পাতা:ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা - সঞ্জীব দেবলস্কর (২০২৩).pdf/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৬
ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা

হাতে ঘুরছে। সিলেট-কাছাড়ের অবস্থা নাকি গত শতকে ফ্রান্সের আলজাঁস লরেইন অঞ্চলের মতো। ফরাসি কথাকার আলফা এঁদের ‘দ্যা লাস্ট লেশন’ গল্পটি তিনি সবাইকে শুনিয়ে দিলেন। আমাদের সিলেট-কাছাড় তো একেবারে ফ্রান্সের বর্ডার সংলগ্ন দুটো জেলার মতোই। আসামের সঙ্গে থাকলে বাঙালির ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার, ঘুরে ফিরে এ কথাটিই আসছে। এটা বিপিনচন্দ্রও অনুভব করেছেন। আসাম উপত্যকায় বাঙালি কেরানিদের সংখ্যাধিক্য দেখে ওদিকে অনেকেরই গাত্রদাহ হয়। আরও বেশি স্কুল কলেজ তৈরি না হলে অসমিয়াদের মধ্যে কেরানি, শিক্ষকশ্রেণি বেরিয়ে আসতে পারবে না। তাঁকে এটা আর্ল সাহেব বুঝিয়েছেন এবং তাই এদিকেই তাঁর মনোযোগ। এ না হলে ভবিষ্যতে Assam for Assamese আওয়াজ উঠবে, এটা সেদিনই আর্চডেইল আর্ল আঁচ করতে পেরেছিলেন।

 অসমিয়া-বাঙালি দ্বন্দ্বের কথা উঠলে এল ফুলার সাহেবের কথা। এর বিরুদ্ধে একদিন চারণকবি মুকুন্দ দাস গেয়েছিলেন, ‘ফুলার, আর কি দেখা ভয়? দেহ তোমার অধীন বটে, মন তো তোমার নয়।’ কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আমাদের অনেকের মনও ওদের অধীনে চলে যাচ্ছে। এই ফুলার ব্যাটাই ত্রিশ বছর আগে (১৯০০, ৭ জুন) ওঁদের মনের ভেতর বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছে, The day may yet be distant for unfurling the banner Assam for Assamese’। ব্রজেনবাবু ব্যারিহোয়াইট মেডিক্যাল স্কুলের উদ্বোধনী ভাষণে ফুলার সাহেব কী বলেছিলেন, ডায়েরি খুলে তা পড়ে শোনালেন,

 —একটা জাতিকে আরেকটি জাতির বিরুদ্ধে কী ভাবে লাগিয়ে দিতে হয় এরা খুব ভালো জানেন। আমরা অসমিয়া-বাঙালি উভয়েই মূলত বুরবক। আর কী বলব, মহাত্মা ব্যারিহোয়াইটও এ দিকে কম যান না।