বাক্যব্যয়ব্যতীত বেদান্ত শুনিলেন। সাতদিনেরও পর সাবর্বভৌম বলিলেন—“চৈতন্য! তুমি সাতদিন বেদান্ত শুনিলে, ভাল কিছুই বলিলে না, তোমাকে ধীশক্তি সম্পন্ন দেখায়, কিন্তু বুঝিতেছ কি না, তাহার লক্ষণ দেখিতেছি না!” সাৰ্ব্বভৌমের প্রশ্নে শ্রীগৌরাঙ্গদেব বললেন “ব্যাসসূত্রের অর্থ অতি স্পষ্ট কিন্তু শঙ্করের ভাষ্যরূপ জলদ-জালে তাহা আচ্ছাদিত হওয়াতে আপনার অপূৰ্ব্ব ব্যাখ্যাটি তাৎপৰ্য্য হৃদয়ঙ্গম হইতেছে না।” পণ্ডিত কেশরী সাবর্বভৌমের ব্যাখ্যায় দোষ প্রদর্শন। সন্ন্যাসী পাগল নাকি? তখন সাৰ্ব্বভৌম এক ধমকানি দিয়া তাহার ব্যাখ্যার দোষ দেখাইয়া দিতে শ্রীচৈতন্যকে বলিলেন। তখন যুবক অতুল কণ্ঠহার কন্দলিক শরণ লগাই ভাগবত পড়াইলা।পাচে বীণা হাতে ধরি কৃষ্ণন গাইনারদর শ্রেষ্ঠ(চেষ্ট) দেখাইলা। সেই বেলা দামোদরে মাধব দেখিতে মনিকুটে যাই তাঙ্ক দেখি দুৰ্ল্লভ লাভ ভৈলা + + +তাঙ্ক তত্ত্বজ্ঞান দিয়া উডেষাক (উড়িষ্যার) গেলা।” সৎসম্প্রদায় কথা ৭ম অঃ। ২৪. পরে তিনি শ্রীচৈতন্য দর্শনে নীলাচল গমন করিয়াছিলেন। ২৫. শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতাদি প্রসিদ্ধ ও পরিজাত গ্রন্থে শান্তিপুর হইতেই নীলাচল গমন কথা লিখিত। আবার সুবল মঙ্গলাদিতে অম্বিকা হইতে যাওয়ার কথা আছে। হইতে পারে এসব হইতে পুনঃ শান্তিপুরে গিয়াই নালীচলে গিয়াছিলেন।