পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৭ চতুর্থ অধ্যায় বুরুঙ্গা, রেঙ্গ ঢাকাদক্ষিণের ব্রাহ্মণ বংশ 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত সীমারূপে গণ্য হইয় গেল।অরঙ্গপুরও বেগমপুরে কেবল পূৰ্ব্বেই যে এরূপছিল,তাহানহোপরে বাজার সম্বন্ধেও এইরূপ কত মারামারির উদাহরণ আছে। মহেশ্বরাদি সাধক বেগমপুর ব্রাহ্মণের স্থান, ব্রাহ্মণগণ ওসব বিষয়ে তত লক্ষ্য রাখেন না, এইজন্যই মোসলমানগণ ছলে বলে কাৰ্য্যসিদ্ধির সুবিধা পায়; তথাপি সেই বংশে যখনই কেহ ঐদিকে মন দিয়াছেন, তখনই তিনি নিজ অধিকার অব্যাহত রাখিতে সমর্থ হইয়াছেন। এই বংশে মহেশ্বর ও র্তাহার ভ্রাতা প্রকৃতই বীরপুরুষ ছিলেন, মহাকায় মহেশ্বর জীবিত কালে অরঙ্গপুর, সদাশিবের অধিকারে বিস্তুতি লাভ করিতে পারে নাই। গণিতে ইহার অদ্ভুত শক্তি ছিল, অন্যে কাগজে কলমে দুইখণ্ডে যে অঙ্ক কসিতে অসমর্থ হইত, ইনি দুই মিনিটে মুখে মুখে তাহা বলিয়া দিতে পারিতেন;দেখিয়া লোক অবাক হইত। এই সাহসী ও পর উপকারী, সুদীর্ঘ ও মহাকায় পুরুষের মৃত্যুও বড় আশ্চর্য রকমে হইয়াছিল। তাহার অসুখের সময় সহধৰ্ম্মিণী একদিন প্রাঙ্গণে স্নান করাইয়া দিয়াছেন, স্নান বস্ত্র পরিবর্তন পূৰ্ব্বক তিনি রৌদ্রে বসিয়া “সন্ধ্যা’ করিতে লাগিলেন ও “গায়ত্ৰী” জপ করিতে করিতে ভূমিতে ঢলিয়া পড়িলেন। তদৃষ্টে পরিজনগণ দৌড়িয়া গিয়া দেখিল যে প্রাণ বায়ু বহির্গত হইয়া গিয়াছে! মহেশ্বরের মৃত্যু সেই দিনকার ঘটনা। কেবল মহেশ্বরের বলিয়া নহে,—“সদাশিবের আজ্ঞা আছে, এবংশ সাধ বজ্জিত হইবে না।” বাস্তবিক একথার সফলতা এযাবৎ প্রত্যক্ষীভূত হইতেছে একজন সাধক এবংশে থাকেনই। উদাহরণ স্থলে “রামকান্ত মুনিগোসাই” এবং শ্যামাচরণ চৌধুবী ও স্বগীয় চন্দ্রকান্ত ব্রহ্মচারী প্রভৃতির নাম করা যাইতে পারে। ইহাবা তিনজনই চিরকুমার ছিলেন। বৰ্ত্তমানের স্বনাম-ধন্য শ্রীযুক্ত শরচ্চন্দ্র চৌধুরী মহাশয় বংশের ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করিতেছেন। শ্যামাচরণ ফবিদপুরে অবস্থিতি করিতেন, তাহার সত্য-নিষ্ঠা, সদাচার এক সাত্ত্বিক অনুষ্ঠান সেই বিদেশেও তিনি সম্পূজিত হইতেন। তরফ-বড়কাশি গ্রাম হইতে নন্দনপুর হাটে যাইবার পথে “মুনিগোসাইর গাছ” নামে পবিচিত এক প্রকাণ্ড বটবৃক্ষ আছে। এই বট মুনিগোসইর রোপিত:ইহারই পার্শ্বে তিনি দিবারাত্রি জপে অতিবাহিতি করিতেন এবং তাহাতে “মুনিগোসাই” বলিয়া খ্যাত হন। চন্দ্রনাথ একদা নিজ ভ্রাতাকে রক্ষা করিতে গিয়া একটা মিথ্যা কথা বলিয়াছিলেন, তজ্জন্য তিনি অনুতাপানলে দগ্ধ হইতে থাকেন, অন্ন জল ত্যাগ করেন, ও শয্যা আশ্রয় করিতে হয়:ইহাতে অচিরেই তিনি প্রাণত্যাগ করেন। একটা মিথ্যা কথা তাহার কাছে কঠোর বজ্রসদৃশ অথবা পৰ্ব্বত পাতের ন্যায় বোধ হইয়াছিল, ইহা তাহার নিৰ্ম্মল অন্তঃকরণকে একবারে নিম্পিষ্ট করিয়া ফেলিয়াছিল। এ বংশ শক্তিমন্ত্রের উপাসক; একজন মাত্র নাম চণ্ডী চরণ, জ্যেষ্ঠের সহ বিরোধক্রমে ভেক গ্রহণে বৈরাগী হইয়া খাড় কোণা গ্রামে আখড়া করিয়াছিলেন।” ৪. আদিদেব ইহতে বৰ্ত্তমান পয্যন্ত ২৪ পুরুষ চলিতেছে, সুতরাং আদিদেবেব আগমন কাল আট শত বৎসব পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী বলিতে আপত্তি নাই। শ্রীযুক্ত শবচ্চন্দ্র চৌধুবী মহাশযের মতে আদিদেবের আগমন কাল আবও পুৰ্ব্ববৰ্ত্তী, তিনি বলেন—"তিনপুরুষ শতাব্দীব গণনা আধুনিক প্রণালী। পূৰ্ব্বকালে লোক এত অল্পায়ু ছিল না।”