পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৬৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২৫ পরিশিষ্ট 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত নদনদী, প্লাবিত, শ্রীহট্ট তখনও আৰ্য-কিরণ-গরিমায় উদ্ভাসিত। অচ্যুতচরণের সুললিত ভাষায় সেই হোমশিখা, সেই যজ্ঞকুণ্ড, সেই গিরিপ্রাকারবেষ্টিত, “সাগর” রাজি-পরিশোভিত রণতরী ও বাণিজ্যপোত সমাকীর্ণ বরবক্র ও তপোবন-সমাচ্ছন্নতটা মনুনদের জলরাশি সেবিত, মহাপীঠের পূণ্যনিকেতন শ্রীহট্টের পরম রমণীর চিত্ৰ যেন স্বতঃই নয়নপথে ভাসিয়া উঠে। শ্রীহট্টবাসী এই পুণ্যগাথা পরিপূর্ণ ইতিবৃত্ত পাঠ করুন, হৃদয়ঙ্গম হইবে, আপনারা কোথায় জন্মিয়াছেন। আধুনিক যুগে শ্রীহট্ট যতই পতিত হৌক না কেন, আপনারা বুঝিবেন যে বাঙ্গালী যদি ভারতের গৌরব মুকুট হয়, তবে আপনাদের পূৰ্ব্বপুরুষেরা সেই মুকুটের গৌরবোজ্জ্বল মণি ছিলেন। আপনাদের পিতৃভূমি, প্রেমের অবতার শ্রীচৈতন্যের জন্মভূমি, আপনাদের দেশ বাংলার স্বাধীন হিন্দু সাম্রাজ্যের স্থাপনকৰ্ত্তা রাজাগণের কূটরাজনীতিদজ্ঞ মন্ত্রী নরসিংহের দেশ, আপনাদের এই জলবায়ুতে এমন পণ্ডিত জন্মিয়াছিলেন, যাহার গৌরবগাঁথা কীৰ্ত্তন করিতে কবি গাহিয়াছেন ঃ— পক্ষধরের পক্ষ পাতন করি। বাঙ্গালীর ছেলে ফিরে এল দেশে যশের মুকুট পরি।” জানিবেন, যিনি মেঘনানদীর পূৰ্ব্বাঞ্চলে মোগল সাম্রাজ্যের ভিত্তিপাত করিয়াছিলেন, সেই বীরের পদভরে এই শহর একদিন কম্পিত হইত, আজ র্তাহারই পুত্রপৌত্রগণ দুৰ্গতির জীবন যাপন করিতেছেন। জ্ঞান, প্রেম, ভক্তি, কাব্য, ন্যায় ও ললিত কলার পরিচর্য্যায়, ধৰ্ম্মক্ষেত্রে ও সমরক্ষেত্রে এক দিক এই অধুনাপতিত শ্রীহট্টের কৃতিসন্তান পূৰ্ব্বভারতের আর্যজাতির বিজয় গৌরব প্রতিষ্ঠা কবিয়াছিলেন। শ্রীহট্টবাসি! আপনারা বিস্মৃতির জলে আপনাদের পূৰ্ব্বপুরুষদের গৌরবকীৰ্ত্তি ভাসাইয়া দিয়া নিজেদের অকৰ্ম্মণ্য বলিয়া জগতের সমক্ষে ঘৃণিতের জীবনযাপন করিতেছিলেন, আজ এই ইতিহাস পাঠ করুন, জানিতে পরিবেন, ভারতবর্ষে আর্য্যগৌরব প্রতিষ্ঠাকল্পে যে মস্তিষ্ক ও শোণিতপাত হইয়াছিল, তাহার ক্ষীণ কণিকা এখনও ঐ তুচ্ছ দেহের ভিতরে বিষাদের গান গাহিয়া প্রবাহিত হইতেছে। আর বিশেষ বলিতে চাহিনা, যদি অতীতের উপসনায় কখনও আপনি গৌরব অনুভব করেন, তবে একখণ্ড ইতিবৃত্ত পাঠ করিয়া তাহার স্বার্থকতা অনুভব করুন। পুস্তকে প্রকাশিত সকল কথাই যে সম্পূর্ণ সত্য হইবে, এমন কথা আমরা বলি না; তবে পুস্তকে যদি স্থনে স্থানে সামান্য ভুল হয় তবে এই ক্ৰট গ্রন্থকারের নহে, কারণ গ্রন্থকার সকলের নিকট হইতে তথ্য সংগ্ৰহ করিয়া ইতিবৃত্ত রচনা করিয়াছেন, এ স্থলে দেশের লোকদের কৰ্ত্তব্য যে তাহা প্রদর্শন করিয়অ দিয়া ইতিবৃত্তখানি নির্ভুল করেন। তবে গ্রন্থাকার জ্ঞাতসারে যে ভুল ভ্রান্তির প্রশ্রয় দেন নাই, ইহাই তাহরা বৈষ্ণবোচিত সরলতার পরিচয় পুস্তকপাঠে দেখিবেন যে তিনি স্থানে স্থানে বিভিন্ন পরস্পর-বিরোধী মত সকলের উল্লেখ করিয়াছেন। ইহাতে ঐতিহাসিকের সত্যানুসন্ধান স্পৃহার জয় হইয়াছে। অচ্যুতবাবুর ইতিহাস শ্রীহট্টের প্রথম প্রথম ইতিহাস, যাহারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রথম ইতিহাস দেখিয়াছেন তাহারাই বলিবেন যে এটা একটা দেশের প্রাণ ইতিহাস এই গ্রন্থ অপেক্ষা অধিকতর নির্ভুল বা সৌষ্টবসম্পন্ন হইতে পারে না। এমন নির্ভুল ইতিহাস লিখিলে লেখককে দেবতা বলিতে হইত, তবে বৈষ্ণব গ্রন্থকার কখন নিজকে দেবতা মনে করেন না, তিনি