পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত ৪২ উপেন্দ্র মিশ্রের সাত পুত্র মধ্যে তিন জনের বংশধর-পরিচয় পাওয়া যায়। অপরেরা বিবাহ করিয়াছিলেন কিনা, অথবা বিবাহ করিয়া থাকিলে কেনই বা তাহাদের বংশ নাই জানা যায় না। সৰ্বজ্যৈষ্ঠ কংসারির পুত্র প্রদ্যুন্ম মিশ্র সন্ন্যাস আশ্রয় করিয়াছিলেন বলিয়া তাহার বংশ বিলোপ ঘটিয়াছে। পরমানন্দের বংশীয়গণই ঢাকাদক্ষিণে মিশ্রবংশ। পরামানন্দ মিশ্রের স্ত্রীর নাম সুশীলাদেবী, তাহার গর্ভে রামরত্ব মিশ্রের জন্ম হয়, এই রামরত্ব হইতেই ঢাকাদক্ষিণের মিশ্রবংশের বিস্তুতি ঘটে। ঢাকা দক্ষিণের শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শ্ৰীবিগ্রহই মিশ্র বংশের প্রধান অবলম্বন ও উপজীব্য। অতএব সৰ্ব্বাগ্রে তাহাই বর্ণন করিতেছি। শ্ৰীগৌরাঙ্গ শ্রীহট্টে শ্ৰীগৌরাঙ্গের পিতামহী দীর্ঘকাল জীবিত ছিলেন,তাহার পৌত্রের পণ্ডিত্য যশে চতুৰ্দ্দিক প্রপূরিত, তৎকালে এবং তাহার পরেও বৃদ্ধা জীবিত ছিলেন। শ্ৰীগৌরাঙ্গ পিতৃদেশ দর্শন উদ্দেশ্যে যদিও একবার পূৰ্ব্ববঙ্গ ভ্রমণে বহির্গত হইয়াছিলেন, কিন্তু তৎকালে তিনি পিতামহী-গৃহ-ঢাকাদক্ষিণ পর্যন্ত যাইতে পারেন নাই, কারণবশতঃ পথ হইতেই ফিরিয়া গিয়াছিলেন।” শ্ৰীগৌরাঙ্গ পিতামহী-গৃহে না গিয়া নবদ্বীপে ফিরিয়া গেলেও বৃদ্ধার ধ্রুব ধারণা যে র্তাহার বধু অবশ্যই তাহাকে পাঠাইবেন, তাই গৌরাঙ্গের আগমন অপেক্ষায় বৃদ্ধার প্রাণ বাহির হইতেছে না। ১৪৮৫ খৃষ্টাব্দে শ্রীগৌরাঙ্গের জন্ম হয়;তাহার বয়ঃক্রম চব্বিশ বৎসর পূর্ণ হইতেই তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। সন্ন্যাস গ্রহণের পরে শান্তিপুবে তাহার আগমন ঘটে। এই সময় ভক্তবর্গ শচীদেবীকে শান্তিপুর লইয়া গিয়াছিলেন। শচী হারানিধি নিমাইকে পাইয়া; মনের সাধে কয়েক দিন স্বয়ং পাক করিয়া আহার করাইয়া ছিলেন। ইত্যবসরে মাতৃভক্তশিরোমণি গৌরহরি বলিয়াছিলেন, হে কৃষ্ণপ্রেমে বিহুল হইয়া সন্ন্যাস গ্রহণ করায়, জননীর মনে তিনি বড়ই দুঃখ দিয়াছেন, এখন জননীর আজ্ঞানুসারেই তিনি যে কোন স্থানে অবস্থিতি করিবেন, তদনুসারে শচীদেবী তাহাকে শ্ৰীক্ষেত্রে থাকিবার অনুমতি দেন; এবং তিনি চলিয়া যাইতে প্রস্তুত হন। এই সময় শচীদেবী তাহাকে সংগোপনে আর একটি কথা বলিয়া ছিলেন; প্রদ্যুম্ন মিশ্রের গ্রন্থ হইতে তাহা জানিতে পারা যায়। শচীদেবীর মনে হইয়াছিল—“যে নিমাইকে মুহূৰ্ত্ত-তরে নয়নের অন্তর করিতে পারি নাই, আজ তাহাকে শত যোজন দূরে বাস করিতে বলিলাম। শাশুড়ী শোভাদেবীর নাতি দেখিতে কত সাধ, আমাকে বলিয়া দিলেও সে কথা নিমাইকে কহি নাহ—সুদূর শ্রীহট্টে পাঠাইতে ইচ্ছা করি নাই;কিন্তু তাহাকে রাখিতে পারিলাম না। আমার এ দুর্ভাগ্য কি শাশুড়ীর আদেশাবজ্ঞার ফল? যাক নিমাই ১৯ মিশ্র বংশের পরিশুদ্ধ বংশতালিকা খ(১) পবিশিষ্টে দ্রষ্টব্য। পূৰ্ব্বে আমাদিগের দ্বারা বিশ্বকোষে ও দাসী পত্রিকা প্রভূতিতে যে বংশ তালিকা প্রদত্ত ও প্রকাশিত হয়, অধুনা প্রাপ্ত বংশ তালিকাদ্বয় তৎসহ মিলাইয়া খ(১) পরিশিষ্টের বংশ উালিকা প্রস্তুত করা হইয়াছে। ২০. এই সময় শ্ৰীগৌবাঙ্গ বুরুঙ্গা পৰ্যন্ত আগমন করিয়াছিলেন, সে প্রসঙ্গ এস্থলে বর্ণন করা অনাবশ্যক বলিয়া পরিত্যক্ত হইল, শ্ৰীমহাপ্রভুর চরিত্র উপলক্ষে উপসংহারাধ্যাযে তাহা বিবর্ণিত হইবে। ২১. এসব প্রসঙ্গ পূজ্যপাদ স্বগীয় শিশিরকুমার ঘোষ কৃত শ্ৰীঅমিয় নিমাই চবিত গ্রন্থে মধুরভাবে বর্ণিত হইয়াছে। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৪র্থ ভাগে উপসংহারাধ্যায় দ্রষ্টব্য।