পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৬০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৭৫ উপসংহার 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত করিয়া তৎসহ মিলিত হন। ইহারাই শ্ৰীগৌরাঙ্গের মতানুযায়ী শাস্ত্র প্রণয়ন করেন ও বৃন্দাবনে বিলুপ্ত তীর্থস্থল উদ্ধার ক্রমে গোবিন্দাদি বিগ্রহ প্রকাশ করেন। এবাব শ্ৰীমহাপ্রভুর বৃন্দাবন গমনে ব্যাঘাত, ঘটিলেও, নীলাচল আসিয়া কিছুকাল মধ্যেই তিনি বনপথে তথায় গমন করেন, গমনকালে বন্যপশু সমূহ তাহার কাছে আসিতে, এবং হিংসাবৃত্তি ভুলিয়া তাহারা শ্ৰীমহাপ্রভুকে ঘেরিয়া দাড়াইত। শ্ৰীমহাপ্রভুর ভাব-সংক্রমিত হইয়া পশুপক্ষীরাও নৃত্য করিয়া উঠিত। বৃন্দাবন হইতে আসিতে তিনি কাশীতে প্রকাশানন্দ সরস্বতী নামক এক প্রধান মায়াবাদী সন্ন্যাসীকে স্বমতে আনয়ন করেন। ইনি তৎকালে ভারতবর্ষের সৰ্ব্বপ্রধান বিদ্যাগবিবত সন্ন্যাসী ছিলেন, সাবর্বভৌমের ন্যায় তিনিও শেষে প্রবেধানন্দ সরস্বতী নামে খ্যাত হন। ইহার প্রণীত শ্রীচৈতন্যচন্দ্রামৃত সংস্কৃত গ্রন্থ ভাণ্ডারে এক অপূৰ্ব্ব রত্ন, তদ্ব্যতীত “শ্রীবৃন্দাবনশতক’ প্রভৃতি ইহার আরো গ্রন্থ আছে। শ্ৰীমহাপ্রভুর নীলাচল বাসের শেষ দ্বাদশ বৎসর তিনি কৃষ্ণপ্রেমে এরূপ বিহুল থাকিতেন যে অতি অল্পকালই তিনি ভক্তবর্গের সহিত মিলিতে পারিতেন। ভাগবত পুরাণে গোপীদের যে ভাবের কথা লিখিত হইযাছে, বঙ্গীয় প্রাচীন কবি চণ্ডীদাস রাধিকার যেরূপ ভাবের বর্ণনা করিয়াছেন, শ্রীচৈতন্যদেব তাহাই প্রত্যক্ষ দেখাইয়াছিলেন। রাধা, যে কবিকল্পিত নহেন শ্রীচৈতন্যের ভাব দেখিয়া লোকে তাহা বুঝিতে পারেন। তখন আর তাহার ভাবের সহিত মিলিবার ইচ্ছা বা শক্তি থাকিল না। তবে যে মিলিতেন—সে অভ্যাস বসে। তখন স্বরূপ আর রামানন্দ—যিনি সংস্কৃত জগন্নাথ বল্লভ নাটক রচনা কবিয়াছেন—--সৰ্ব্বদা তাহারা কাছে থাকিতেন, তাহাকে রক্ষা করিতেন। স্বরূপ তাহার ভাবের অনুরূপ গান গাইতেন, রামানন্দ কৃষ্ণকথা বলিয়া ধৈর্য্য ধরাইতেন। তিনি যে শ্রীচৈতন্য, ইহারা যে স্বরূপ ও রামরায়, তাহার ইত্যাকার জ্ঞান থাকিত না। ভাবিতেন—তিনি রাধা। শ্রীকৃষ্ণ তাহাকে ফেলিয়া চলিয়া গিয়াছেন। তাহার কাছে ললিতাও বিশাখা সখী রহিয়াছেন। এই যে শ্রীচৈতন্যের ঈশ্বরানুরাগ, ইহাতে প্রার্থনা নাই,—মুক্তির কথা নাই; ইহা ভক্তির চরম দশা ও চরম আদর্শ। ইহার উপরে শিখিবার কিছু না বলিবার কিছু নাই। এক শ্রীচৈতন্যই ইহার উদাহরণ—দ্বিতীয় পৃথিবীতে নাই। এইরূপে প্রভুর যখন অবস্থা, তাহার সাড়া শব্দ না পাইয়া একরাত্রিতে ভক্তগণ কপাট খুলিয়া দেখেন যে তিনি গৃহে নাই। অমনি তাহারা মশাল জুলিয়া সন্ধানে বাহির হইলেন ও খুঁজিয়া সিংহদ্বারেব পাশ্বে চেতনাবিহীনাবস্থায তাহাকে প্রাপ্ত হইলেন। ভক্তগণের শুশ্রুষার বহুক্ষণে প্রভুর জ্ঞান সঞ্চার হইল। শ্রীচৈতন্য আর একদিন চটকপৰ্ব্বত দেখিয়া গোবৰ্দ্ধন ভ্ৰমে বাহ্যবিরহিত হইয়া বায়ুবেগে ধাবিত হইলেন, কিছুদূরে গিয়া গতিস্তম্ভ হইল এবং লোমকূপ হইতে শোণিত প্রবাহ ছুটিল। ভক্তগণের শুশ্রুষায পরে তিনি চেতনাপ্রাপ্ত হইলেন। এইরূপ অবিরতই ঘটিতে লাগিল। একরাত্রে প্রভু সমুদ্রদর্শনপূৰ্ব্বক যমুনাভ্রম হওয়াতে “হা কৃষ্ণ” বলিয়া তাহাতে বাপ যেন, খুজিতে খুজিতে ভক্তগণ সমুদ্রের তীরে উন্মত্তপ্রায় এক জালিককে দেখিতে পাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন। মৎস্যজীবী বলিল যে সে প্রভুর কথা বলিতে পারিবে না; সে একটা ভূত স্পর্শ করিয়াছে, তাহার মুখে গো গো ধবনি, হস্তপদ অসম্ভব দীর্ঘ। ভক্তগণ বুঝিলেন--ভাবের বিকারে শ্রীচৈতন্যের