পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৬৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১১ পরিশিষ্ট 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত অন্যান্য কথা এই সকল বংশ ব্যতীত কাছাড়ে অনেক সন্ত্রান্ত বংশীয় হিন্দু অধিবাসী আছেন, এবং অনেক সম্মানিত মোসলমান বংশীয়ও আছেন। বড়ই দুঃখের বিষয়, তাহদের কোনও বিবরণী দিতে পারিলাম না। আরও দুটি বংশের যৎকিঞ্চিৎ কথা আমরা ঐতিহাসিক প্রবন্ধাদি হইতে সংগ্ৰহ করিয়া এস্থানে সন্নিবেশিত করিতেছি ১ম বিক্রমপুরের বড় মজুমদার বংশ; ২য় বড়খলার লঙ্কার বংশ। যখন হেড়ম্বরাজ তাম্রধবজ মাইবং ছাড়িয়া কাছাড়ের সমতল ভূমিতে আগমন করেন, ঐ রাজ্যে তখন সৰ্ব্বপ্রথম বাঙ্গালীর উপনিবেশ হয়। বিক্রম রায় নামক এক ব্যক্তি কাছাড়ে উপনিবিষ্ট হইযা আপন নামে বিক্রমপুর পরগণার সৃষ্টি করেন। কাছাড়ে উপনিবিষ্ট বাঙ্গালী ভদ্রলোকের মধ্যে ইনিই সৰ্ব্বপ্রথম পথ প্রদর্শক। ইহারই বংশধরগণ বিক্রমপুরের বড় মজুমদার উপাধিতে খ্যাত হইয়া কাছাড়ের অধিবাসী ভদ্রলোকগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করিতেন। বড়ই দুঃখের বিষয়, এই বংশ নিৰ্ম্মল হইয়া গিয়াছে। র্তাহাদের কীৰ্ত্তিচিহ্ন আজিও বৰ্ত্তমান আছে। লঙ্কার-বংশের প্রবৰ্ত্তক চাদ লঙ্করের কথা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশের উপসংহারে তৎপুত্র মণিরাম কর্তৃক লব্ধ, মহারাজ কীৰ্ত্তিচন্দ্র প্রদত্ত সনন্দে আছে। চাদ লঙ্করের বংশধরগণ এখনও বড়খলায় প্রতিপত্তি সহকারে বাস করিতেছেন। তাহার অধস্তন সপ্তম পুরুষ রায়সাহেব শ্ৰীযুত বিপিনচন্দ্র লঙ্কর মহাশয় রায় হরিচরণ শৰ্ম্ম বাহাদুরের পর কাছাড়ের অধিবাসীবগের মধ্যে সবর্ব প্রথম গবর্ণমেন্ট হইতে খেতাব প্রাপ্ত হইলেন। ইহার বিদ্যোৎসাহিতার বিলক্ষণ পরিচয় পাওয়া গিয়াছে। হেড়ম্ব রাজ্যের দণ্ডবিধি নাম দিয়া তিনি কাছাড়ের শেষ ভূপতি গোবিন্দচন্দ্রের আইন (যাহা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ–উপসংহারের টিকায় মুদ্রিত হইয়াছে) পুস্তকাকারে প্রকাশিত করিয়াছেন। তদুপলক্ষে অধ্যাপক শ্রীযুক্ত পদ্মনাথ বিদ্যাবিনোদ এম এ মহোদয় কত্ত্বক হেড়ম্বের রাজবংশের একটি সংক্ষিপ্ত অথচ মূল্যবান সচিত্র ভূমিকা লিখাইয়াছেন, তাহাতে কাছাড়ের ইতিহাসের উপর প্রোজ্জ্বল রশ্মিপাত হইয়াছে। বংশ বৃত্তান্তে অনুল্লিখিত দু একজন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম অদ্যাবধি শ্রুত হইয় থাকে। তন্মধ্যে শিবরাম জ্যোতিষী, গুলুমিয়া এবং কবি ভুবনেশ্বর বাচস্পতির নাম এস্থলে উল্লেখ যোগ্য। কথাই শুনা যায়; তন্মধ্যে গোবিন্দচন্দ্র মহারাজের অস্ত্রাঘাতে মৃত্যু বিষয়ক তদীয় ভবিষ্যদ্বাণীর সফলতা ইতিহাসে প্রমাণিত হইয়াছে। গুলুমিয়া কাছাড় রাজ্যে উপনিবিষ্ট মোসলমানগণের মধ্যে এক অতি প্রবল পরাক্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন,—“নবাব” এই উপাধিতে র্তাহার প্রতিপত্তি প্রকটিত হইয়াছিল। মহারাজ গোবিন্দচন্দ্রের বিষদৃষ্টিতে পড়িয়া অবশেষে ইহাকে কারারুদ্ধ হইয়া অনশনে প্রাণত্যাগ করিতে হয়। নামক গ্রন্থ লিখিয়া চিরস্মরণী হইয়া গিয়াছেন। এই গ্রন্থের রচনা ১৬৫২ শকে (১৭৩০ খৃঃ) শেষ হয়।